• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে আসা ফিনিক্স বিরাট কোহলি

মনজুরুল হক

প্রকাশিত: ১৩:০২, ১৬ জানুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ১৩:২২, ১৬ জানুয়ারি ২০২৩

ফন্ট সাইজ
ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে আসা ফিনিক্স বিরাট কোহলি

সংগৃহীত ছবি

অনেকে যখন যবনিকা পড়তে যাচ্ছে বলে অবিচ্যুয়ারি লিখতে বসেছেন তখনই টি-২০তে সেঞ্চুরি করে প্রবলভাবে ফিরে আসলেন। সদ্য শেষ হওয়া টি-২০ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলে দিলেন এক নেইল বাইটিং এপিক! সেই ৮২ রান এক জোড়া সেঞ্চুরির পাশেও উজ্জ্বল থাকবে ইতিহাসে। বিশ্বকাপের পরে ছোট ফর্মেটে বিরতী। ওডিআই শুরু হতেই আবার আগের সেই খুনে ফর্মে। কিছুদিন আগে ওয়াসিম জাফর বলেছিলেন—'আহত সিংহ রক্তের স্বাদ পেয়েছে, এবার ওর ‘শিকার’ চলতে থাকবে…’ জাফর ঠিক ছিলেন। বিরাট শেষ চার ম্যাচে তিনটি সেঞ্চুরি করলেন। সর্বশেষ ১৫ জানুয়ারি তিরুঅন্তপুরমে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। একটা চান্সলেস নিখুঁত এপিক ইনিংস। ১১০বলে ১৬৬রানে অপরাজিত ১৩টি চার ৮টি ছয় স্ট্রাইকরেট১৫০.৯!

এখন বিরাটরা শুধু ফাস্ট বোলার মোকাবেলা করে না, একই সঙ্গে টেকনোলজিকেও ফেস করতে হয়

বিরাটের ভক্তরা তাকে শচীনের সঙ্গে তুলনা করেন। সেটা দেখে শচীন ভক্তরা বলেন—‘ধীরে বৎস, আভি তাক দিল্লি বহোৎ দূর হ্যায়’। কোনো পক্ষই ভুল বলেন না। আপনি শচীনের সঙ্গে এক অর্থে কারো তুলনা করতে পারেন না। শচীন একজনই হয়। ঝাঁকে ঝাঁকে জন্মায় না। ১৬ বছর বয়সে শিয়ালকোটে ডেব্যু টেস্টে ওয়াকারের বাউন্সারে নাক ফেটে যাওয়ার ১৫/২০ মিনিটের মধ্যে ফের মাঠে নেমে একটা ফিফটি মেরে আসেন।

আপনি বলতেই পারেন—শচীন যেসব দুর্দান্ত বোলারদের ফেস করেছেন এখনকার দিনে তেমন বোলার কই? কার্টলি অ্যামব্রোস, ম্যাকগ্রা, ওয়াসিম-ওয়াকার-আকিব, ডোনাল্ড, এন্ডারসন, রিচার্ড হ্যাডলি, ম্যাকডরমেট কই তারা? তার মানে কী? বিরাট যাদের খেলছেন তারা সেই মাপের বোলার নন? হয়ত না। তবে যে বিষয়টা আপনাকে মাথায় রাখতে হবে তা হলো; আগেকার বোলাররা নিঃসন্দেহে সেরা ছিলো। তারা অনেকটাই বাধাহীন বল করত। এখনকার মত এত এমবার্গো ছিলো না। সব ঠিক আছে। এবার ভাবুন তো; এখন প্রত্যেক টিমে একাধিক ভিডিও এনালাইজার আছে। তারা ব্যাটসম্যানের প্রত্যেকটা মুভমেন্ট, দুর্বলতা টুকে নিয়ে অ্যাভারেজ করে বোলারকে সেভাবে টিপস দেয়। এখনকার যে কোনো ফাস্ট বোলার জানে বিরাটের উইকনেস কোথায়? তাই এখন বিরাটরা শুধু ফাস্ট বোলার মোকাবেলা করে না, একই সঙ্গে টেকনোলজিকেও ফেস করতে হয়। এখনকার ব্যাটরদের ‘পেস অফ’, ‘নাকল বল’, ‘স্লোয়ার’ ফেস করতে হয়।

যা হোক, বিরাট শচীনের ১০০ সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙতে পারবেন কি পারবেন না সেটা পরের বিষয়। আপাতত যে পরিসংখ্যানটি সামনে আসে তাতে কিন্তু বিরাট এগিয়ে! শচীন ৪৯ সেঞ্চুরি করতে যে কয়টি ইনিংস খেলেছেন ৪৬টি সেঞ্চুরি করতে বিরাট শচীনের চেয়ে ১৭২ ইনিংস কম খেলেছে! বিরাটের ৪৬ সেঞ্চুরি এসেছে ২৫৯ ইনিংসে। শচীন ৭৯ ম্যাচের পর থেকে ওপেন করতেন। কালে-ভদ্রে ৩ নম্বরে। অর্থাৎ শচীন বেশি বল খেলার সুযোগ পেয়েছে। বিরাট খেলেন ৩ নম্বরে। কখনও ৪ বা ৫ নম্বরেও। তার পরও মাত্র ২৫৯ ইনিংসে তার সেঞ্চুরি ৪৬, রানে হয়ত এখনও অনেক পিছিয়ে, কিন্তু এই ১৫ জানুয়ারি করে নিলেন অনেকগুলো রেকর্ড। থাকুক সেসব। ক্রিকেটে রেকর্ড হয়ই ভাঙার জন্য। তার পরও শচীনের ১৫টি কীর্তি কেউ ভাঙতে পারবে না। তা সে বিরাট যত ‘বিরাট’ই হোন না কেন। 

ক্রিকেটে সুপারস্টেশন অনেকেই বিশ্বাস করেন। বিরাট অভিমানী বলে হয়ত অনেক কিছু হাতছাড়াও করেছেন। এই যেমন টি-২০ অধিনায়কত্ব থেকে স্বেচ্ছায় সরে আসা। রেজাল্ট কী হলো? তাকে তিন ফর্মেটের অধিনায়কত্ব থেকেই সরিয়ে দেয়া হলো। এখন টি-২০ টিমেই রাখল না। সে কারণে ৩৪ বছরেও দুর্দান্ত ফিটনেস ধরে রাখার পরও শচীনের মত ৪৬৩ ম্যাচ খেলতে পারলে বিরাট কোথায় গিয়ে থামবেন তার খতিয়ান এখনই বলে দেওয়ার সময় আসেনি।

১৫ জানুয়ারি, ২০২৩

মন্তব্য করুন: