• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

মুন্সীগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ: মামলার আসামি মৃত ও প্রবাসীরা

সোনিয়া হাবিব লাবনী

প্রকাশিত: ১৫:৫০, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

আপডেট: ১৯:৩৭, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ: মামলার আসামি মৃত ও প্রবাসীরা

মুন্সীগঞ্জ বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথি বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, বিশেষ অতিথি দলটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটুসহ ১৩৬৫ জনকে আসামী করে মামলা দিয়েছে পুলিশ। মামলায় প্রবাসী, মৃত ব্যক্তি, আওয়ামীলীগের ঘনিষ্ঠজনসহ বিএনপির রাজনীতি করে না এমন অনেকের নাম রয়েছে। এজাহারে তাদের ২ ও ৩ নং আসামী করা হয় আবদুস সালাম আজাদ ও বেনজির আহমেদ টিটুকে। তাদের বিরুদ্ধে  ইটপাটকেল, ককটেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোটা নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মিনহাজ উল ইসলামের মাথার বাম পাশে গুরুতর জখম করার অভিযোগ আনেন মামলার বাদী এসআই মাইন উদ্দিন। সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত যুবদলকর্মী মোহাম্মদ শাওন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এছাড়াও আহত হয়েছে শতাধিক নেতাকর্মী।

এদিকে, মামলার আসামী হয়ে গ্রেফতার আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে হাজারও বিএনপি নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে অধিকাংশ নেতাকর্মীর জানেনই না তাদের বিরুদ্ধে আদৌও মামলা হয়েছে কিনা! পুলিশের এজাহার নিয়ে লুকোচুরির কারণে বিএনপি নেতাকর্মীদের মনে গ্রেফতার আতঙ্কটা আরো বেড়ে যায়। যদিও পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে দুই মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৩৬৫ জনকে। এজাহারে নাম না থাকায় অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসলেও গ্রেফতার এড়াতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন। তাদের ধারণ, এজাহারের নাম না থাকলেও গ্রেফতার করে অজ্ঞাতদের তালিকায় গ্রেফতার দেখাবে পুলিশ।
 
মামলা দুটি নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের পাশাপাশি হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। এজাহারে এমন অনেকের নাম এসেছে তারা সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়াতো দূরের কথা সমাবেশেই আসেননি। পিতার নামের পাশাপাশি প্রাপ্ত বয়স্ক সবকটি ছেলের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। এছাড়া এমন কয়েকজনের নাম এসেছে যারা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নেই, এমনকি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সখ্যতার পাশাপাশি প্রশাসনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খুব কাছেরজন হিসেবে সুবিধাও নিয়ে আসছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একটি সূত্র জানায, রাতারাতি রাজনীতিবিদ হতে অনেকে মামলার এজাহারে নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অনুরোধও করে।

এদিকে বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের মামলায় নাম রয়েছে অধুনালুপ্ত মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাচ্চু’র। যদিও তিনি গত ১৯ মার্চ মারা যান। তিনি মারা যাওয়ার ছয় মাস পর গত ২১ সেপ্টেম্বর মুন্সীগঞ্জে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনা মামলায় ২৫৫নং আসামি করে তার বিরুদ্ধেও মামলা দেয় পুলিশ।

এ ব্যাপারে তার ছেলে ফখরুল ইসলাম আপেলক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আমার বাবার মৃত্যু পর আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে, এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে!

তিনি আরো জানান, বাবা জীবদ্দশায় সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন, মামলা খেয়েছেন কষ্ট পাইনি, এ সরকার এতটা বেসামাল হয়ে পড়েছে যে, মামলা দিতে গিয়ে মৃত ব্যক্তিকেও আসামি করতে হয়েছে।

অপর দিকে টঙ্গীবাড়ী থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ২৬০নং আসামি খান মনিরুল মনি পল্টন, সে ব্যবসায়িক কাজে জাপানে অবস্থান করছেন। এ ছাড়া ৫২নং আসামি আব্দুস সালাম মিজি, ১২২ নং আব্বাস আলী, ১৮৮ নং মো.আালামিন চুন্নু সমাবেশস্থলে ছিলেন না।

মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনা ও মামলার ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ সদর থানা বিএনপি'র আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, ‘বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে গুলি করার দৃশ্য বলে দেয় বিএনপি নয় একটি বিশেষ মহল এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায়। বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িছাড়া এবং এলাকাছাড়া করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই হামলা এবং মামলার ঘটনা ঘটায়। মামলার এজাহারে এমন অনেক নেতাকর্মীর নাম রয়েছে যাদের মধ্যে অনেকে দেশে নেই, মৃত্যুবরণ করেছে এমনকি সমাবেশেও আসেনি। সমাবেশটি ছিলো সদর থানা, মিরকাদিম ও মুন্সীগঞ্জ পৌর বিএনপি শাখার উদ্যোগে। সমাবেশে অন্য কোন উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা আসেনি, অথচ উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতার নাম রয়েছে মামলায়। এতেই বোঝা যায় প্রশাসন আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামে বিএনপি মাঠে থাকতে না পারে সেজন্য এ মামলা করেছে।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটু, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতন অতিথি হিসেবে আমাদের সমাবেশে এসেছে, তারা সমাবেশে যোগ দেওয়ার সুযোগই পায়নি অথচ তাদের আসামি করে মামলা দেওয়া হয়েছে। দেশে আজ গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে প্রশাসন এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটাতে পারতো না।

এবিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে সভার প্রথম থেকেই পুলিশের ভূমিকা ভালো মনে হয়নি। এরপরও নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিল। পুলিশের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা সভা শুরু করার আগেই তারা আমাদের মিছিল থেকে ব্যানার ছিনিয়ে নেয় এবং লাঠিচার্জ করে নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মামলার ধরন দেখে বোঝা যায়, বিএনপি নেতাকর্মীদের এলাকা ও বাড়ি ছাড়া করার জন্যই উদ্দেশ্যমূলক ভাবে এই হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এতে বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী জড়িত নয়।

তিনি বলেন, ‘একটি বিশেষ মহল এই হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে মামলা না নিয়ে বিএনপি'র নেতাকর্মীদের নাম ধরে ধরে মামলা নেয়া হয়েছে। একদিকে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, দমননীতি চালাবেন, অন্য দিকে পুলিশের আচরণে মনে হয় দেশটাকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে গণতন্ত্রের পথ বন্ধ করে এক দলীয় শাসন কায়েম করে দেশ বিরোধী বাকশালের পথে হাটছেন। তিনি বলেন, দেশে আজ গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে প্রশাসন এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটাতে পারতোনা।

উল্লেখ্য, মুন্সীগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠ মুক্তারপুরে বিএনপির মিছিলে বাধা দেয়া নিয়ে বুধবার পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের মুহুর্মুহু শটগানের গুলি ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ এবং বিএনপি'র নেতাকর্মীদের বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপে মুক্তারপুর পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। আহতদের মধ্যে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে একজনসহ আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে ঢাকা মেডিকেলে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিনহাজ উল ইসলাম, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারিকুজ্জামানসহ ২৫ পুলিশ সদস্য ও চার সাংবাদিক আহত হয়েছেন।

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন: