• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

সৈয়দ আবুল মকসুদের জন্মদিনে শুভেচ্ছা 

আহমেদ জহুর 

প্রকাশিত: ১২:১২, ২৪ অক্টোবর ২০২১

আপডেট: ১২:১৫, ২৪ অক্টোবর ২০২১

ফন্ট সাইজ
সৈয়দ আবুল মকসুদের জন্মদিনে শুভেচ্ছা 

লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ

মননশীল লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ-এর আজ জন্মদিন। ১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর মানিকগঞ্জের এলাচিপুর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। জন্মদিনে রইলো শুভেচ্ছাঞ্জলি!

সৈয়দ আবুল মকসুদ একাধারে সাংবাদিক, কলামিস্ট, গবেষক, প্রাবন্ধিক, কবি ও লেখক। গবেষণাধর্মী প্রবন্ধের জন্য অত্যন্ত সুপরিচিত। দৈনিক প্রথম আলোয় তিনি নিয়মিত কলাম লিখে থাকেন। তাঁর প্রবন্ধসমূহ দেশের রাজনীতি, সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়। তিনি বিখ্যাত সাহিত্যিক, সমাজকর্মী এবং রাজনীতিবিদদের কর্মজীবন নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন। এর পাশাপাশি কাব্যচর্চাও করেছেন। তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা চল্লিশের ওপরে। জার্নাল অব জার্মানী তাঁর লেখা অনন্য ভ্রমণকাহিনী। বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

সৈয়দ আবুল মকসুদ ১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার এলাচিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা সৈয়দ আবুল মাহমুদ ও মা সালেহা বেগম। তাঁর জন্মের দু’বছর পর ১৯৪৮ সালের ২০ নভেম্বর মা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে ধনুষ্টঙ্কারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মায়ের মৃত্যুর পর তাঁর বিমাতা বেগম রোকেয়া আখতার তাঁকে সন্তান স্নেহে লালন-পালন করেন। তিনিও ১৯৮০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। 

তাঁর বাবা কাব্যচর্চা করতেন। তাই শৈশব থেকে তিনি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকা পড়ার সুযোগ পান। বাবা বাড়িতে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা, দ্য স্টেটসম্যান ও ইত্তেহাদ এবং পরে ঢাকার দৈনিক আজাদ, দৈনিক ইত্তেফাক ও মর্নিং নিউজ পত্রিকা রাখতেন।

সৈয়দ আবুল মকসুদ-এর শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি হয় তাঁদের বাড়ির নাপিত লোকনাথ শীল-এর কাছে। তিনি তাঁকে বর্ণবোধ ও আদর্শলিপির পাঠ দিতেন। এরপর তিনি পড়েন তাঁদের ডাক্তার নিবারণচন্দ্র সাহা পোদ্দার-এর কাছে। তিনি সপ্তাহে তিন-চার দিন তাঁকে পড়াতেন। তিনি ঝিটকা আনন্দমোহন হাই স্কুলে একেবারে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬৪ সালে এম আনিসুজ্জামান সম্পাদিত সাপ্তাহিক নবযুগ পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমে। এটি ছিলো তখন পাকিস্তান সোস্যালিস্ট পার্টির মুখপত্র। পরে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি সমর্থিত সাপ্তাহিক 'জনতা'য় কাজ করেন কিছুদিন। এরপরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ বার্তা সংস্থায় যোগ দেন। ২০০৮ সালের ২ মার্চ বার্তা সংস্থার সম্পাদকীয় বিভাগের চাকরি ছেড়ে দেন। পরে তিনি দৈনিক প্রথম আলোতে 'সহজিয়া কড়চা' এবং 'বাঘা তেঁতুল' শিরোনামে তিনি সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে কলাম লেখেন।

সৈয়দ আবুল মকসুদ-এর সাহিত্যচর্চা শুরু হয় ষাটের দশকে কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ দিয়ে। তখন তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় লিখতেন। ১৯৮১ সালে তাঁর কবিতার বই 'বিকেলবেলা' প্রকাশিত হয়। ১৯৮৭ সালে তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ দারা শিকোহ ও অন্যান্য কবিতা প্রকাশিত হয়। মানবাধিকার, পরিবেশ, সমাজ ও প্রেম নিয়ে তিনি কবিতা লিখেছেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের ক্ল্যাসিকধর্মী গবেষকদের মধ্যে অন্যতম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বুদ্ধদেব বসু, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রমুখ প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের জীবনী ও কর্ম নিয়ে গবেষণা করেছেন। 

আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে নিয়ে তিনি লিখেছেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী’র জীবন, কর্মকান্ড, রাজনীতি ও দর্শন (১৯৮৬) ও ভাসানী কাহিনী (২০১৩)। ভাসানী কাহিনীতে তিনি ভাসানী’র বৈচিত্র্যময় ও ঘটনাবহুল দীর্ঘ জীবন এবং তাঁর রাজনৈতিক দর্শন বর্ণনা করেছেন। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহকে নিয়ে লিখেছেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’র জীবন ও সাহিত্য (২০১১) ও স্মৃতিতে ওয়ালীউল্লাহ (২০১৪)। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’র জীবন ও সাহিত্য গ্রন্থে তিনি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জীবন ও তাঁর সাহিত্যকর্ম নিয়ে লিখেছেন। এছাড়া তৎকালীন সময়ের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক দিকগুলো তুলে ধরেছেন। স্মৃতিতে ওয়ালীউল্লাহ গ্রন্থে তিনি তাঁকে চিনতেন এবং জানতেন এমন সব মানুষদের কাছ থেকে নানান উপাদান সংগ্রহ করেছেন। তথ্য সংগ্রহের জন্য তিনি ফ্রান্সের প্যারিসে ইউনেস্কোর সদর দফতর এবং পাকিস্তানে গিয়েছিলেন।

সৈয়দ আবুল মকসুদ-এর স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। কিছুদিন শিক্ষকতা করেছেন অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজে। তাঁদের দুই সন্তান। মেয়ে জিহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স এবং মাস্টার্স করে ব্যাংকে চাকরি করছেন। ছেলে নাসিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স এবং মাস্টার্স করে দুই বছর ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি এবং স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়িয়েছেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ করে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডে সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে চাকরি করছেন।

সৈয়দ আবুল মকসুদ রচিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- কাব্যগ্রন্থঃ বিকেলবেলা (১৯৮১), দারা শিকোহ ও অন্যান্য কবিতা (১৯৮৭), সৈয়দ আবুল মকসুদের কবিতা (২০১২)। প্রবন্ধগ্রন্থঃ যুদ্ধ ও মানুষের মূর্খতা (১৯৮৮), গান্ধী, নেহেরু ও নোয়াখালী (২০০৮), ঢাকার বুদ্ধদেব বসু (২০১১), রবীন্দ্রনাথের ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন, প্রভৃতি (২০১২), প্রতীচ্য প্রতিভা, কাজী ইমদাদুল হক রচনাবলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা, অরণ্য বেতার, বাঙালি জাতি বাঙালি মুসলমান ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ, রাজনীতি ও ধর্মীয় রাজনীতি, রবীন্দ্র রাজনীতি, নির্বাচিত প্রবন্ধ।

জীবনীগ্রন্থঃ মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীর জীবন, কর্মকান্ড, রাজনীতি ও দর্শন (১৯৮৬), সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জীবন ও সাহিত্য (২০১১), ভাসানী কাহিনী (২০১৩), স্মৃতিতে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ (২০১৪), গান্ধী মিশন ডায়েরি, পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রনাথ, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দশ দার্শনিক, পথিকৃৎ নারীবাদী খায়রুন্নেসা খাতুন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী জীবন ও সাহিত্য, হরিশচন্দ্র মিত্র।

ভ্রমণকাহিনীঃ জার্নাল অব জার্মানী, ভ্রমণ সমগ্র, কলাম সংকলন, সহজিয়া কড়চা।

লেখকঃ কবি, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক

বিভি/এওয়াইএইচ

মন্তব্য করুন: