• NEWS PORTAL

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

জয়-লেখকের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

প্রকাশিত: ১৬:০৫, ৬ ডিসেম্বর ২০২২

আপডেট: ১০:৫৫, ৭ ডিসেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
জয়-লেখকের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

সংগৃহীত ছবি

ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০১৮ সালের মে মাসে। একই বছরের ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরীকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
উন্নয়ন প্রকল্প থেকে চাঁদা দাবিসহ নানা অভিযোগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে রেজওয়ানুল ও রাব্বানীকে পদচ্যুত করা হয়। বিশেষ পরিস্থিতিতে কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নাহিয়ানকে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও লেখককে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। 


২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে নাহিয়ান ও লেখককে ‘ভারমুক্ত’ করে দেন সাংগঠনিক অভিভাবক আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর গত প্রায় তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছেন এই জুটি। এ সময় টাকার বিনিময়ে নেতা বানানো, সম্মেলন না করে রাজধানী থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিভিন্ন জেলা কমিটি গঠনসহ নানা অভিযোগে উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। নিয়মবহির্ভূত ‘চিঠি’র মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় নেতা বানানোর অভিযোগও আছে। 

এসব অভিযোগ মাথায় নিয়েই মঙ্গলবার ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে বিদায় নিতে যাচ্ছেন নাহিয়ান ও লেখক। এবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ২৫৪ জন। তাঁদের মধ্যে ৯৬ জন সভাপতি ও ১৫৮ জন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী।

নাহিয়ান-লেখকের সময়কালে ছাত্রলীগকে করোনা মহামারি, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে ত্রাণসহায়তা নিয়ে অসহায়-সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেছে। তবে নেতৃত্বে আসার পর থেকেই নাহিয়ান ও লেখক বিলাসবহুল জীবনযাপন শুরু করেন বলে অভিযোগ তাদের সংগঠনেরই একাংশের। নাহিয়ান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছেড়ে নিউমার্কেট এলাকার একটি ফ্ল্যাটে পরিবারসহ ওঠেন। লেখক জগন্নাথ হল ছেড়ে ওঠেন ইস্কাটন গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে। দুটিই অভিজাত ও ব্যয়বহুল ফ্ল্যাট। এ ছাড়া তাঁরা একাধিক দামি গাড়ি ব্যবহার শুরু করেন।

এছাড়া নাহিয়ান-লেখকের বিরুদ্ধে সংগঠনের জেলা মর্যাদার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি গঠনে ব্যর্থতা, নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখা, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে না যাওয়া, সাংগঠনিক দায়িত্ব বণ্টনে বিলম্বসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। কমিটি বাণিজ্য, সম্মেলন ছাড়া ঢাকায় বসে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে একের পর এক জেলা কমিটি গঠন, আওয়ামী লীগের বিপরীত আদর্শের ব্যক্তিদের দিয়ে বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাধারণ সভা না ডাকা ইত্যাদি।

টাকার বিনিময়ে নাহিয়ান ও লেখকের কমিটি গঠনের অভিযোগ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। একটি জেলা ইউনিটের এক প্রার্থীর কাছ থেকে লেখকের ঘনিষ্ঠ এক নেতার টাকা চাওয়ার অডিও রেকর্ড সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। টাকার বিনিময়ে কমিটি গঠনের অভিযোগে সিলেট ও ঠাকুরগাঁও জেলায় বিক্ষোভের ঘটনা গণমাধ্যমে আলোচিত হয়। সম্মেলন ছাড়াই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পর বিক্ষোভ হয়। বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে জেলা কমিটি গঠনের অভিযোগে বিক্ষোভ হয় কক্সবাজারে। 

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ বিভিন্ন সময়ে বলেছে, সংগঠনে ‘চেইন অব কমান্ড’ প্রতিষ্ঠায় পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন নাহিয়ান ও লেখক। এর ফলাফল হিসেবে গত এপ্রিলে ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী-কর্মচারী-হকারদের সংঘর্ষের ঘটনা তাঁরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। এই সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুতে নাহিয়ান ও লেখকের তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ দুই বছর। কিন্তু এই কমিটি প্রায় তিন বছরে গড়িয়েছে। গঠনতন্ত্রে বিশেষ বা জরুরি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বর্ধিত সভায় অনুমোদন সাপেক্ষে কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকাল তিন মাস বাড়ানোর সুযোগ আছে। তবে নাহিয়ান-লেখক তেমন কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করা ছাড়াই দায়িত্ব পালন করে যান।

মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সম্মেলন আয়োজন নিয়ে নাহিয়ান-লেখকের কোনো আগ্রহ ছিল না। সম্মেলন ঠেকাতে দুজনের নানা তৎপরতা ছিল বলেও অভিযোগ ওঠে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পর তাঁরা সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করতে বাধ্য হন।

অবশ্য ২১ নভেম্বর মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন নাহিয়ান ও লেখক। তাঁরা বলেন, বিভিন্ন সময় যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেগুলো পুরোপুরি মিথ্যা। তাঁরা ৭৯টি ইউনিট কমিটি করেছেন। অর্থের বিনিময়ে তাঁরা কোনো কমিটি করেননি। আলোচিত সবগুলো অভিযোগগুলোর বাংলাভিশনের কাছে আস্বিকার করেছেন আল নাহিয়ান খান জয়। তবে এবিষয়ে লেখকের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।


ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে ‘চিঠির’ মাধ্যমে নেতা বানানোর কোনো বিধান নেই। ৩১ জুলাই মধ্যরাতে দুই শতাধিক ব্যক্তিকে ‘চিঠির’ মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতা বানান নাহিয়ান ও লেখক। 'চিঠির’ মাধ্যমে এভাবে নেতা বানানো নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা-হাস্যরসও হয়েছে। এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার ব্যক্তিকে চিঠির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতা বানানো হয়েছে বলে ছাত্রলীগের সূত্রগুলো জানিয়েছে।

চিঠির মাধ্যমে ‘গণহারে’ পদ দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগের দুই সহসভাপতি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই দুই নেতা বলেন, অর্থের বিনিময়ে অনেককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কারও কাছে কোনো জবাবদিহি না করে সম্পূর্ণ একক সিদ্ধান্তে কোনো বাছবিচার ছাড়াই চিঠি বিতরণ করেছেন নাহিয়ান ও লেখক। ছিনতাইকারী, মাদকসেবী এবং আওয়ামী লীগের বিপরীত মতাদর্শের পরিবার থেকে আসা ব্যক্তিরাও চিঠির মাধ্যমে পদ পেয়েছেন।

 এদিকে, ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনের দিন পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) ছাত্রলীগের প্রথম অধিবেশন শেষে তিনি এ কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, দ্বিতীয় অধিবেশন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা নাম প্রস্তাব করবেন। প্রস্তাবিত সেই তালিকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হবে। সেই তালিকা থেকে আগামী ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগেই চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন দলিয় সভানেত্রী।

মন্তব্য করুন: