• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

কুশিয়ারা : পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভুলের খেসারত

ফাইজ় তাইয়েব আহমেদ

প্রকাশিত: ১৫:৩৯, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

আপডেট: ১৫:৪৩, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
কুশিয়ারা : পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভুলের খেসারত

সংগৃহীত ছবি

সিলেটের জকিগঞ্জে কুশিয়ারার ঐ পাড়ে ভারতের করিমগঞ্জ। নদীর মাঝ বরাবর সীমান্ত। কুশিয়ারার পানি বন্টনের সাফল্য বলতে এই খালের মুখটা খোলা আর এতে পানি প্রবাহ তৈরিকেই বুঝানো হচ্ছে। পোষ্ট পড়লে কাহিনীটা পরিষ্কার হবে।  ছবিতে খালটাকে সরু নালার মত দেখাচ্ছে, বাস্তবে এটা নালা ছিল না, মোটামুটি একটা মাঝারি খাল ছিল। রহিমপুর খালটা প্রাকৃতিক খাল, এখানে কুশিয়ারা থেকেই পানি প্রবাহিত হত। কিন্তু পাউবো সেঁচের সুবিধার জন্য বেশি পানি নিবার জন্য পাম্প বসানোর চিন্তা করে। 
উজানে নদী অববাহিকায় চলা উন্নয়ন কাজের কারনে, খনিজ আহরণ, বাঁধ, পাথর উত্তোলন ইত্যাদি বহুবিধ কারনে বাংলাদেশের নদীতে সিল্টেশান বেড়েছে। ফলে নদী থেকে উৎপন্ন শাখা নদী-খালের মুখ বালি জমে প্রবাহ কমে যাচ্ছে এবং গেছে। একই কারনে কুড়িগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার আনি ঢুকে বেরুতে পারে না, জলাবদ্ধতায় পড়ে আবাদী জমি।  

তবে পাউবো একটা টেকনিক্যাল ভুল করে। আগে খাল খনন না করে, বরং বোকার মত কুশিয়ারায় খালের মুখে বাঁধ দেয়। ভারতও পেয়ে বসে। কুশিয়ারার ঠিক মাঝ নদীতে ভারত-বাংলাদেশ সীমানা বলে নো ম্যান্স ল্যান্ডের অযুহাত দেখিয়ে বাঁধ দেয়ার পরের কাজ আটকে দেয়। এতে ২০০৯ থেকে রহিমপুর খালের পানি ১০০% বন্ধ হয়ে যায়। আমও যায়, ছালাও! নিজের বিপদ আমরা কিভাবে ডাকি, দেখেন। খালটা সঠিক ভাবে খনন করলে স্বভাবিক প্রবাহটা সচল থাকত।  
২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফেনী নদীর পানি ভারতকে দিয়ে এসেছে। কিন্তু তখন এই রহিমপুর খালের বিষয়টা সমাধান হবার কথা ছিল, ভারত ঝুলিয়ে রেখেছিল। কিন্তু ফেনী পানি চুক্তির আগেই কোন অনুমতি না নিয়ে ভারতের ৩২ টা পাম্প ফেনী নদী থেকে পানি পাম্প আউট করছিল। ইমাজিন রহিমপুরের খালে মাত্র ২-৩টা পাম্প, তাও খালটায় আগেই পানি ছিল, পাউবোর কৌশলগত ভুলে, আলোচনা না করে আগ বাড়িয়ে বাঁধ দেয়ায় পানি বন্ধ করি আমরা নিজেরাই, বাংলাদেশের নিজের এই ভুলকে একটা 'প্রধানমন্ত্রীর সফর' দিয়ে সমাধান করেছে ভারত। এটাকে বলে কূটনীতি। 

বাংলাদেশের নিজের এই ভুলকে একটা `প্রধানমন্ত্রীর সফর` দিয়ে সমাধান করেছে ভারত।

 মন্ত্রীরা কাজটাকে কুশিয়ারার পানি বন্টন হিসেবে দেখাচ্ছে, লজ্জা থাকলে বাহবা নেয়ার চেষ্টাটা তারা করতো না। তবুও পানির প্রাপ্তির যে কোন উদ্যোগকেই স্বাগত জানাই। বাংলাদেশের কারিগরি খাতের আমলা প্রশাসক এবং বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থার প্রকৌশলীরা যাতে এমন কৌশলগত ভুল আর না করেন ভবিষ্যতে। আপনাদের 'না ভাবিয়া করা কাজে' কয়েক লাখ লোকের ফসল গচ্ছা গেছে ও যাচ্ছে,  সেই ২০০৯ থেকে। প্রতিবেশি দেশ সম্পৃক্ত হয়ে যেতে পারে, এমন কাজের আগে মাথাটা খাটাবেন, প্লিজ!   
টানা এক যুগ কৃষকের ক্ষতি করেও জবাবদিহি হীন দেশে পার পেয়ে গেলেন।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে হওয়া ৭টি সমঝোতা চুক্তির মধ্যে অন্যতম কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি। চুক্তি অনুযায়ী, কুশিয়ারা নদী থেকে রহিমপুর খাল দিয়ে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলায় শুকনো মৌসুমে চাষাবাদে আসবে ব্যাপক পরিবর্তন। একইসঙ্গে উপকৃত হবেন কানাইঘাট ও বিয়ানীবাজার উপজেলার কিছু অংশের কৃষক।

 

জকিগঞ্জ উপজেলার অমলশীদ পয়েন্টে ভারতের বরাক নদী বিভক্ত হয়ে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর উৎপত্তি। এই পয়েন্টের আন্তর্জাতিক সীমান্ত ধরে বেশকিছু এলাকা অতিক্রম করে বিয়ানীবাজার উপজেলায় বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করেছে। কুশিয়ারার উৎসমুখ থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে শরীফগঞ্জ বাজারের পাশেই কুশিয়ারা নদী থেকে রহিমপুর খালটির উৎপত্তি। প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রাকৃতিক খালটি আরও অনেক খালের উৎপত্তিস্থল।

ফাইজ় তাইয়েব আহমেদ

(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার  বাংলাভিশন নিবে না।)

মন্তব্য করুন: