• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

মেয়াদ দীর্ঘায়িত করতেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করেনি ছাত্রদল নেতৃত্ব!

প্রকাশিত: ১৭:১৬, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

আপডেট: ২১:০৬, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

ফন্ট সাইজ
মেয়াদ দীর্ঘায়িত করতেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করেনি ছাত্রদল নেতৃত্ব!

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিএনপি'র ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করে আসছে। দীর্ঘ ২৮ বছর পর ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বাছাই করে শীর্ষ নেতৃত্ব। উদ্দেশ্য ছিলো- আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে সংগঠনটি। সেই চ্যালেঞ্জও নিয়েছিলো নতুন নেতৃত্ব। কিন্তু প্রত্যাশার বিন্দুমাত্রও পূরণ করতে পারেনি খোকন-শ্যামলের নেতৃত্বাধীন কমিটি। উল্টো তাঁদের আর্থিক লেনদেন, অনিয়ম, পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগ বিব্রত করে বিএনপি হাইকমান্ডকে।

ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের কয়েকজন নেতা জানান, আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার 'ছলছাতুরী' করতে করতে বর্তমান কমিটির মেয়াদ রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) শেষ হয়েছে। সংগঠনের অভিভাবক পর্যায় থেকে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশনা থাকলেও ‘আংশিক কমিটি’র লক্ষ্য এখন মেয়াদ দীর্ঘ করা। যাতে তাঁরা আরও লম্বা সময় ছাত্রদলের নেতৃত্বে থাকতে পারেন। এই কারণেই ‘বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমে’র প্রস্তাবকে গুরুত্বহীন করে ফেলে রেখেছেন সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন এবং সেক্রেটারি ইকবাল হাসান শ্যামল।

নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, প্রত্যেকেই নিজ নিজ বলয় থেকে নেতা বানানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। অনেকে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমেও অযোগ্যদের হাতে নেতৃত্বভার তুলে দিয়েছেন। এমন কয়েকটি আর্থিক লেনদেনের অডিও-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর পাশাপাশি ত্যাগী ছাত্রনেতারা দলের হাইকমান্ডের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে বেশকিছু জায়গায় তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। অনিয়মের প্রতিবেদন জমা পড়ায় সেসব কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। এতো কিছুর পরও দেশব্যাপী নতুন কমিটি গঠন হয়েছে।

ছাত্রদলের সহ-দপ্তর সম্পাদক আজিজুর রহমান সোহেল জানান, বিগত দুই বছরে জেলা ও সমমান পূর্ণাঙ্গ ও আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে ৭৬টি। উপজেলা ও সমমান পর্যায়ে ১৪৪৬টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি গঠন বাকি রয়েছে ১৫৮টি ইউনিট শাখায়। কেন্দ্রীয় কমিটির অধীনে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইউনিট শাখা বাদ রয়েছে। কবে নাগাদ এসব কমিটি গঠন করা হবে তা কেউ নিশ্চিত করতে পারছেন না।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক সদস্য জানান, রাজধানীর বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান—ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, বাঙলা কলেজসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের কমিটি গঠনের বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম- (ক) মতামত দিলেও এখনও এসব কমিটি দিতে পারেনি সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের কমিটিও গঠন হয়নি।

কেন কর্মীহীন ছাত্রদল?

রাজিব-আকরাম কমিটি মেয়াদের বেশি সময় দায়িত্ব পালন করে। এরপর খোকন-শ্যামল কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় অনেক ত্যাগী নেতা পদবঞ্চিত থাকেন। এসব নেতার পদায়ন না হওয়ায় তাঁদের অনুসারীরাও আশাহত হয়ে ছাত্রদল ছেড়ে দিয়েছেন। ২০০৯ -এর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মকাণ্ড না থাকায় নতুন রিক্রুটও হয়নি। ফলে কর্মীহীন সংগঠনে পরিণত হয়েছে ছাত্রদল। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় নেতৃত্ব সংকটে পড়বে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই ছাত্রসংগঠন।

পদ-প্রত্যাশী ছাত্রনেতাদের মধ্যে রয়েছেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ আল ফয়সল, মো. মুতাছিম বিল্লাহ, খায়রুল আলম সুজন, মো. ঝলক মিয়া। এরা বর্তমান সেক্রেটারি ইকবাল হোসেন শ্যামলের ব্যাচমেট। এছাড়া রয়েছেন- মোল্লা মোহাম্মদ মুছা, রোকনুজ্জামান, জাহাঙ্গীর আলম, শাহ আলম, ইব্রাহীম খলিল ফিরোজ, আনোয়ার পারভেজ, মঞ্জুরুল আলম রিয়াদ, সফিকুল ইসলাম, ইমরান হোসেন, আবদুস সাত্তার রনি, নাজমুল হাসান, সাকির আহমেদ, সালেহ আদনান, মুস্তাফিজুর রহমান ফরহাদ, শরিফুল ইসলাম, জিএম ফকরুল হাসান, দিপু পাটোয়ারী, মো. রেজোয়ান আহমেদ, নাদির শাহ পাটোয়ারী। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুরুজ মন্ডল, আসাদুজ্জামান আসলাম, আতাউর রহমান বুলেট, আবুল খায়ের ফরাজী। ঢাকা কলেজের আলীজা মিজান, জহির হাসান মোহন, দেউয়ান মামুন, আসিক আহমেদ, মারজান। কবি নজরুল কলেজের আরিফুর রহমান আরিফ, মো. মিলন হাওলাদার। তিতুমীর কলেজের আবুল হাসান চৌধুরী, রিয়াজ হোসেন, রেজাউনুল হক সবুজ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু আহমেদ, শিমুল। ঢাকা মহানগরের জসীমউদ্দিন সরদার জীবন, আসাদুজ্জামান আশা, তানভীর আল হাদি, আবদুস সালাম হিমেল, হিমেল আল ইমরান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র খায়রুল আলম সুজন বলেন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল আমার ব্যাচমেট। সে সাধারণ সম্পাদক হয়েছে। আমরা এখনও পদের আশায় ঘুরছি। আশা করি শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে হতাশায় থাকা ছাত্রনেতাদের আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।

ঢাবি শিক্ষার্থী পদপ্রত্যাশী মুতাছিম বিল্লাহ বলেন, দেশজুড়ে ছাত্রদলের চলমান বিশাল কর্মযজ্ঞে আমরাও শামিল হতে চাই, কাজ করার সুযোগ চাই।

জানতে চাইলে ছাত্রদল সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেন, আমাদের কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করার পরপরই আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। আমাদের অভিভাবক তারেক রহমান-এর নির্দেশে টিম গঠন করে দিয়ে তৃণমূল পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়। ইতিমধ্যে আমরা প্রায় ১৫শ'র বেশি কমিটি করেছি। ১০-১২টি বাদে বাকি জেলাগুলো পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে, ৭টি জেলা শাখা ও ১৪টি জেলা মর্যাদার কলেজে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি মাসেই বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।

নির্ধারিত মেয়াদেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে না পারার কারণ জানতে চাইলে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পর থেকেই করোনা'র কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত ছিলো। দুই বছরের মধ্যে দুই দফায় দীর্ঘ কয়েক মাস কার্যক্রম স্থগিত ছিলো। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। যার ফলে নির্ধারিত সময়ে কমিটি গঠন কার্যক্রম শেষ করতে পারিনি।

তিনি বলেন, ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ কলেজগুলোতে একাধিক যোগ্য নেতা রয়েছেন কিন্তু পদ দু'টি। তাই তাদের সবাইকে আমরা কাঙ্ক্ষিত পদ দিতে পারবো না। নতুন কমিটিতে যারা বাদ পড়বেন তাঁদেরকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা দিতে হবে। এজন্য এই কমিটিগুলো শেষ হলেই ১৫১ বা ২০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। আগামী অক্টোবরের মধ্যেই এটি করা হবে বলে জানান খোকন।

নতুন কমিটির গুঞ্জন

ছাত্রদলের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে গুঞ্জন বাড়ছে। পদপ্রত্যাশী নেতারা নিজেদের মতো করে বিভিন্ন ইস্যুতে শোডাউন করছেন। নিজের যোগ্যতা ও সংগঠনের শীর্ষ পদে আসতে পারলে কী করবেন তার ফিরিস্তি তুলে ধরছেন।

নতুন কমিটির সভাপতি পদের জন্য আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, সহ-সভাপতি আশরাফুল ফকির লিঙ্কন, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, যুগ্ম সম্পাদক শাহনেওয়াজ, তানজিল হাসান, মাহিনউদ্দির রাজু।

সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, যুগ্ম সম্পাদক নিজামউদ্দিন রিপন,  রিয়াদ ইকবাল, মারুফ এলাহী রনি, রনি প্রধান, কেন্দ্রীয় নেতা শ্যামল মালুমসহ আরও কয়েকজন।

ছাত্রদলে দীর্ঘদিনের অলিখিত নিয়মে কমিটির বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে নতুন কমিটিতে পদায়ন করা হয় না।

বিভি/এমএস

বিভি/এমএস

মন্তব্য করুন: