• NEWS PORTAL

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

বঙ্গবন্ধু আমাদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা 

ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হাওলাদার

প্রকাশিত: ১২:০৬, ১০ জানুয়ারি ২০২৩

ফন্ট সাইজ
বঙ্গবন্ধু আমাদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা 

বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু সমার্থক হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের মহান বিজয়ও অসম্পূর্ণ মনে হয়েছে পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু অন্তরিন থাকার কারণে। যে প্রেক্ষাপটে বাঙালি জাতির জীবনে ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ ফেরার দিনটির তাৎপর্য আকাশছোঁয়া। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সেনারা গণহত্যা শুরু করলে সেই কঠিন পরিস্থিতিতে ২৬ মার্চের সূচনালগ্নে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

পাকিস্তানি দখলদারির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধেরও ডাক দেন তিনি। হানাদার বাহিনীর সদস্যরা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যায়। নির্জন কারাগারে প্রহসনের বিচারে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির নির্দেশও দেওয়া হয়। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির বিজয় অর্জিত হয়। বাংলাদেশ যখন আনন্দ-উল্লাসে উত্তাল, তখনো গোটা জাতি বঙ্গবন্ধুর জীবনের নিরাপত্তার ব্যাপারে উৎকণ্ঠিত, তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রতীক্ষায় অধীর। বিশ্বনেতারাও বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন।

বাহাত্তর সালের জানুয়ারির ১০ তারিখ বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে না আসা পর্যন্ত এ দেশের অগণিত মানুষ আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি রাওয়ালপিন্ডি থেকে পিআইএর একটি বিশেষ বিমান লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হয়। বঙ্গবন্ধুর নিরাপদে লন্ডনে পৌঁছার খবর পাওয়ার পর দেশের সর্বত্র আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তেজগাঁও বিমানবন্দরে নামে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আসা ব্রিটিশ বিমান। মুক্তিযুদ্ধের ২৫ দিন পর প্রকারান্তরে বাঙালি জাতি পরিপূর্ণ বিজয়ের স্বাদ অনুভব করে। 

স্বাধীনতার জন্য বাঙালির লড়াই দীর্ঘকালের। ব্রিটিশ শাসনের নাগপাশ থেকে মুক্তি পেতেও বহু মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। কিন্তু ব্রিটিশরা চলে গেলেও বাঙালি জাতির মুক্তি মেলেনি। ঘাড়ে চেপে বসে পাকিস্তানি শোষণ-শাসন। আবারও স্বাধীনতার স্থির লক্ষ্যে দেশের মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে। তাদের মনে স্বাধীনতার বীজমন্ত্র বুনতে হয়েছে। আর এই কাজটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ছিলেন সেই মহান পথপ্রদর্শক, যিনি জাতিকে একটি অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে নিয়েছিলেন। তাঁর নেতৃত্বগুণেই জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করে বেরিয়ে আসে।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক জনসভায় বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তাঁর সেই ডাকের অর্থ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল পুরো জাতির কাছে। যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল দেশব্যাপী। বাঙালির সেই প্রস্তুতি আঁচ করতে পেরেই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি শোষকরা। ২৫শে মার্চ রাতে নিরীহ নিরপরাধ ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর কামান-মেশিনগান নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনী।

২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাস ধরে চলে সেই যুদ্ধ। অবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে, বাঙালি বিজয়ী হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু থেকে যান পাকিস্তানের কারাগারে। বিজয়ের আনন্দ অপূর্ণ থেকে যায়। তাই যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে পাকিস্তানের কারাগার থেকে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় বঙ্গবন্ধুর জীবিত ফিরে আসার দিনটি হয়ে ওঠে আরেকটি বিজয়ের দিন। সাড়ে সাত কোটি বাঙালির হৃদয় সেদিন আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিল তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে কাছে পেয়ে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই নেতা, যিনি বাঙালির চোখে স্বাধীনতার স্বপ্ন এঁকে দিতে পেরেছিলেন। আর সেই স্বপ্নপূরণের জন্য জীবন বাজি রাখতেও তিনি দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছিলেন। আজ বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ভিন্ন এক তাৎপর্য বহন করছে। উদযাপিত হচ্ছে তাঁর জন্মশতবর্ষ। একই সঙ্গে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীও উদযাপন করছি। বঙ্গবন্ধু আমাদের মধ্যে না থাকলেও তাঁর নীতি ও আদর্শ আজও আমাদের কাছে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা হয়ে আছে। 

যত দিন বাংলাদেশ থাকবে সেই অনন্তকাল পর্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে বঙ্গবন্ধুর নাম। স্বাধীনতার জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন বলেই বাঙালির পক্ষে স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ সম্ভব হয়েছে। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে জাতির পিতার প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা।

লেখক: ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তা, চেয়ারম্যান বিবিএস গ্রুপ।

বিভি/এনএ

মন্তব্য করুন: