• NEWS PORTAL

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ইউরোপ-আমেরিকার পর জাপানে বেড়েছে বাংলাদেশি পোশাকের চাহিদা

প্রকাশিত: ১৬:২২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

আপডেট: ১৬:২৪, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

ফন্ট সাইজ
ইউরোপ-আমেরিকার পর জাপানে বেড়েছে বাংলাদেশি পোশাকের চাহিদা

করোনা মহামারির ধকল কাটিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের প্রধান রফতানি খাত পোশাক শিল্প। বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো'র (ইপিবি) তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ইউরোপে বাংলাদেশি পোশাকের চাহিদা বেড়েছে ৬০ শতাংশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২১ এবং কানাডায় প্রায় ৪ শতাংশ। এছাড়া অপ্রচলিত বাজার হিসেবে পরিচিত অস্ট্রেলিয়া ও জাপানে বেড়েছে বাংলাদেশি পোশাকের চাহিদা। 
  
ইপিবি'র মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে এই খাতে রফতানির পরিমাণ নিট ও ওভেন শিল্প মিলিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬৪০ দশমিক ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নে রফতানি হয়েছে ১১৯০ দশমিক ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময়ে নিটওয়্যার রফতানি হয়েছে ২২০৫ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগস্টে নিট শিল্পের রফতানি বেড়েছে ১৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। একই সময়ে ওভেন শিল্পের রফতানি বেড়েছে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

পোশাকখাত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে করোনা'র দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে দেশজুড়ে  কঠোর বিধি-নিষেধে সব শিল্পকারখানা বন্ধ থাকায় ব্যবসা কিছুটা খারাপ গেছে। তবে সরকারের সুদৃষ্টি ও গণটিকা প্রয়োগ কার্যক্রমের ফলে কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বৈশ্বিকভাবেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমায় ইউরোপ ও আমেরিকার বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ অর্ডার আসছে। এতে করোনা'র কারণে কারখানা বন্ধ থাকায় যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে ওভেন রফতানি হয়েছিলো ২৫৯৮ দশমিক ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের একই সময়ে দাঁড়িয়েছে ২৩৮১ দশমিক ৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ রফতানি কমেছে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট শহিদুল্লাহ আজিম বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, করোনা মহামারির কারণে ওভেন রফতানি বড় ধাক্কা খেয়েছে। সেই অবস্থা এখনও কাটেনি। যে কারণে বাজারগুলোতে আগের মতো ওভেনের তেমন চাহিদা তৈরি হয়নি। মানুষ সাধারণ পোশাক পরলেও অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষ পোশাক এখনও তেমনটা পরছেন না। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। এতে আগামী দুই-এক মাসের মধ্যে আমাদের ওভেন পণ্য (শার্ট, প্যান্ট, জ্যাকেটসহ শৌখিন আইটেম) রফতানির পরিমাণ বাড়বে।
 
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের শুধু আগস্টে ১১৫২ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি হয়েছে। যার প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এই চিত্রই বলছে, বাজার ধীরে ধীরে আগের অবস্থায় ফিরছে। এতেই আমরা আশাবাদী, খুব শিগগিরই ওভেনের বাজারও ঠিক হয়ে যাবে। পোশাক শিল্পের রফতানির পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়বে। যা গত দেড় বছর ধরে কোভিড-১৯-এর কারণে ধুঁকছে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি মো. হাতেম বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, আমাদের পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকা। সেখানে মার্কেটগুলো চালু হয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর বদৌলতে আপনারা দেখছেন, তাদের শো-রুমগুলো ফাঁকা হয়ে আছে, সেখানে পোশাক নেই। যে কারণে আমাদের অর্ডার বাড়ছে। আগস্টে আমাদের শুধু নিটওয়্যার (গেঞ্জি, টি-শার্ট) রফতানি হয়েছে ১৬০০ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার প্রবৃদ্ধি ১৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। এটা আরও বেশি হতে পারতো। কারণ আমাদের এখানে সুতার দাম নিয়ে অস্থিরতা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা কয়েকদফা বৈঠকও করেছি, কিন্তু কার্যত কোনো ফল আসেনি। এটি আমাদের রফতানিতে বড় প্রভাব ফেলেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে সুতা আমদানি করতে গেলে প্রায় ১ ডলার বেশি খরচ করতে হয়। এছাড়া ক্রেতারা পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে আমাদের যে লিড টাইম বেঁধে দিচ্ছে আমরা সেটা কভার করতে পারছি না। পাশাপাশি কৃত্রিমভাবে তৈরি অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, যা সুতা আমদানিতে বড় ইস্যু। এটি আমাদের রফতানিতে বড় বাধা সৃষ্টি করেছে। 
 
বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো'র (ইপিবি) তথ্য মতে, চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে ওভেন শিল্পের রফতানির পরিমাণ ছিলো ২৩৮১ দশমিক ৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা ২০২০-২০২১ অর্থবছরের একই সময় ছিলো ২৫৯৮ দশমিক ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

এই সময়ে নিটওয়্যার শিল্প রফতানি হয়েছে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৩২৫৮ দশমিক ৮৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা ২০২০-২০২১ অর্থবছরের একই সময়ে হয়েছে ৩১১৪ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে পাঁচ ৬৪০ দশমিক ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের নিট ও ওভেন শিল্পের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। যা আগের বছরে ছিলো পাঁচ হাজার ৭১২ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের বাজারে ওভেন পণ্য রফতানি হয়েছে ১১৯০ দশমিক ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময়ে নিটওয়্যার রফতানি হয়েছে ২২০৫ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ওভেন ও নিট মিলিয়ে মোট রফতানি হয়েছে ৩৩৯৬ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময়ে একক বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওভেন রফতানি হয়েছে ৭১২ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। নিটওয়্যার রফতানি হয়েছে ৪৬৫ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সর্বসাকুল্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ওভেন ও নিটওয়্যার রফতানি হয়েছে ১১৭৭ দশমিক ৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

এছাড়া কানাডায় ওভেন ৮৩ দশমিক ৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং নিটওয়্যার ১০৭ দশমিক ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি হয়েছে। সব মিলিয়ে কানাডার বাজারে রফতানি হয়েছে ১৯১ দশমিক ৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
 
ইউরোপ, আমেরিকা ও কানাডায় মোট রফতানি হয়েছে চার হাজার ৭৬৫ দশমিক ৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এক্ষেত্রে ইউরোপের বাজারে বেড়েছে ৬০ দশমিক ২১ শতাংশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং কানাডায় বেড়েছে ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অপ্রচলিত বাজার হিসেবে পরিচিত অস্ট্রেলিয়ায় ১১৪ দশমিক ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ব্রাজিলে ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, চিলিতে ২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, চীনে ৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ভারতে ৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, জাপানে ১৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, মেক্সিকোতে ৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, রাশিয়ায় ৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, তুরস্কে ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ওভেন এবং নিটওয়্যার রফতানি হয়েছে। অপ্রচলিত অন্য দেশগুলোতে ওভেন ও নিট মিলিয়ে মোট পোশাক রফতানি হয়েছে ৮৭৪ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ।

২০১৯-২০২০ এবং ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ওভেনে ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং নিটে ২১ দশমিক ৯৪ শতাংশ রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিলো। এই খাতের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

বিভি/এইচএস/এসডি

মন্তব্য করুন: