• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

সড়ক ঝরছে হাজারো প্রাণ, প্রতিকার কি?

মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২

আপডেট: ২০:৪৩, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
সড়ক ঝরছে হাজারো প্রাণ, প্রতিকার কি?

বাংলাদেশে প্রতি মাসে গড়ে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয় ৪০০ জন

সংবাদপত্রে প্রতিদিন মর্মান্তিক যে খবরটি অনিবার্য বিষয় তা হলো সড়ক দুর্ঘটনা দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা। সারি সারি মৃতদেহের ছবি, দুমড়ে - মুচড়ে যাওয়া গড়ি- দিনের শুরুটাই হয় এমন মন খারাপ করা খবরে । এভাবে প্রতিদিন সংবাদপত্রের পৃষ্ঠাগুলোয় থাকে একাধিক সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ। যেন পথের ধারে ঘাপটি মেরে বসে আছে মৃত্যু। তাই আজ যে সংবাদ আমার কাছে কেবলই দুর্ঘটনা, কাল হয়তো আমার মতো আমার স্বজন কিংবা অন্য কেউ হবে তার নির্মম গণহত্যার শিকার । 

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ঢাকা - চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ঢাকা - আরিচা মহাসড়কে। এছাড়া বিভিন্ন জেলা শহরের সড়কগুলোও যেন মৃত্যু ফাঁদ। ঢাকার টিএসসি মোড় থেকে নীলক্ষেত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের হাইওয়ে: চট্টগ্রামের ইউএসটিসির সামনের সড়কে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঝরে গেছে অনেক শিক্ষার্থী, এমনকি শিক্ষকের প্রাণ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার হার বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি। সুত্রমতে, প্রতি দশ হাজার। যানবাহনে বাংলাদেশে প্রাণহানির হার একশ উনসত্তর জন। অথচ বিশ্বের সর্ববৃহৎ গাড়ি প্রস্তুতকারী দেশ জাপানে প্রতি দশ হাজার গাড়িতে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার ১.৯ জন।

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ :

একটি পরিসংখ্যানে প্রকাশ, বাংলাদেশে প্রতি মাসে গড়ে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয় ৪০০ জন। এদের মধ্যে অনেকেই মৃত্যুবরণ করে। কেউ কেউ গুরুতর আহত হয়, এতে বরণ করে নেয় স্থায়ী পঙ্গুত্বের অভিশাপ । উদাহরণ স্বরূপ যেমন আমি নিজে গত ২৫ জুলাই ২০২২ রাত সাড়ে এগারোটায় রাজধানীর সাইন্সল্যাবের মোড়ে মাইক্রোবাস এর সঙ্গে রোড এক্সিডেন্টে করে গুরুতর আহত অবস্থায় বর্তমানে চিকিৎসাধীন একমাস ১৭ দিন। ডান পায়ের হাটুর নীচে হাড় ভেঙ্গে দুই ভাগ হয়ে গেছে ।  এমতাবস্থায় দুটি অপারেশন করানো লাগবে। ডাক্তারের পরামর্শ হচ্ছে আমি একাধারে তিন থেকে চার মাস সময় বেডে শুয়ে থাকতে হবে । তাহলে এখন কি ধারালো ।  এই তিন চারমাস আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে রাতদিন কাটিয়ে যাবো ।  এতে কি পরিমাণ ক্ষতি সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমার। এই ক্ষতি পূরণ কে দেবে আমার ?  

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য যেসব কারণগুলো প্রধানত দায়ী তা হলো -----

০১. বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো
০২. ত্রুটিযুক্ত যানবাহন
০৩. ফিটনেসবিহীন গাড়ি
০৪. লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক 
০৫. অদক্ষ হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো
০৬. ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ড্রাইভারদের অজ্ঞতা বা অনীহা
০৭. শিথিল ট্রাফিক আইন ব্যবস্থা
০৮. জেব্রা ক্রসিং ফুটপাত ও ফ্লাইওভার স্বপ্লতা
০৯. অপ্রশস্ত রাস্তা 
১০. ডিভাইডারযুক্ত চারলেন বিশিষ্ট দ্বিমুখী সড়কের অভাব ইত্যাদি । 
এছাড়া হকারদের ফুটপাত দখল, যততত্র রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, পথের ধারে বেআইনিভাবে গাড়ি পার্কিং প্রভৃতি কারণে রাস্তা সংকুচিত হয়ে পড়ে । এসবও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ ।

এক জরিপে দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের শতকরা ৭৫ ভাগই কর্মক্ষম। এই বিপুলসংখ্যক কর্মক্ষম মানুষের নিহত হওয়ায় যে শূন্যস্থান সৃষ্টি হচ্ছে, তা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। আহতরা দুঃসহ জীবনযাপন করার পাশাপাশি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝায় পরিণত হচ্ছে। মানুষের অমূল্য প্রাণ ঝরে যাওয়া এবং রাষ্ট্রের এই ক্ষতি আর কতকাল আমাদের দেখতে হবে? একটি দুর্ঘটনা একটি পরিবারকে মুহূর্তে নিঃশেষ করে দেয়। এমন অসংখ্য নজির রয়েছে। 
সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যদি দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করে এবং এভাবেই চলতে থাকে, তবে সামনে আরো কত প্রাণ ঝরবে, তা কেউ বলতে পারবে না। এটা নিশ্চিত, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে যত বিলম্ব হবে, ততই প্রাণ ঝরবে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রীকে গুরুত্ব দিয়ে উপলব্ধি করতে হবে। সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে, বছরের পর বছর ধরে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে কঠোর পদক্ষেপ এবং তা যে কোনো উপায়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। মহাসড়কে ছোট যান চলাচলে জিরো টলারেন্স দেখানো, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালকের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে হবে। মহাসড়কে যেসব বিপজ্জনক বাঁক এবং ভাঙাচোরা রয়েছে, তা দ্রুত সংস্কার করতে হবে। যেভাবে সড়ক দুর্ঘটনার হার কমানো যায়, মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে সেই ব্যবস্থাই গ্রহণ করতে হবে।

উপরিউক্ত আলোচনা প্রেক্ষিতে বলা যায়, প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে ঝরে যায় কত প্রাণ। কত ঘরে জমে বুক চাপা কান্না। কত পরিবারের বেঁচে থাকার আলো যায় নিভে। স্বপ্ন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়, কিন্তু তবুও মানুষকে পথ চলতে হয়।  মানুষের পথ চলা যতদিন থাকবে দুর্ঘটনাও ততোদিন থাকবে। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের কার্যক্রম জোরদার না করলে এ নিঃশব্দ ঘাতকদের রোধ করা যাবে না।  তাই বাড়াতে হবে জনসচেতনতা ।  সচেতন হতে হবে যানবাহন চালক, হেলপার, যানবাহন মালিক, যাত্রী, পথচারী, ট্রাফিক পুলিশ সবাইকে । প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অকালে ঝরে যায় কত প্রাণ। 
প্রঙ্গুত্ব বরণ করে কেউ কেউ জীনন্নত হয়ে বেঁচে থাকে । হতাহতদের পরিবারে একদিকে জমে বুকচাপা কান্না, অন্যদিকে আইনগত বিচার চাইতে গিয়ে তাদের পড়তে হয় নানান জটিলতায়। আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই বলেই অপরাধ করেও দায়ী ব্যক্তিরা অবলীলায় পার পেয়ে যায়। তাই সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে হলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আইনের কার্যকর। আর এ দায়িত্ব নিতে হবে সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসনকে। সমস্যা নিরসনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সত্যিকারভাবে এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে। 


লেখকঃ প্রকাশক বাংলাদেশ জ্ঞান সৃজনশীল প্রকাশনা 

(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার  বাংলাভিশন নিবে না।)

মন্তব্য করুন: