• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

ডিজেলের দাম ২০ টাকা কমালেও বিপিসির লোকসান হয় না

মনজুরুল হক

প্রকাশিত: ১৬:৩৭, ৩১ আগস্ট ২০২২

ফন্ট সাইজ
ডিজেলের দাম ২০ টাকা কমালেও বিপিসির লোকসান হয় না

ডিজেল আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক কমানোর পাশাপাশি সব ধরনের অগ্রিম কর তুলে নেওয়া হয়েছে। এনবিআর জানায়, ‘ডিজেলে সব মিলে প্রায় ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে আমদানি শুল্ক ২২ দশমিক ৭৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এর আগে ডিজেল আমদানিতে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক, অগ্রিম কর ও অন্যান্য করসহ মোট ৩৪ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হত।‘ এই হিসাবে ডিজেলের দাম মিনিমাম ২০ টাকা কমালেও বিপিসির লোকসান হয় না। অথচ আমরা দেখলাম পরিবহন মালিকদের এবং ধনকুবেরদের জন্য ‘উথলে ওঠা মায়া’ থেকে সরকার তাদের বাড়তি মুনাফার ব্যবস্থা করে দিল।

 

কয়েকদিন ধরেই টিভি চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ-দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ চালের মজুদ আছে।‘খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, দেশে চালের অভাব হবে না। এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ পরিমাণ চালের মজুদ আছে।‘ এযাবতকালের সর্বোচ্চ মজুদের কথা বলার দিনই আর এক মন্ত্রী বললেন-‘দ্রুত ভিয়েতনাম থেকে চাল আমদানি করা হবে’। কী বুঝলেন? সর্বোচ্চ মজুদ বলতে কত সেটা দেখা যাক-চাল ১৭.১৬ লাখ মে.টন এবং গম ১.৪১ লাখ মে.টন। খুব সাধারণ প্রশ্নঃ ১৭ লাখ মে.টন মজুদ থাকলে ভিয়েতনাম থেকে আনার কথা উঠছে কেন? তার মানে এই মজুদের গল্পটার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ।

গত ২২ জুন এক আদেশে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার এবং নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছিল। এবার ‘২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের কথা জানানো হয়েছে। পাশাপাশি চাল আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।‘ তারপরও বাজারে কোনো প্রভাব নেই। বাণিজ্যমন্ত্রী বলে যাচ্ছেন-‘অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি’। আপনারা কি তাঁকে প্রশ্ন করবেন, নিজে একজন ব্যবসায়ী হয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের দিকে আঙ্গুল তুলছেন ভালো কথা, তাদের বিরুদ্ধে আপনাদের কী করণীয়? কেন তাদের শায়েস্তা করছেন না? সমস্যাটা কোথায়? 

আপনারা না বললেও জনসাধারণ ঠিকই সমস্যার গোঁড়া চিনতে পারে। আপনারা জনগণ জনগণ বলে মাতম তুললেও শেষ পর্যন্ত আপনাদের সকল প্রটেকশন ওই বড় ব্যবসায়ীদের রক্ষার জন্য। জনগণকে আগে পাঁচ বছর পর অন্তত ভোটের সময় কাজে লাগবে ভেবে কিছুটা হলেও জনকল্যাণ দেখাতে হতো। এখন সে বালাইও নেই। তাই জনগণকে শুষে ছিবড়ে বানিয়ে ধনিকশ্রেণির পাহারাদার হিসাবে তাদের রক্ষা করে যাচ্ছেন এবং বেশুমার বয়ান দিয়ে যাচ্ছেন-‘বাংলাদেশ কখনো্ শ্রীলঙ্কা হবে না’। আমরাও জানি সেটা। শ্রীলঙ্কা হতে গেলে জনগণকে সাহসী হতে হয়। আপনাদের ডজন ডজন নিপীড়নমূলক কালাকানুনের ভয়ে জনগণ শ্রীলঙ্কার মত বিদ্রোহ করেনি। আর সেই নির্ভরতা থেকে জনগণকে ‘তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে বাঁদরের ওটা-নামার অংক’ শেখাচ্ছেন!

সরকারের মন্ত্রীবহর এখন দুভাগে বিভক্ত। এক ভাগের দায়িত্ব দেশে যা কিছু অন্যায়-অনিয়ম হোক সব বিএনপি আমলে সৃষ্ট বলে যেতে হবে। আর এক ভাগের দায়িত্ব চাল-ডাল-গম-আটা-জ্বালানি তেল-ভজ্য তেল-ডলারের কোনো ঘাটতি নেই, এটা আশ্বস্ত করা।

জনসাধারণ কালাকানুনের ভয়ে রাজপথে নামছে না, তার মানে এই নয় যে কখনই নামবে না। পেটে ভাত না থাকলে কোনো প্রতিশ্রতি দিয়ে পেট ভরবে না। তখন কাউকে ডেকে নামাতে হবে না। যার যার ইন্সটিঙ্কটই তাকে রাজপথে টেনে নামাবে। এটা সূত্রের কথা। আর এ কথা কারও চোখ রাঙানিতে ভুল প্রমাণিত হবে না।

লেখক: সাংবাদিক ও লেখক

(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার  বাংলাভিশন নিবে না।)

মন্তব্য করুন: