• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

সৌরবিদ্যুতের আলো বদলে দিয়েছে জেলেদের জীবন

বোরহান উদ্দিন সবুজ, হাতিয়া

প্রকাশিত: ১৪:০৬, ৪ ডিসেম্বর ২০২২

আপডেট: ০১:৩৮, ৫ ডিসেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
সৌরবিদ্যুতের আলো বদলে দিয়েছে জেলেদের জীবন

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার শুন্যচরের তেলাপিয়া মার্কেটের বাসিন্দা মাঝি আবুলহাসেম মিয়া (৫০) । খুবই অল্প বয়স থেকে তিনি বাবার সঙ্গে নদী ও সাগরে মাছ শিকার শুরু করেন। মেঘনা নদী ও সাগরে শৈশবে-কৈশোরে বাবার সঙ্গে হাজারো স্মৃতি। জীবনের অনেক সময় কুপিবাতি , বোম্বা বাতি সাথে হারিকেল জ্বালিয়ে নদীতে মাছ ধরতে হয়েছে তাকে। 

 

দূর থেকে বড় ট্রলার ও জাহাজের ধাক্কার ভয় থাকতো মনে। তাদের দেওয়া যেত না কোনো সিগনাল। দুর্যোগে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ ছিল না। মোবাইল নিলেও দু-একদিনের মধ্যে চার্জ শেষ হলে বন্ধ হয়ে যেত। দূর সাগরে গেলেও পরিবারের জন্য দুশ্চিন্তা হতো। এখন নদী-সাগরে মাছ ধরতে গেলে তেমন একটা চিন্তা করতে হয় না। যেকোনো সময় মোবাইলে চার্জ দিতে পারেন, মাঝ নদী বা সাগরে নৌকায় বসেই। মুহূর্তেই বাড়িতেও যোগাযোগ করতে পারেন। নৌকায় থাকার সময়ও অন্ধকারের ভয় নেই। সৌর প্যানেল, ব্যাটারি, চার্জার, চার্জ কন্ট্রোলার, ফিশিং লাইট, জব লাইট, ওয়াচ লাইট ও সাধারণ বাতি সবই রয়েছে শরিফ মাঝির নৌকায়।

মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়া, অন্য নৌযানের সাথে নিজেদের নৌযানের সংঘর্ষ এড়াতে নৌকাতে নিশানা বাতি, ভেতরের আলো এবং সংকেত বাতি ইত্যাদি সব কাজেই এখন মাঝিরা সৌর বিদ্যুৎ ও আধুনিক ইলেকট্রিক পণ্য ব্যবহার করেন।
শুধু মাঝি আবুল হোসেন মিয়া নয়, হাতিয়ার প্রায় লক্ষাধিক জেলের জীবনে এসেছে পরিবর্তন। ছোট-বড় সবধরনের নৌকা ও ট্রলারে রয়েছে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা। হাতিয়ার বিভিন্ন ঘাটের একাধিক জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলেদের মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়া, অন্য নৌযানের সাথে নিজেদের নৌযানের সংঘর্ষ এড়াতে নৌকাতে নিশানা বাতি, ভেতরের আলো এবং সংকেত বাতি ইত্যাদি সব কাজেই এখন মাঝিরা সৌর বিদ্যুৎ ও আধুনিক ইলেকট্রিক পণ্য ব্যবহার করেন।

সন্ধ্যা নামার পর থেকে হাতিয়ার নদীতে তাকালে দূর থেকে মনে হয় হাজারো জোনাকি মিটিমিটি করে জ্বলছে। মেঘনা ও বঙ্গোপসাগরের বুকে বছরের বেশিরভাগ সময়ই সারি সারি নৌকাতে এমন আলো চোখে পড়ে। শুধুআলোই না, নদীতে ভেসে বেড়ানো সব নৌকাতে রয়েছে ডিজিটাল সামগ্রী। এসব পণ্যসামগ্রী ব্যবহারে জেলেদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে নানা সুযোগ, জ্বালানি হিসেবে কেরোসিন ব্যবহার বন্ধ হওয়ায় আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন জেলেরা। সৌর শক্তির ব্যবহারে উপকৃত হচ্ছেন তারা। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকিও নেই।

নলচিরা ঘাট এলাকার কিরণ মাঝির সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, ১০ বছর আগেও নদী ও সাগরে মাছ ধরারসময় প্রায় রাতের বেলায় অন্য নৌকা ও ফিশিংবোট ধাক্কা দিতো। এতে নদী ও সাগরে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটতো। অনেক জেলের লাশও খুঁজে পাওয়া যেতোনা। মূলত মাছ ধরার নৌযানে লাইটিং সিগনাল বা নিশানা বাতি না থাকায় এসব ঘটনা অহরহ ঘটতে। এখন আর এরকম দূর্ঘটনা হয়না। এখন নৌযানে নিশানা বাতি ও ভেতরে আলো থাকায় দূর থেকে যে কোন নৌযান চোখে পড়ে। মূলত নৌকায় সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারে এমন সুযোগ ও নিরাপত্তা তৈরি হয়েছে। 

নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের লোকমান মাঝি জানান, ছয় বছর আগে ৫০ ওয়াটের একটি সোলার প্যানেল লাগিয়েছেন তিনি। তা দিয়ে নৌকায় বাতি জ্বালান তিনি। এতে প্রতি মাসে তার দুই-আড়াই হাজার টাকার মতো সাশ্রয় হয়।


জানতে চাইলে নোয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন জানায় , জেলেদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন অবশ্যই ভালো খবর। সময়ের পরীক্রমায় তাদের জীবন ব্যবস্থা আরো উন্নত হয়েছে। এখন তাদের সব নৌকায় সৌরবিদ্যুত আছে। এতে তাদের ঝুঁকি ও খরচ দুটোই কমেছে। 

মন্তব্য করুন: