পদ্মা সেতুর নাট-বল্টু ওরা খুলতে পারলো যে কারণে!
আমি একটা কথা চিন্তা করছিলাম, যে দুই যুবক সেতুর রেলিংগের নাট ও ওয়াসার খুলে দেখালো তা বেশ বড় সাইজের (২১ /২২) মিলি নাট। এগুলো ১৫০ থেকে ২০০ পাউন্ড টর্কে (torque) টাইট করতে হয়, যেটা ট্রাকের চাকার নাটের যে টাইট দেওয়া হয় তার থেকেও বেশী। প্রথমত কোনও মটর সাইকেলের টুল বক্সে ঐ সাইজের রেঞ্জ অথবা সকেট থাকবার কথা নয়। কারণ শুধু টুলস এবং কমপ্রেসারের দাম বাংলাদেশের “খেলনা” মটর বাইকের চেয়ে বেশী। এই ধরনের নাট স্লাইড রেঞ্জ বা এড্জাস্টেবেল রেঞ্জ দিয়ে টাইট দেয়া বা খোলা সম্ভব নয়। এটা লাগাতে প্রায় ৫ কেজি ওজনের একটা টর্ক রেঞ্জ লাগে(ছবি দিলাম যন্ত্রটির)।
এই ধরনের নাট সাধারনত প্রথমে হাত দিয়ে লুজ ভাবে লাগানো হয়, তারপর নিউমেটিক কমপ্রেসার বহন করা একটা গাড়ী নিউমেটিক টরক রেঞ্জ এবং সকেটসহ এসে ওগুলো ফাইনাল টাইট দিয়ে যায়। যাতে সেতুতে একই কাজে ৫ হাজার নাট থাকলেও সবগুলা একই প্রেসারে টাইট দেওয়া হয়। আমি নিশ্চত পূরো সেতুতে একটাও নাট বা বোউল্ট পাবেন না যেটা হাতে অনুমান করে টাইট করা। পাড়ার দুইচালা টিনশেডের গাড়ীর গ্যারেজে এরকম হাতের আন্দাজে কাজ হইলেও প্রফেশন্যাল কোনও কাজে এটা কল্পনাও করা যায় না।
আমি যেটা বলতে চাচ্ছি যে ঐ যুবকগুলো চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে গেল যে রেলিংগের নাটগুলো শুধু হ্যান্ড টাইট দেওয়া হয়েছে পরবরতিতে নিউমেটিক টর্ক রেঞ্জ দিয়ে ফাইনেল টাইট দেওয়া হয় নাই। আমি নিশ্চিত সব কয়টা নাট যথাযথ টর্ক দিয়ে রিটাইটেনিং পর কেউ মটর সাইকেলের অথবা গাড়ীর রেঞ্জ দিয়েও ঐ নাটগুলো এক চুলও ঢ়িলা করতে পারবে না। অর্থাৎ ঐ নাটগুলো আসলেই ফাইনেল টাইট দেওয়া হয় নাই গাফিলতির কারনে। আশাকরি সবগুলা নাট বোল্ট আবার পরীক্ষা করা হবে এবং যাদের গাফিলতির জন্য এই লজ্জাজনক অবস্থায় সরকারকে পড়তে হয়েছে তার উপযুক্ত বিচার হবে।
প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবেন না আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং এই সেতু আমার জীবনের দ্বিতীয় বিজয়।
লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ও প্রকৌশলী
মন্তব্য করুন: