দেশে এক ফোঁটা সয়াবিন তেলও আমদানি হয় না, সব পামওয়েল আর পোড়া মবিল
দেশে সয়াবিন তেল নাকি লিটারে ৩৮ টাকা বেড়েছে?
প্রথমত বাংলাদেশে এক ফোঁটা সয়াবিন তেল'ও আমদানি করা হয়না। সূর্যমুখী তেল নামে যেটা আপনারা বেশী দামে কিনে খান, সেই সূর্যমুখীর একটা দানা পর্যন্তও দেশে আমদানি করা হয় না।
দেশে আমদানি হয় শুধু মাত্র পামওয়েল, পালওয়েল গ্রেট-১, গ্রেট-২, গ্রেট-৩, এমন করে ১২ নাম্বার গ্রেট পর্যন্ত পামওয়েল দেশে আমদানি হয়।
এখন প্রশ্ন করবেন- তাইলে আমাদের পামওয়েল জমে যায় না কেন??
উত্তর- ১. পামওয়েলকে প্রসেস করার পড়ে উপরের অংশটা কখনোই জমে না। যেটা বোতল জাত করে বাজারে সানফলোয়ার নামে বেশী দামে বিক্রি হয়।
২. পামওয়েল জমে যাওয়ার জন্যে নির্দিষ্ট একটা টেমপ্রেচার প্রয়োজন হয়, সেই টেম্প্রেচার কি দেশে আছে? দেশ তো আগুনের কুন্ডলির মতো ১২ মাস জ্বলে ।
৩. পৃথিবীর সব চাইতে আধুনিক জার্মান রিফাইনারি দুবাইতে বসানো হয়েছে, সেই রিফাইন মেশিনে যেকোন তেল জাতীয় কিছু দিলে আর সাথে চীনের তৈরী ফ্লেবার আর কেমিক্যাল মেশালে ওরিজিনাল সরিষার তেল, নারিকেল তেল, সয়াবিন তেল, ওলিভওয়েল এমন কি সূর্যমুখী তেলও তৈরি হয়ে যায়। যে কারনে পৃথিবীতে এখন মোটরগাড়ী ও বিভিন্ন কলকারখানার ইঞ্জিনের পোড়া মবিল অধিক দামে বিক্রি হয়, যা আন্তজাতিক বাজারে অনেক চাহিদা। সেই পোড়ামবিলকে রিফাইন করে বিভিন্ন তেলের সাথে মিশিয়ে বিক্রি করা হয়, এবং এই পোড়ামবিল থেকে উৎপন্ন তেল অন্য কোন জৈব তেলের সাথে মেশালে সেই তেল আর জমে যেতে পারে না, যেই কারনে পামওয়েলের সাথে উক্ত পোড়ামবিল রিফাইন তেল মেশানো হয়।
এবার আসি দামের খবর নিয়ে। গতবছর ইউরোপে যখন সয়াবিন তেলের দর ০.৭৬ ডলার পার লিটার, আর সূর্যমুখী ০.৯৬ ডলার পার লিটার তখন বাংলাদেশের বাজারে তেলের দাম ১৩৮ টাকা পার লিটার, মানে ডাবল দাম। তখন তেল ব্যবসায়ীরা প্রচুর লাভ করেছে। সেই সময়ে কিন্তু এই অন্যায়ের ব্যপারে কেউ মুখ খুলে নাই। আমরা প্রাশ্চাত্য থেকে এসব নিয়ে অনেক লিখেছি, আমার অনেক লেখাতে আপনারা পেয়েছেন। তার প্রতিউত্তরে দেশের সরকার পক্ষ থেকে আমাদেরকে অনেক বাজে বাজে কথা শুনতে হয়েছে। তাছাড়া দেশে তো এক শ্রেণী আছেই, সরকারের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললেই তারা চিৎকার চ্যাঁচামেচি করে বলতে থাকে, এরা দেশের শত্রু, এরা দেশের ভালো চায় না।
এখন তেলের দাম বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা লিটার করা হল, অমনিই আপনারা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তেলওয়ালাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু একবারও কি জানতে চেষ্টা করেছেন, আন্তজাতিক বাজারে আজকের তেলের মুল্য কতো?
আমরা ইউরোপে যেই সূর্যমুখী এক নাম্বারটা ১ ইউরো লিটার কিনতাম, সেই তেল এখন কিনতে হচ্ছে ৫ ইউরো দিয়ে, মানে বাংলাদেশের টাকায় ৫০০ টাকা, যা আগে ছিল ১০০ টাকারও নীচে।
অতএব এই যে দেশে তেলের দাম এখন বেড়েছে, এটাতে এখন তেল কারবারিদের লাভ নেই, বরং দোয়া করতে থাকেন আর যেন দাম না বারে, তবে ইউক্রেন যুদ্ধ যদি চলতে থাকে তাহলে দাম আরো বাড়বে।
অতএব, আপনারা দাম নিয়ে কথা না বলে, কোন পোড়া মবিল দিয়ে তৈরি করা তেল আর পামওয়েল আপনাদের কাছে সয়াবিনের দামে বিক্রি করছে তার প্রতিবাদ করুণ।
সারাবছর দেখি, ম্যাজিস্ট্রেটরা ভোক্তাঅধিকারের নামে গামছাওয়ালা আর লুঙ্গীওয়ালাকে জরিমানা করতে, কিন্তু দেশের এতো বড় তেলের প্রতিষ্ঠান, যেই প্রতিষ্ঠান দেশের জনগণের মাল্টি বিলিয়ন টাকা পকেট কাটছে, যেই ভেজাল তেল খেয়ে দেশের ১৬ কোটি মানুষ অসুস্থ্য হয়ে হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে চিকিৎসার নামে। হাজার হাজার মানুষ মরছে অসুখে বিসুখে। আজ পর্যন্ত কি শুনিনি, কোন ম্যাজিস্ট্রেট, কোন তদারকি দল, কোন প্রতিষ্ঠান বা সরকার সেই তেলের কোম্পানিতে গিয়ে আপনার অধিকার নিশ্চিত করছে? দুই টাকা জরিমানা করেছে? করে নাই...। কারন সেখানে মিলিয়ন মিলিয়ন টাকা ঘুষ লেনদেন হয়।
দেশের তেল কোম্পানিগুলো যদি আপনি একবার ভিজিট করেন, তাহলে সাথে সাথে আপনার বমি চলে আসবে, আর আপনাকে সেই তেল ফ্রিতে দিলেও এই জীবনে তা আর খাইতে চাইবেন না।
নাজ যাইন : প্রবাসী
বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশনের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নেবে না
মন্তব্য করুন: