• NEWS PORTAL

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

মানিক চাঁন মিয়া’র অভিনব প্রতারণা, হাতিয়ে নিলো অর্ধকোটি টাকা!

প্রকাশিত: ১৭:২৬, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

আপডেট: ১৭:২৭, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

ফন্ট সাইজ
মানিক চাঁন মিয়া’র অভিনব প্রতারণা, হাতিয়ে নিলো অর্ধকোটি টাকা!

মানিক চাঁন মিয়া। ২৮ বছর বয়সী এই যুবকের পরিচয় কখনও দুদকের মাজিস্ট্রেট, কখনও স্বাস্থ্য অধিদফতরের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। কখনও সে আইনজীবী কিংবা পত্রিকার সম্পাদক। কখনও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যানের পরিচয়ও দিতো সে। এমন অন্তত ১০ থেকে ১২টি পরিচয় রয়েছে তার। এসব পরিচয়ের একটাই উদ্দেশ্য, প্রতারণা করা।

যখন যেখানে যে পরিচয় প্রয়োজন, ঠিক সেই পরিচয়ের জন্য তার রয়েছে বাহারি সব পরিচয়পত্র। এসব কার্ড দেখে যে কেউ প্রথম দেখাতেই তাকে বিশ্বাস করতো। সুদর্শন, বাকপটু মানিক চাঁন মিয়া এসব পরিচয়ের আড়ালে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চাকরির নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা। 
 
জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই-এর একটি টিমের নজরে চাঁন মিয়ার এমন প্রতারণা ধরা পড়লে এক নারী সহযোগীসহ আটক করা হয় তাকে। পরে প্রতারণার অভিযোগে ১ সেপ্টেম্বর রাতে বনানী থানায় সোপর্দ করা হয় তাদের।

মানিক চাঁন মিয়া'র প্রলোভনে পড়ে হয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেতে কেউ দিয়েছেন ২০ লাখ টাকা, কেউ দিয়েছেন চার থেকে ১০ লাখ টাকা। এনএসআই-এর হাতে আটকের পর চাঁন মিয়ার প্রতারণার খবর পেয়ে ভুক্তভোগীরা থানার সামনে জড়ো হতে থাকেন। তেমনি একজন মো. রাকিব উদ্দিন (ছদ্মনাম)।

চট্টগ্রামের রাউজানের বাসিন্দা রাকিব উদ্দিন বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, ২০২০ সালে স্বাস্থ্য সহকারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলো স্বাস্থ্য অধিদফতর। ওই নিয়োগে আমিও আবেদন করেছিলাম। এর কিছুদিন পর শুক্কুর আলী নামের এক দালালের মাধ্যমে আমার আন্টি জানতে পারেন যে পাঁচ লাখ টাকায় নিয়োগ পাওয়া যাবে। দালাল শুক্কুর-এর কথায় আমি ঢাকায় আসি। এরপর সে মানিক চাঁন মিয়া নামে একজনের সংগে আমাকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাখালী অফিসে সাক্ষাৎ করায়। ওই চাঁন মিয়া'র কথাবার্তায় মনে হয়েছে তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা। তিনি ওই ভবনের একটা রুমে আমাকে বসালেন, চা খাওয়ালেন। পরে তার কথাবার্তায় বিশ্বস্ত মনে হওয়ায় আড়াই লাখ টাকা দিয়েছিলাম। তার আগে শুক্কুর আলীকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। আড়াই লাখ টাকা দেওয়ার পর বাকি টাকা নিয়োগ হওয়ার পর দেবো বলেছিলাম। পরে গত মাসের মাঝামাঝিতে আমাকে নিয়োগ পত্র দেয়। ২ তারিখে জয়েন করার কথা ছিলো আমার। কিন্তু আমি এসে দেখি প্রতারণার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি টাকা ফেরত চাই এবং তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

অপর একজন ভুক্তভোগী ময়মনসিংহের বাসিন্দা আসমা আক্তার বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, গত বছর আমি এয়ারপোর্টের একটা ফটোকপির দোকানে কাগজপত্র ফটোকপি করছিলাম। এসময় ওই দোকানদারকে বলেছিলাম যদি কোথাও কোনো চাকরি সুযোগ থাকে আমাকে একটু যেন জানায়। এসময় সেখানে মানিক চাঁন মিয়াও ছিলো। সে আমার নাম্বার নিয়ে বলেছিলো সে স্বাস্থ্য অধিদফতরে কাজ করে। এরপর তার সংগে কথা হলে সে জানায় ময়মনসিংহে কমিউনিটি হেলথের জন্য লোক নিবে। আমাকে সেখানে নিয়োগের ব্যবস্থা করে দিতে পারবে। তবে এজন্য ছয় লাখ টাকা দিতে হবে।

ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, আমার বয়স যখন দুই বছর তখন আমার বাবা সাপের কামড়ে মারা যান। এ ঘটনায় আমার মা-ও হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। পরে আমার এক দূর সম্পর্কের চাচা আমাকে বড় করেন। উনাকে আমি বাবা ডাকতাম। তিনি ক্যান্সারের রোগী। এই বাবা যখন শুনলেন আমার একটা চাকরির সুযোগ হয়েছে, আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে ছয় লাখ টাকা ম্যানেজ করে তিনি নিজে ঢাকায় এসে মানিক চাঁনের হাতে দিয়েছিলেন। এরপর সে আমাকে নিয়োগপত্র দেয়। আমাকে সচিবালয়ে নিয়ে নিয়োগপত্র দিয়েছিলো। কিন্তু যখন যোগ দিতে গেছি তখন সেখানকার অফিসাররা বললেন এটা তো ভুয়া। এ কথা জানার পর আমার বাবা চিন্তায় মারা গেছেন। কিন্তু আমি অনেক চেষ্টাতেও টাকাগুলো ফেরত পাইনি। ঋণের সুদ পরিশোধ করতেই আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। এখন এই টাকা ফেরত না পেলে আমার বাঁচার উপায় নেই। আমি টাকা ফেরত চাই এবং প্রতারণার সংগে জড়িতদের কঠিন বিচার চাই। তারা আমার মতো আরও অনেকের জীবন ধ্বংস করেছে।

শুধু রাকিব কিংবা আসমা আক্তার নয়, এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন আরও অনেকে। তবে পরিবার-পরিজনের ভয়ে পরিচয় প্রকাশ করে কেউ কথা বলতে রাজী হননি। তবে হাতিয়ে নেওয়া টাকা ফেরত পাওয়া এবং চাঁন মিয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছেন তারা।

পুলিশ হেফাজতে চাঁন মিয়া জানায়, বছরখানেক ধরে এমন প্রতারণার কাজ শুরু করেছিলো সে। তার সংগে এই কাজে আরও কয়েকজন জড়িত। তাদের কাছেই বড় অংকের টাকা চলে গেছে বলে দাবি তার।

এ বিষয়ে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আযম মিয়া বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, গ্রেফতার মানিক চাঁন ও তার এক নারী সহযোগীর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত এবং ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে মনে হচ্ছে এরা পেশাদার প্রতারক চক্র। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বিভি/এসএইচ/এসডি

মন্তব্য করুন: