জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান স্থপতি তারেক রহমান: ড. মোর্শেদ হাসান

জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যেখানে দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের পক্ষে ছাত্র-জনতা দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। এই আন্দোলনে শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তারা সোচ্চার ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে, সংগঠিত হয়েছিলেন মানববন্ধন, প্রতিবাদ ও সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে।
অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকাও শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিয়েছেন, নৈতিক শক্তি জুগিয়েছেন, এবং গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে পাশে থেকেছেন। একটি কথা অনস্বীকার্য যে, জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান স্থপতি হচ্ছেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যিনি হাজার মাইল দূরে থেকেও সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে আন্দোলনকে গতিশীল করেছিলেন। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, নেতৃত্ব মানে দূরত্ব নয়, নেতৃত্ব মানে জনতার হৃদয় জয় করা।
শনিবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে গণঅভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবদান স্মরণে ছাত্রদলের স্মরণসভায় এ কথা বলেন জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটির সদস্য সচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে গত বছরের ১৭ জুলাই মধ্যরাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। অনেকে উপায় না পেয়ে হল ছেড়ে ঘরে ফিরে যান। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা অনেক শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ফলে আন্দোলন স্তিমিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
তবে ১৮ জুলাই ‘কমপ্লিট শাটডাউনে’ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যাপক প্রতিরোধে বিপরীত চিত্র তৈরি হয়। বিক্ষোভ দমাতে সেদিনও বিভিন্ন স্থানে প্রস্তুত ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরাও ছিলেন সশস্ত্র অবস্থানে। তবে সব উপক্ষো করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর রাজপথ দখলে নেন তারা। ঝিমিয়ে পড়ার শঙ্কায় থাকা আন্দোলনে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটে। পরে জুলাই আন্দোলনের বড় শক্তি হয়ে দাঁড়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। জুলাই আন্দোলনে তাদের সক্রিয় ও জোরালো ভূমিকা থাকার পরও তারা উপেক্ষিতই রয়ে গেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কোনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তারা মনে করেন, রাষ্ট্রীয় কোনো কাজে তাদের যুক্ত না করার বিষয়টি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩ জন এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ শিক্ষার্থীর নিহতের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৮ জুলাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনা সারা দেশেই আলোড়ন তোলে। এর জেরে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ জনতাও আন্দোলনে যুক্ত হয়। এদিন ঢাকাসহ সারাদেশে পুলিশের গুলিতে অন্তত ২৭জন শহীদ হন এবং আহত হন সহস্রাধিক। কষ্টদায়ক হলো একদিনেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ জন শিক্ষার্থী মারা গেছেন। ৫ আগস্ট পর্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে আন্দোলন চালিয়ে যান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে যেই তিনজন শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি ছিলেন, তাদের মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ নেই। এমনকি সরকারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরেও আমাদের কাউকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আসলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই গণঅভ্যুত্থানে সংগ্রাম করে কোনো স্বার্থ ছাড়াই ক্লাসে ফিরে গিয়েছেন।
তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের দেখিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় যেমন জ্ঞানের আলো ছড়ায়, তেমনি তা সামাজিক পরিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তিও। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের এই ভূমিকা ভবিষ্যতের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
পরে তিনি কয়েকটি বিষয়ে দিকনির্দেনা দেন-
> মানসম্পন্ন শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠন করা। কারণ ইউজিসির মাত্রক একজন সদস্য দিয়ে শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
> শিক্ষা ব্যবস্থায় ত্রুটি সমাধানের জন্য অতিদ্রুত শিক্ষার সংস্কার কমিশন গঠন করা দরকার।
> বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্পমূল্যে আবাসিক হল এবং পরিবহণ ব্যবস্থা করা। দরিদ্র-মেধাবীদের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করা।
> মানহীন ভুঁইফোড় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যাতে শিক্ষার নামে শুধু সার্টিফিকেট বাণিজ্য করতে না পারে সেটি নিশ্চিত করা।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: