বাজেট অধিবেশনকে বিএনপি অধিবেশন আখ্যা দিলেন রুমিন ফারহানা
ছবি: সংগৃহীত।
বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেছেন, ‘প্রথমেই আমি পাকিস্তানি কলামিস্ট মালিকা ইয়াবেদাকে ধন্যবাদ দিতে চাই। তিনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একটি কলাম লিখেছিলেন বলে আওয়ামী লীগের সমস্ত মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের নেতারা পদ্মা সেতু নিয়ে গর্ব করতে পারছে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের আঙ্গিকে। এই বাজেট অধিবেশনে যদি ১০ শতাংশ সময় ব্যয় করা হয় বাজেট নিয়ে তবে ৯০ শতাংশ সময় ব্যয় করা হয়েছে পদ্মা সেতু নিয়ে আলোচনায়, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে আলোচনায় এবং বিএনপির সমালোচনায়। সুতরাং এই অধিবেশনটিকে বাজেট অধিবেশন না বলে আমরা পদ্মা অধিবেশন বা বিএনপি অধিবেশনও বলতে পারি।’
বুধবার (২৯ জুন) সংসদে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সামষ্টিক যে সমস্যা তা হচ্ছে- চরম মূল্যস্ফীতি, আমদানি-রফতানিতে ভারসাম্যহীনতা, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আশঙ্কাজনকভাবে কমতে থাকা, বিনিয়োগ স্থবির থাকা, কর্মসংস্থানের চরম সংকট ইত্যাদি। এর কোনোটির ব্যাপারেই কোনো সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা এই বাজেটে আমরা পাইনি।’
রুমিন ফারহানা বলেন, ‘করোনায় দুই কোটির বেশি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে গেছে। তার সঙ্গে সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতি যুক্ত হয়ে আরো অসংখ্য মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে গেছে। যার কোনো সঠিক হিসাব এই সরকারের কাছে নেই। যেই কারণে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে না বেড়েছে ভাতার পরিমাণ, না বেড়েছে ভাতা ভোগীর পরিমাণ। উল্টো দিকে বাজেটে জিডিপির অনুপাতে স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার মতো অতিজরুরী খাতে বরাদ্দ বছরের চাইতে জিডিপির অনুপাতে কমেছে। এবারে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ জিডিপির হার দশকিম আট শতাংশের সামান্য বেশি আর শিক্ষায় জিডিটির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
এই বাজেটে এবার যুক্ত হয়েছে অদ্ভুত বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবসময় কালো টাকা সাদা করা নিয়ে অর্থমন্ত্রীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। এবার আর অর্থমন্ত্রী সেই পথে হাটেননি। তিনি টাকা পাচারকেই বৈধতা দান করেছেন। তিনি এমন ব্যবস্থা করেছেন যাতে লুটপাটের টাকা বিদেশে পাচার করে ৭ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ হারে কর দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলা যায়। তিনি বলতে চান এইভাবে পাচার হওয়া টাকা নাকি দেশে ফিরবে। লুটপাট করে বিদেশে যারা টাকা পাচার করে তারা তো আর দেশে ফেরানোর জন্য টাকা পাচার করে না। বরং পরবর্তীতে যদি কোনো সরকার কোনো দেশে এই ধরণের ব্যক্তিদের ধরবার চেষ্টা করে। তখন তারা নিরাপদে এই টাকা আবার ফিরিয়ে আনতে পারবে। বলাই বাহুল্য যে, এটা পাচারকারীদের নিশ্চিন্ত করবার জন্যই এই পদক্ষেপ এবং এটি পাচারকে আরও বেশি উৎসাহী করবে।
তিনি বলেন, বাৎসরিক আয়ের কর দেওয়ার হার মুক্ত সীমা তিন লক্ষ টাকার চেয়ে বাড়ানোর উচিত ছিলো আরো অনেক আগেই। অথচ এই সীমা তো বাড়ানো হয়-ই নাই। মূল্যস্ফীতি বিবেচনা করলেও কিন্তু এই সীমা তিন লক্ষের উপরে যায়। এখন মাসে মাত্র ২৫ হাজার টাকা উপার্জন যে ব্যক্তি করে তাকেই কর সীমার আওতায় আনা হয়েছে। অথচ কিছুদিন আগেই সিপিডি হিসাব করে দেখিয়েছিল প্রয়োজন মত মাছ এবং মাংসের দাম হিসাব করলে চার সদস্যের এক পরিবাবে মাসে শুধু খাদ্য বাবদ ব্যয় হয় ২১ হাজার ৩৫৮ টাকা। সেই সঙ্গে বাসা ভাড়া, সন্তানের শিক্ষা, পরিবারের স্বাস্থ্য ব্যয় যোগ করলে সংখ্যাটি যে কত দাড়ায় সেটা তো সহজেই অনুমীয়।
করজাল বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, যাদের টিন নাম্বার আছে তাদেরকেই শুধু করে আওতায় আনা হয়। যাদের টিন নাম্বার নেই, কর দেওয়ার মতো আয় করা সত্ত্বেও একটি পয়সাও তারা সরকারকে দেয় না। সুতরাং করজাল বাড়ানো ব্যাপারে মাননীয় অর্থমন্ত্রী কি ভাবছেন এবং কি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে আমরা জানতে চাই।
বিভি/এইচকে/এনএ
মন্তব্য করুন: