• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

রাশিয়ার ‘নুর্দ কামাল’ বিশ্বের সবচেয়ে উত্তরের মসজিদ

প্রকাশিত: ১৭:০৫, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

ফন্ট সাইজ
রাশিয়ার ‘নুর্দ কামাল’ বিশ্বের সবচেয়ে উত্তরের মসজিদ

রাশিয়ার নুর্দ কামাল মসজিদ। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ায় প্রায় সাত হাজার মসজিদ রয়েছে। এর মধ্যে একটি মসজিদ গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা করে নিয়েছে। এর নাম নুর্দ কামাল (Nurd Kamal)। 

রাশিয়ার ক্রাসনোইয়ারস্ক রাজ্যের নরিলস্ক শহরে এটি অবস্থিত। উল্লেখ্য, নরিলস্ক শহর উত্তর মেরু-বলয়ের ৩০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। এই শহরে দুই লাখের বেশি মানুষ বাস করেন। এর মধ্যে প্রায় ৫০ হাজারই মুসলমান। যাদের বেশিরভাগের পূর্বপুরুষ কাজের সন্ধানে ককেশাস, তাতারস্তান ও আজারবাইজান থেকে এসেছেন।

নুর্দ কামাল মসজিদের মূল উদ্যোক্তা ও নির্মাতা হলেন তাতার বংশোদ্ভূত স্থানীয় ব্যবসায়ী মুখতাদ বেকমেয়েভ। ব্রিটিশ ফিলানথ্রোপিস্ট স্টিফেন ট্রানথাম এই মসজিদ নির্মাণে অর্থের যোগান দিয়েছেন। এর ডিজাইন করেছেন স্থানীয় আর্কিটেক্ট জোসেফ মুইরে। মুখতাদ বেকমেয়েভ তাঁর বাবা নুরিটদিন এবং মা গেইনিকামালের নামের সংমিশ্রণে মসজিদটির নাম রেখেছেন ‘নুর্দ কামাল’ । 

মসজিদটির নির্মাণ ইতিহাস নিয়ে খুব কম তথ্যই পাওয়া যায়। তবে যদ্দুর জানা যায়, নরিলস্ক শহরে ১৯৯৬ সালে প্রথমে একটি অর্থোডক্স গির্জা বানানো হয়। এর দু’বছর পর সবুজ রঙের নুর্দ কামাল মসজিদ নির্মিত হয়। এখনো পর্যন্ত এটিই নরিলস্কের সর্ববৃহৎ মসজিদ হলেও এর আকার-আয়তন আহামরি বড় নয়।

এটি বিশ্বের সবচেয়ে উত্তরের মসজিদ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। টার্কিশ স্টাইলের স্থাপত্যে মসজিদটিতে একটি মিনার ও কেন্দ্রীয় গম্বুজ রয়েছে। নীলাভ রংয়ের কাস্টম নকশায় নির্মিত এই মসজিদ প্রথাগত মসজিদ থেকে কিছুটা ভিন্ন। 

মসজিদটিতে একটি চারকোণা মিনার রয়েছে; যার উচ্চতা মাত্র ৩০ মিটার। দ্বিতল ভবনের এই মসজিদের দোতলা নামাজের জন্য নির্ধারিত এবং নিচতলা ব্যবহৃত হয় মাদ্রাসা হিসেবে। মসজিদটি ইবাদতের জন্য খুলে দেওয়া হয় ১৯৯৮ সালে।

নরিলস্ক শহরের অন্য ভবনগুলোর মতো এই মসজিদ ভবনও তৈরি করা হয়েছে পিলারের ওপর। কারণ হিসেবে জানা যায়, এখানে মাটির সামান্য গভীরে রয়েছে হিমশীতল বরফের রাজত্ব; যা মাটির নিচে ৩০০ থেকে ৫০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। খুব গরমের সময় যাতে নিচের বরফ গলে ভবনের ভিত সরে না যায়, সে জন্যই এর ভিত তৈরি করা হয়েছে পিলারের উপরে। নির্মাণশৈলীর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, হিমশীতল বরফের গভীরে জমিয়ে দেওয়া হয়েছে মসজিদের পিলারগুলো। 

অবাক করা হলেও সত্যি, এখানে তাপমাত্রা মাইনাস ৫৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত নেমে আসে। তখন উত্তর মেরুর হিমশীতল বাতাস চাবুকের মতো আছড়ে পড়ে মসজিদের সুবর্ণ ছাদে। এছাড়া, এই বাতাসে ভর করে রাশি রাশি তুষারপুঞ্জ এসে জমা হয় মসজিদের ফিরোজা রংয়ের দেয়ালে। পরিসংখ্যান মতে, নরিলস্ক শহরের প্রত্যেক বাসিন্দার জন্য বছরে প্রায় ১০ টন করে বরফ পড়ে।

এ কারণেই বিশ্বের সবচেয়ে উত্তরের এই মসজিদের নির্মাণশৈলীতে কিছু বিশেষত্ব রাখা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে গোল চূড়াবিশিষ্ট মিনার তৈরি করা হলেও নুর্দ কামাল মসজিদে তা চৌকো করে বানানো হয়েছে। উত্তরের অতি শীতল আবহাওয়া থেকে মসজিদ ভবনটিকে রক্ষার জন্যই এমন নির্মাণশৈলী বেছে নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, মসজিদ ও এর মিনারের ছাদ ঢালু রাখা হয়েছে, যাতে বরফ পড়লেও তা গড়িয়ে নিচে নেমে যায়।

বিভি/এসডি

মন্তব্য করুন: