• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৫

শেখ হাসিনার পতন হজম করতে পারছে না ভারত!

নাসির উদ্দিন

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪

ফন্ট সাইজ
শেখ হাসিনার পতন হজম করতে পারছে না ভারত!

ছবি: নাসির উদ্দিন

‘বঙ্গবন্ধুকন্যা কখনো পালায় না’- এমন উক্তি তিনি করেছেন বহুবার। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত পালিয়েছেন। সবার দৃষ্টিতে এটাই বাস্তবতা। কিন্তু, তার দৃষ্টিতে এটি পালানো নাও হতে পারে। হতে পারে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন! এভাবে তার সারাক্ষণ মিথ্যাচার দেশবাসীকে গিলতে হয়েছে দীঘর্সময়।বদহজম হলেও অতিকষ্টে সয়ে গেছেন সবাই। তবে, সবকিছু পেছনে ফেলে পালানোর মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা তার প্রয়াত পিতার দেখানো পথেই হেঁটেছেন। শাসন কাজেও অনুসরণ করেছেন পিতাকে। শেষ মূহূর্তেও স্বভাবজাত দম্ভ, অহমিকা ও ঔদ্ধত্য স্পষ্ট ছিল তার আচরণে।

সবাই জানেন, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের দুঃশাসনে দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয়েছিল বেশি। একের পর এক রামু, সুনামগঞ্জ, নাসিরনগর, গোবিন্ধগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনীতে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সব জায়গায় দেখা গেছে, এর সাথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লোকেরা জড়িত। ক্ষমতা কবজা করে রাখতে নিয়মিত বিরতিতে আরও চলতো জঙ্গি তৈরি/জঙ্গি দমন অভিযান। আওয়ামী লীগ সব সময় বিশ্ব সম্প্রদায়কে একটা বার্তা দিতে চাইতো যে, এ দেশে জঙ্গিবাদ দিন দিন বাড়ছে। এসব নিয়ন্ত্রণের জন্য আওয়ামী লীগের কোন বিকল্প নেই। এটা নিয়মিত বিরতিতে তাদের রুটিন কাজে পরিণত হয়েছিল। ক্ষমতার জন্য দলটি কত নিচে নেমেছিল এটা তার একটা উদাহরণ। 

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের তাপে পোড়ার ভয়ে ভারতে পালিয়ে এখন দেশ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছেন শেখ হাসিনা। নতুন করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা তৈরির মাধ্যমে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করে লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় ফেরার অপচেষ্টা তার। হত্যা, গুম, খুন, গণহত্যা, নির্যাতন-নিপীড়ন, গণতন্ত্র ধ্বংস, দুর্নীতি করে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশটাকে ফোকলা করেছেন। তারপরও তার ষড়যন্ত্র থেমে নাই। দেশটাকে এক মুহূর্তের জন্যও শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। প্রথমে ডিজিটাল জুডিশিয়াল কু’র চেষ্টা। তারপর ধারাবাহিকভাবে আনসার বাহিনী, ব্যাটারি রিকশা, নূর হোসেন দিবসে ‘ট্রাম্প’ কার্ড, ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সমাবেশ, বিভিন্ন কলেজে বিশৃঙ্খলা তৈরির পর এবার ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করে লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসার অপচেষ্টা তার।

বাস্তবতা হলো- শেখ হাসিনার পতন হজম করতে পারেনি ভারত। এর কারণ, ভারতের সঙ্গে তার প্রত্যেক প্রতিবেশীর সম্পর্ক খারাপ। শুধু বাংলাদেশের ওপর কর্তৃত্ব ছিল। ভারত বাংলাদেশকে আশ্রিত রাজ্যের মতো বিবেচনা করতো। সেই আশ্রিত রাজ্য হাতছাড়া হওয়ায় বেজায় গোস্সা তাদের। তাই হাসিনার গদি হারানো মেনে নিতে পারছেন না স্বয়ং নরেন্দ্র মোদিও। সাড়ে ১৫ বছর শেখ হাসিনাকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় রাখার জন্য যা দরকার, তাই করেছে ভারত। এর বিনিময়ে ভারত বাংলাদেশ থেকে বৈধ-অবৈধ উপায়ে যা সম্ভব হয়েছে তা-ই হাতিয়ে নিয়েছে। শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে এখন অস্বস্তিতে আছে ভারত। তারা চেষ্টা করেছিল হাসিনাকে অন্য জায়গায় দেওয়ার জন্য। অন্য দেশ আশ্রয় না দেওয়ায় বাধ্য হয়ে ভারতই রাখল। সেখানে বসেই চলছে ষড়যন্ত্রের নতুন বীজ বপণের কাজ। 

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান ছিল বায়ান্ন সাল থেকে এখন পর্যন্ত সংঘটিত অভ্যুত্থানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক, গভীর ও আক্রমণাত্মক। এর কারণ, গত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ জনগণের ওপর এমন অত্যাচার, নির্যাতন করেছে যার কোন পূর্ব দৃষ্টান্ত নেই। নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ থাকলেও বিক্ষোভের সুযোগ ছিল না। এই বিক্ষোভ যে কেবল শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে হয়েছে তা নয়, শেখ মুজিবের বিরুদ্ধেও হয়েছে। ওই ক্ষোভ থেকে ৫ আগস্ট দেশের জনগণ শেখ মুজিবের মূর্তি ভেঙে ফেলল। তার বাড়িতে আগুন দিল। এটা শেখ মুজিবের বিরুদ্ধেও একটা রায়।

অতঃপর পিতার দেখানো পথেই দীর্ঘ সময় হাঁটলেন শেখ হাসিনা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত মূহূর্তে পালালেন দেশ ছেড়ে। সাথে নিয়ে গেলেন বোন রেহানাকে। ভয়ঙ্কর অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতায় ফেলে গেলেন নিজ দলের নেতাকর্মী ও অনুগত প্রশাসনকে। পালানোর বিষয়টি তিনি আগে জানাননি কাউকে। শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যরা আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। 

পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে বোন রেহানাকে নিয়ে যে মিশনে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন, সেই মিশন শেষে বোনকে নিয়ে পালালেন তিনি। দীর্ঘ সময়ে শেখ পরিবারের হত্যাকারীদের বিচারসহ হাসিনা চরিতার্থ করেছেন তার সকল বিকৃত জিঘাংসা। স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় শাসন করেছেন বাংলাদেশ। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন করে বংশের সব সদস্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বিভিন্ন দেশে। শেখ হাসিনা যে ভারত থেকে বোনকে নিয়ে ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন, বোনকে নিয়ে সেই ভারতেই পালালেন তিনি। তার পলায়নের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে অবসান হলো শেখ পরিবারের নেতৃত্বের। 

ভারতে আশ্রয় নেয়া শেখ হাসিনা সেখান থেকে একের পর এক বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে নিউজ টাইমের বর্ষীয়ান সাংবাদিক দীনেশ কে ভোরা প্রশ্ন তুলেছেন, অন্য দেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা এক ব্যক্তি কীভাবে বিবৃতি দিতে পারেন? আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, যখন কোনো ব্যক্তি একটি দেশে কূটনৈতিক আশ্রয় নিয়ে থাকে, তখন তিনি বিবৃতি দিতে পারেন না। কিন্তু, শেখ হাসিনা সেই নিয়মের লঙ্ঘন করেছেন। 

সাংবাদিক ভোরার মতে, শেখ হাসিনা যা বলছেন, তা আসলে মোদি সরকারের শিখিয়ে দেয়া বুলি। মোদি সরকার আসলে শেখ হাসিনার কাঁধে বন্দুক রেখে নিজেদের কথাই বলিয়ে নিতে চাইছে হাসিনাকে দিয়ে। সাংবাদিকের মতে, এই প্রবণতা আসলে আগুন নিয়ে খেলার সমান, আত্মঘাতী পদক্ষেপের সঙ্গে তুলনীয়। এর আগে নেপালের সঙ্গেও এমন আচরণ করেছে ভারতের মোদি সরকার। নেপালের সংবিধানে নাক গলিয়ে পার্বত্য রাষ্ট্রের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে ভারত। 

এদিকে, ভারত শেখ হাসিনাকে এতটাই ক্ষমতা দিয়ে রেখেছে যে, তিনি ভারতে বসে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে যাচ্ছেন। হাসিনাকে এখনই না থামালে দুই দেশের সম্পর্ক আরও তলানিতে গিয়ে ঠেকবে বলে মনে করেন সাংবাদিক ভোরা। মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটানের মতো একই ভুল বাংলাদেশের সাথে করছে ভারত। নিজেকে বিশ্বগুরু প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে আসলে আগুন নিয়ে খেলছে ভারতের মোদি সরকার।
বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ভারতের পছন্দ একজন। সে কারণে তার জন্য এখানে অস্থিতিশীল করতে হবে? আমাদের প্রত্যাশা ভারত কোন বিশেষ দল নয়, বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাড়াবে। না হয় চুপ থাকবে।

লেখক: নাসির উদ্দিন, চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান, বাংলাভিশন

বিভি/পিএইচ

মন্তব্য করুন: