• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিরল মার্বেলের কারণেই তীব্র গরমেও শীতল থাকে কাবা শরিফ

প্রকাশিত: ১৮:০৯, ২ জুলাই ২০২২

ফন্ট সাইজ
বিরল মার্বেলের কারণেই তীব্র গরমেও শীতল থাকে কাবা শরিফ

সৌদি আরবের পবিত্র ভূমি এমনিতেই উত্তপ্ত। ভৌগলিকভাবেই উষ্ণ এই দেশেই রয়েছে মুসলিমদের কিবলা- কাবা শরিফ। তবে তীব্র গরমে পূর্ণ দেশে মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববী একেবারেই শীতল। এখানকার মেঝে সব সময় শীতল ও ঠান্ডা থাকে। 

উত্তপ্ত রোদ ও তীব্র গরম পড়লেও মেঝে তেঁতে উঠে না। কারণ, এমন এক মার্বেল দিয়ে এই দুই চত্বর আচ্ছাদিত করে দেওয়া হয়েছে যে, যার বিশেষ তাপ-শোষণ ক্ষমতা রয়েছে। দুর্লভ এ মার্বেলেই ঢেকে রাখা হয়েছে পবিত্র দুই মসজিদের চত্বর।

দুর্লভ বলার কারণ হলো- এই ধরনের মার্বেল ছিল পুরো পৃথিবীতে কেবলমাত্র গ্রিসের ছোট্ট একটি পাহাড়ে। এগুলো সংগ্রহ ও দুই মসজিদে স্থাপন খুব সহজ ছিল না।

মিশরের প্রখ্যাত প্রকৌশলী ও স্থপতি ড. মোহাম্মাদ কামাল ইসমাইল প্রথম প্রকৌশলী- যিনি হারামাইন (মক্কা-মদিনা) সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ভার নিজের কাঁধে তুলে নেন। এই সুবিশাল কর্মযজ্ঞ তত্ত্বাবধান করার জন্য সৌদি বাদশাহ ফাহাদ এবং বিন লাদেন গ্রুপের সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও তিনি কোনো পারিশ্রমিক গ্রহণ করেননি।

মোটা অংকের চেক উনি ফিরিয়ে দেন! তার সততা ও কাজের প্রতি আন্তরিকতা তাকে বাদশাহ ফাহাদ ও বাদশাহ আব্দুল্লাহসহ সকলের প্রিয়পাত্র ও বিশেষ আস্থাভাজন করে তোলে। তাঁর ১০০ বছরের জীবনের পুরোটা সময় মক্কা ও মদীনার দুই মসজিদের সেবায় বিনিয়োগ করে গেছেন।

ড. মোহাম্মাদ কামাল ইসমাইল গ্রিসে গিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে মার্বেল কিনে যথাসময়ে বিশেষ নকশায় মাসজিদুল হারামের মেঝের সাদা মার্বেলের কাজ সম্পন্ন হয়। এর ঠিক ১৫ বছর পরে সৌদি সরকার তাঁকে মাসজিদুন নব্বীর চারদিকের চত্বরও একইভাবে সাদা মার্বেল দিয়ে ঢেকে দিতে বললেন। কিন্তু ড. মোহাম্মাদ কামাল ইসমাইল দিশেহারা বোধ করলেন! 

কেননা ওই বিশেষ ধরনের মার্বেল কেবলমাত্র গ্রিসের ওই ছোট্ট জায়গা বাদে গোটা পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যায় না এবং সেখানে যতটুকু ছিল, তার অর্ধেক ইতোমধ্যেই কিনে মক্কার হারাম শরীফে কাজে লাগানো হয়ে গেছে। যেটুকু মার্বেল অবশিষ্ট ছিল- সেটা মাসজিদুন নব্বীর প্রশস্ত চত্বরের তুলনায় খুবই সামান্য!

ড. মোহাম্মাদ কামাল ইসমাইল আবার গ্রিসে গেলেন। সেই কোম্পানির সি.ই.ও-র সঙ্গে দেখা করে জানতে চাইলেন, ওই পাহাড় আর কতটুকু অবশিষ্ট আছে? সি.ই.ও জানালেন, ১৫ বছর আগে উনি কেনার পরপরই পাহাড়ের বাকি অংশটুকুও বিক্রি হয়ে যায়! এই কথা শুনে তিনি এতটাই বিমর্ষ হলেন যে, তাঁর কফি পর্যন্ত শেষ করতে পারলেন না!

এরপর নানান ঘটনায় জানতে পারেন ওই মার্বেল সব কিনে নিয়েছে এক সৌদি কোম্পানি। সেখানে গিয়ে তিনি অ্যাডমিনের কাছে জিজ্ঞেস করেন ওই পাথর কী কাজে লাগানো হয়েছে? পরে তারা খুঁজে দেখেন, সেই পাথর কোনো কাজে লাগানো হয়নি, স্টোর রুমে পড়েই আছে। 

এ খবর শুনে শিশুর মতো কেঁদে ওঠেন ইসমাইল। কান্নার কারণ জানতে চাইলে তিনি পুরো ঘটনা কোম্পানির মালিককে খুলে বললেন। ড. কামাল ওই কোম্পানিকে সৌদি সরকারের পক্ষে একটি ব্ল্যাংক চেক দিয়ে ইচ্ছেমতো অংক বসিয়ে নিতে বললেন। 

কিন্তু কোম্পানির মালিক যখন জানতে পারলেন— এই সাদা মার্বেলে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর মসজিদ চত্বর বাঁধানোর জন্য ব্যবহৃত হবে, তৎক্ষণাৎ তিনি এর বিনিময় মূল্য নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বললেন। আল্লাহ্ সুবহানুতায়ালা আমাকে দিয়ে এটা কিনিয়েছিলেন আবার তিনিই আমাকে এর কথা ভুলিয়ে দিয়েছেন; কেননা এই মার্বেল রাসুল (সা.)-এর মসজিদের উদ্দেশ্যেই এসেছে…!

এভাবেই বিরল সাদা মার্বেলে সাজানো হয়েছে দুই পবিত্র মসজিদ। মুসল্লীদের জন্য বড্ড শীতল হয়েছে এই তীর্থভূমি।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: