• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

লু কেন আবার ঢাকায়?

মোস্তফা কামাল

প্রকাশিত: ১৫:৫৫, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ফন্ট সাইজ
লু কেন আবার ঢাকায়?

নির্বাচনের আগে মার্কিনিদের সমানে ঢাকায় আসি-যাই চলেছে বাংলাদেশে। কারো সাথে উপরে উপরে, কারো সাথে তলে তলে চলেছে তাদের কূটনীতি। এই কূটনীতি আর রাজনীতির আগামাথা বুঝতে বুঝতে ঝানু কূটনীতিকরা কাহিল হয়ে গেছেন। কখনো কখনো বুঝতেও পারেননি। রাষ্ট্রদূত পিটার হাস থেকে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু- কার কী গতিবিধি তা মালুম করতে করতে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন হয়ে যায়। শেখ হাসিনার চতুর্থ দফার সরকারকে মার্কিনিরা কেবল সমর্থন নয়, আওয়ামী লীগে যোগদানও করে ফেলেছে বলে একটি ক্যাম্পেইন চলে সরকারি মহল থেকে। এর নমুনাও দেখাতে থাকে তারা। এই ভাবনমুনার মাঝেই পতন। শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পলায়ন। এখন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মাত্র ৩৮ দিনের মাথায় উচ্চপর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদল আবার ঢাকায়।

কী এর ফের? মাজেজাই বা কী? যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র দিল্লি হয়ে ঢাকায় দু-দিনের সফর নিয়ে চারদিকে নানা কথা চাউর। মার্কিন প্রতিনিধিদলটির এবারের নেতৃত্বে দেশটির রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান। সঙ্গে থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের জ্যেষ্ঠ পরিচালক (সিনিয়র ডিরেক্টর) লিন্ডসে ফোর্ডও। কিন্তু নামে নামে, মুখে-মুখে মানুষ বেশি চেনে লু’কে। চার মাসের মাথায় এটি ঢাকায় তার দ্বিতীয় সফর। সবশেষ এসেছিলেন যখন দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তোড়জোর। ওই সফরে ডোনাল্ড লু সবগুলো রাজনৈতিক দলকে সংলাপে বসে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনার পরামর্শ দিয়ে যান। তার পরামর্শে কাজ হয়নি। সংলাপে বসেনি বড় দুই দল আওয়ামী লীগ-বিএনপি। তখনকার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তো বিএনপিকে কোনো দলই মনে করেনি। বরং বলেছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিএনপি নামে কোনো দলই থাকবে না।

এবারের আবহ ও চিত্র ভিন্ন। পরিস্থিতি আকাশ-পাতাল। গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার তীব্র গণ আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি ও তার মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্যের বিরুদ্ধেই সারাদেশে অসংখ্য হত্যা মামলা। গ্রেপ্তার হয়েছেন কয়েকজন। নতুন কিছু না ঘটলে গণহত্যার বিচার হবে তাদের। এগুলো লু’র সফরের বিষয় নয়। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আমেরিকার বিভিন্ন সংস্থার কয়েকটি বৈঠক হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, নতুন প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা দিতে চায় আমেরিকা। তা নিয়েই আলোচনা করবে ঢাকা-ওয়াশিংটন। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতা রক্ষায় ঢাকার সঙ্গে নিরাপত্তাসহ আইপিএস ইস্যুতেও আলোচনায় আগ্রহী ওয়াশিংটন।

লু এর সাথে থাকা মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ, ইউএসএআইডি ও মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন চাহিদা সহায়তার ওপর ওয়াশিংটনের কড়া নজর। যুক্তরাষ্ট্র যাতে বাংলাদেশকে আগের মত (১৯৭৬-১৯৯১) 'সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ দেশের পর্যায়র্ভুক্ত করে অন্তর্বর্তী সরকারের সেই চেষ্টা তলে তলে নয়। একেবারে প্রাতিষ্ঠানিক। তাহলে ভারতের কী হবে? কোথায় গড়াবে সম্পর্কটি। 'যুক্তরাষ্ট্র অন্য কারো চোখ দিয়ে আর বাংলাদেশকে দেখে না’-সেই বার্তা অনেক আগেই পরিস্কার। এ তথ্য খোলাসা করেছিলেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তার ওই বার্তা ভারত ভালোভাবে নেয়নি। ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দেওয়ার পর বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস পালিয়েছিলেন-এমন তথ্য পর্যন্ত দেয়া হয় ভারত থেকে। এর তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সাথে পিটার হাসকেও আড়াল করে নেয়। এতে উইন-উইন ভাব আসে ভারতের। সেখানে এখন বিশাল ছন্দপতন। নতুন এ ছন্দের মাঝেই আবার বেশ প্রাসঙ্গিক যুক্তরাষ্ট্র।

১৯৯১ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র যখন একক বিশ্বের নেতৃত্ব দিতে থাকে এবং ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগনে হামলার পর মুসলিমদের বিরুদ্ধে দেশটি যুদ্ধ ঘোষণা করলে ভারতের হয় পোয়াবারো। দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান, কাশ্মীর, মালদ্বীপ এবং বাংলাদেশের উপর ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তি চালাতে থাকে অত্যাচারের ষ্টিম রোলার। মুখ বুজে এসব মুসলিম দেশগুলোকে ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য আচরণ সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু, পরিস্থিতি পাল্টে যায় ২০১৭ সাল থেকে, যখন চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দ্বন্দ্ব নিয়ে শুরু হয় নতুন স্নায়ুযুদ্ধ। রাশিয়া চীনের সঙ্গে জোট বাঁধলে রাশিয়ার পুরোনো বন্ধু ভারত পরে যায় মহাবিপদে। ‘না ঘরকা, না ঘাটকা’ অবস্থার মধ্যে পড়ে যায় ভারত। তাদের চাণক্য কুটনীতি নতুন স্নায়ুযুদ্ধের সময় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়, যেমনটি হয়েছিল প্রথম স্নায়ুযুদ্ধের সময়। বাংলাদেশের ভূ-অবস্থান এবং কৌশল এ মুর্হূতে আন্তর্জাতিকভাবে ভারতের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একারণেই ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলপত্রে বাংলাদেশের সমর্থন পাওয়ার বিষয় রয়েছে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কী কী ধরনের সহায়তা এবং বাংলাদেশের সেনাবাহীনিকে কীভাবে সহায়তা করছে তা অল্প কিছুদিনের মধ্যে মালুম করা যাবে।

লেখক: সাংবাদিক- কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন

বিভি/পিএইচ

মন্তব্য করুন: