• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

হঠাৎ এনআইডি সংশোধন ও ভোটার নিবন্ধনের হিড়িক

প্রকাশিত: ১৬:০৮, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

আপডেট: ১৬:১৩, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

ফন্ট সাইজ
হঠাৎ এনআইডি সংশোধন ও ভোটার নিবন্ধনের হিড়িক

হঠাৎ নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের আবেদন ও নতুন ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদনের হিড়িক পড়েছে। জুলাই মাসে এনআইডি সংশোধন ও  নতুন ভোটার নিবন্ধনের জন্য যেই পরিমাণ আবেদন পড়েছে, আগস্টে সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রায় পাঁচ গুণ এবং নতুন ভোটার আবেদনের ক্ষেত্রে তিনগুণের বেশি আবেদন পড়েছে। ইসি'র সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

বর্তমানে মোবাইল সিম কেনা থেকে শুরু করে, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, জমি রেজিস্ট্রি করাসহ প্রায় সব কাজেই এনআইডি'র প্রয়োজন পড়ছে। এছাড়া বিশ্ব মহামারী করোনা সংক্রমণ রোধে ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করতে এনআইডি'র প্রয়োজন পড়ছে। তবে ইসি কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সেবা ইসি থেকে সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরের বিষয়টি সামনে আসার পর থেকে এই বিষয়ে নাগরিকদের আবেদন বাড়ছে।
 
সূত্র জানায়, চলতি বছর জানুয়ারি মাসে এনআইডি সংশোধনের আবেদন পড়েছিলো ৯১ হাজার ২০৫টি এবং নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন পড়েছিলো ১৮ হাজার ৩৬৪টি। ফেব্রুয়ারিতে এনআইডি সংশোধনের আবেদন পড়েছিলো ৯২ হাজার ৮৫০টি এবং নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন পড়েছিলো ২৯ হাজার ৭৫৫টি। মার্চ মাসে এনআইডি সংশোধনের আবেদন পড়েছিলো ৮১ হাজার ৮৪২টি এবং নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন পড়েছিলো ৩৭ হাজার ৬৪৩টি। এপ্রিলে এনআইডি সংশোধনের আবেদন পড়েছিলো ৩৪ হাজার ৭২৮ টি এবং নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন পড়েছিল ২৩ হাজার ৫৩৬টি। মে মাসে এনআইডি সংশোধনের আবেদন পড়েছিলো ৩৭ হাজার ১৪০টি এবং নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন পড়েছিলো ১৫ হাজার ৮৫৩টি। জুনে এনআইডি সংশোধনের আবেদন পড়েছিলো ৭৭ হাজার ৯৬৪টি এবং নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন পড়েছিলো ৫৭ হাজার ৬৯৫টি। জুলাই মাসে এনআইডি সংশোধনের আবেদন পড়েছিলো ২৬ হাজার ২৭৫টি এবং নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন পড়েছিলো ২১ হাজার ৫৮১টি। আর আগস্টে এনআইডি সংশোধনের আবেদন পড়ে ১ লাখ ২৩ হাজার ৯৮৪টি এবং নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন পড়ে ৬৫ হাজার ৮৭৪টি।

এই বিষয়ে কথা হলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) ও ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, আমাদের হিসাব অনুযায়ী এনআইডি সংশোধন এবং নতুন ভোটার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে জুলাই মাসের চেয়ে আগস্ট মাসে কয়েকগুণ বেশি আবেদন পড়েছে। এনআইডি সেবা হস্তান্তরের বিষয়ে যে আলোচনাটি চলছে, সেটি হঠাৎ এতো পরিমাণ আবেদন পড়ার কারণ হতে পারে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, চলমান করোনাকালে সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও কমিশন এনআইডি সেবা কার্যক্রম চালু রেখেছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২৫০ জনের মতো কর্মকর্তা কর্মচারী। এতে আক্রান্ত হয়ে দশজন কর্মকর্তা-কর্মচারী মারা গেছেন।
 
গত ১৭ মে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম ইসি'র পরিবর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে ন্যস্ত করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব বরাবর চিঠি দেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-১০ একেএম ফজলুর রহমান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই চিঠির প্রেক্ষিতে ২৪ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম-সচিব শফিউল আজিম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ইসি সচিব ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই চিঠির অনুলিপি পাওয়ার পর এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ১৯ মে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা'র কাছে স্মারকলিপি এবং ২৭ মে (বৃহস্পতিবার) নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরে ইসি সচিবের কাছে আরেকটি প্রস্তাবনা জমা দেয় বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। ২৩ মে একই বিষয়ে সিইসি'র কাছে স্মারকলিপি জমা দেয় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। এরপর ৩০ মে আবারও সিইসি'র কাছে স্মারকলিপি জমা দেয় ইসি কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। এরপর ৭ জুন জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম নিজেদের কাছে রাখার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেয় ইসি।

ইসি চিঠি দেওয়ার পরও ২০ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই বিষয়ে ইসি সচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠান। "জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তে সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্তকরণ" শিরোনামে পাঠানো সেই নির্দেশনায় বলা হয়- ১৭ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাঠানো পত্রের আলোকে 'সরকার জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম আইনানুগভাবে নির্বাচন কমিশন হতে সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এমতাবস্থায়, নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরাধ করা হলো।'

গত ১১ আগস্ট এই বিষয়ে তাগাদা দিয়ে আবারও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম-সচিব শফিউল আজিম ইসি সচিবের কাছে চিঠি পাঠান। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংক্রান্ত কার্যক্রম সুরক্ষা সেবা বিভাগে ন্যস্ত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিলো। নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন জরুরী ভিত্তিতে পাঠানোর জন্য নির্দেশিত হয়ে অনুরোধ করা হলো।

সম্প্রতি এনআইডি সেবা হস্তান্তরের বিষয়ে সুরক্ষা বিভাগ দু'টি কমিটি গঠন করেছে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার।

জানা যায়, ইসি ২০০৭-২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকার কাজ শুরু করে। ভোটার তালিকার সংগে এনআইডি দেওয়ার কাজটিও করে ইসি। ২০১০ সালে ইসি'র অধীনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ একটি আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পায়। ইসি'র দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, তালিকায় বর্তমানে ১১ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার ৬৬৯ জন ভোটার রয়েছেন। প্রথম থেকে এনআইডি হারানো ও সংশোধন সংক্রান্ত সেবা বিনামূল্যে দিলেও ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ফি নেওয়া শুরু করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

 

বিভি/এমএস

মন্তব্য করুন: