জেটি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের চিত্র প্রদর্শনী ‘ব্লসমস অব এক্সিসটেন্স’ শুরু
জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক সংযোগ তুলে ধরতে জেটি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (জেটিআইবি) ‘ব্লসমস অব এক্সিসটেন্স’ শীর্ষক একটি চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের গুণী শিল্পী রোকেয়া সুলতানা ও মাকসুদা ইকবাল নিপা’র চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। এই দুই শিল্পী জাপানি সংস্কৃতি, দর্শন ও শৈল্পিক কৌশল থেকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত। দুই দেশের মানুষের মধ্যকার সম্প্রীতি বৃদ্ধির লক্ষে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৯ মে) বাংলাদেশে অবস্থিত জাপান দূতাবাসে ‘ব্লসমস অব এক্সিসটেন্স’ শীর্ষক প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এমপি এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের এক্সট্রাঅর্ডিনারি অ্যান্ড প্লেনিপোটেনশিয়ারি অ্যাম্বাসেডর ইওয়ামা কিমিনোরি। এছাড়া, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরকারি উচ্চ পদস্থকর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, শিল্পী, গণমাধ্যম প্রতিনিধি ও বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় সালমান এফ রহমান বলেন, “এই প্রদর্শনী বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার বন্ধুতপূর্ণ সম্পর্ক ও সাংস্কৃতিক মেল-বন্ধনের প্রতিফলন। বাংলাদেশের প্রয়োজনে জাপান সবসময়ই পাশে ছিল এবং শিল্প ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নমূলক সহায়তা করেছে। এমন ভিন্নধর্মী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য জেটি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশকে আমি সাধুবাদ জানাই এবং এর মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আমি আশাবাদী।”
ইওয়ামা কিমিনোরি বলেন, “জাপান-বাংলাদেশের মধ্যকার সাংস্কৃতিক বিনিময় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে ভীষণ কার্যকরী হাতিয়ার হবে বলে আমার বিশ্বাস। এই প্রদর্শনী শৈল্পিক প্রতিভা প্রদর্শনের পাশাপাশি পারস্পরিক সহযোগিতাকে সুদৃঢ় করবে।”
জেটিআইবি-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর পল হলোওয়ে বলেন, “আমরা ২০১৮ সাল থেকে জাপানি সংস্কৃতি দ্বারা অনুপ্রাণিত বাংলাদেশি শিল্পীদের তুলে ধরছি। ২০২২ সাল থেকে শিল্প প্রদর্শনীর মাধ্যমে তাদের প্রতিভা প্রদর্শনে ও জাপানি ভাষা শিখতেও আমরা সহায়তা করছি। বাংলাদেশে জাপানি সংস্কৃতি বিকাশে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
‘ব্লসমস অব এক্সিসটেন্স’ প্রদর্শনীর লক্ষ্য একটি মানসম্মত ও উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবনযাপনে মানুষকে অনুপ্রাণিত করা। এখানে শিল্পীরা উভয় দেশের সংস্কৃতি, দর্শন ও আধ্যাত্মিকতার সামঞ্জস্য তুলে ধরেছেন। দুই শিল্পীরা আঁকা সেরা কিছু চিত্রকর্ম জেটিআইবি-এর শিল্প সংগ্রহশালায়র জায়গা করে নিয়েছে।
রোকেয়া সুলতানা একজন পুরস্কার বিজয়ী শিল্পী এবং বিশ্বব্যাপি খ্যাতিসম্পন্ন প্রিন্টমেকার ও চিত্রশিল্পী। ফুলব্রাইট স্কলারশিপ ও এশিয়ান আর্ট বাইনিয়াল অ্যাওয়ার্ড-প্রাপ্ত তিনিই প্রথম নারী শিল্পী। টোকিও ইন্টারন্যাশনাল মিনি-প্রিন্ট ট্রাইনিয়াল; তোশা-ওয়াশি আন্তর্জাতিক কমিটি, জাপান; সেন্টার পয়েন্ট গ্যালারি; আর্ট এরিনা, টোকিও; দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডে প্রিন্ট এক্সিবিশন, কানাগাওয়া, জাপান সহ পোল্যান্ড, জার্মানি, মিশর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বব্যাপি বিভিন্ন প্রদর্শনীতে রোকেয়া সুলতানার শিল্পকর্ম প্রদর্শন করা হয়েছে। তাঁর প্রতিটি অঙ্কনে সরল ও সাদামাটা দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে ওঠে।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শিল্পী মাকসুদা নিপা তাঁর বিখ্যাত তৈলচিত্রের জন্য ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক শিল্প প্রদর্শনীতে বেস্ট অ্যাওয়ার্ড এবং ২০০২ সালে জাপানের কিয়োটোতে ‘আমানো হাশি ডেট আর্ট অ্যান্ড ক্রাফট ফেয়ার’-এ ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেন্ডশিপ অ্যাওয়ার্ডসহ অসংখ্য পুরস্কার ও অনুদান পেয়েছেন। তিনি ক্যান্ডিনস্কি এবং মন্ড্রিয়ানের মতো ব্যক্তিদের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজ ক্যারিয়ারে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। মাকসুদা নিপা ২০০২ সালে জাপানের আইচি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে, গ্যালারি এপিএ এবং হারুহি মিউজিয়াম অব আর্ট তাঁর একক প্রদর্শনী আয়োজনের সুযোগ করে দেয়।
‘ব্লসমস অব এক্সিসটেন্স’ প্রদর্শনীটি আগামী ১০ মে থেকে ১৬ মে পর্যন্ত বারিধারার দূতাবাস রোডে অবস্থিত জাপান দূতাবাসে (অ্যানেক্স বিল্ডিং) সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা (শুক্র ও শনিবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা) পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। প্রবেশকালে দর্শকদের অবশ্যই নিজেদের একটি ছবিসহ পরিচয়পত্র সাথে রাখতে হবে।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: