• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

পরিচয়হীনতার সমস্যা: সম্মানজনক সমাধান চায় ইসি

প্রকাশিত: ২১:৩৬, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

আপডেট: ২১:৩৭, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

ফন্ট সাইজ
পরিচয়হীনতার সমস্যা: সম্মানজনক সমাধান চায় ইসি

যৌনকর্মীদের সন্তান, হিজড়া, এতিমখানায় বড় হওয়া সন্তান, যাদের পিতা-মাতার পরিচয় জানা নেই, এমন পরিচয়হীনদের নিয়ে যে সমস্যা রয়েছে, তার সম্মানজনক সমাধান চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সম্প্রতি সমস্যাটি সমাধানে কর্মশালাও করেছে ইসি। সেখানে পাওয়া সুপারিশ নিয়ে বৈঠক করবে ইসি’র আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটি। তারপর এই বিষয়ে সম্মানজনক সমাধানের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই বিষয়ে সুপারিশ পাঠাতে চায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

এই বিষয়ে ইসি’র আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটির প্রধান, নির্বাচন কমিশনার বেগম কবিতা খানম বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, আমরা পরিচয়হীনদের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে একটি কর্মশালা করেছি। সেখান থেকে কিছু সুপারিশ পেয়েছি। 

তিনি বলেন, এটি শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার তালিকার জন্য সমস্যা নয়। যেহেতু জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকা নির্বাচন কমিশন করে, তাই নির্বাচন কমিশন এই বিষয়ে আইন করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠাতে পারে। 

তিনি আরও বলেন, পিতা-মাতার পরিচয় নেই এই কথা সাধারণত কেউ বলতে চায় না। কারণ বললে, সমাজে তাদেরকে নানানভাবে নিগৃহীত করা হয়। তাই তাদের পিতা-মাতার পরিচয় দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্য কিছু কী হবে, এই বিষয়ে সম্মানজনক একটা সমাধান দেওয়া প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশন ভাবছে, আমরা যদি তাদের পরিচয় নির্ধারণ করতে না পারি জাতীয় পর্যায়ে মূলধারায় এদেরকে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে এবং সংবিধান প্রদত্ত সুযোগ সুবিধা পেতে হলে এই বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসা উচিৎ। 

তিনি আরও বলেন, এই বিষয়ে সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) আমাদের একটি সভা (আইন সংক্রান্ত কমিটির) রয়েছে। আমরা মিটিংয়ে এই বিষয়টি ঠিক করবো। এটি ঠিক করা হলে এতে কমিশনের অনুমোদন লাগবে। আমাদের তো হাতে সময় কম। তাই আমরা হয়তো ফাইল ওয়ার্ক করে যাবো। পরবর্তী কমিশন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবে। আলোচনা করে হয়তো সরকারের যে সংস্থার কাছে পাঠানো দরকার সেখানে পাঠাবে।

এর আগে ৬ জানুয়ারি হোটেল সোনারগাঁওয়ে ভোটার তালিকায় পরিচয়হীনদের পিতা-মাতার নাম লিপিবদ্ধকরণে জটিলতা নিরসন শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন করে ইসি। এতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ পদধারী ব্যক্তি, বিভিন্ন সংস্থা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ইসি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।
ওই কর্মশালায় অংশ নেওয়াদের পরিচয়হীনদের সমস্যা সমাধানের জন্য সুপারিশ করার জন্য পাঁচটি দলে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো- পদ্মা, তিস্তা, মেঘনা, যমুনা ও মধুমতি। 

নিম্নে এদের এই সংক্রান্ত সুপারিশগুলো তুলে ধরা হলো-

পদ্মা
এই গ্রুপ থেকে যে সুপারিশ এসেছে, সেগুলো হলো- ভোটার নিবন্ধন ফরম-২ তে পিতা-মাতার ফিল্ডের সাথে আরো একটি ফিল্ড সংযোজন করতে হবে; অতিরিক্ত ফিল্ডের জন্য একটি বিশেষ ফরম পূরণ করতে হবে; বিশেষ ফরমটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটি কমিটি কাজ করবেন। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পিতা-মাতার নাম নির্ধারণ করা হবে; রাষ্ট্র একজন অভিভাবক নির্ধারণ করে দিবে; পিতা-মাতার নামের ঘরে প্রযোজ্য নয়/নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক; সংখ্যা অনুপাতে প্রত্যেক স্তরে ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য আসন সংরক্ষণ; স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা সদস্যদের মধ্যে একজন ট্রান্সজেন্ডার সদস্য রাখা যেতে পারে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে); এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনের ৫০টি আসনের মধ্যে একটি আসন ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য সংরক্ষণ।

তিস্তা
শিশু নিবাসে রক্ষিত তথ্য ভান্ডার তেকে তথ্য সংগ্রহ; যাদের পিতা-মাতার নাম নাই বা পরিচয় জানা নাই, তাদের জন্য ভোটার তালিকা/জাতীয় পরিচয়পত্রে তাদের ঐসব তথ্য বাধ্যতামূলক না করা; তাদের জন্য ভোটার/ জন্ম নিবন্ধন পৃথক ফরম ব্যবহার করা; জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিধিমালা-২০১৭ এর বিধি ২(১১)এর জৈবিক পিতা-মাতা অংশ সংশোধন; এ বিষয়ে জড়িত বিভিন্ন সংগঠন/প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তিবর্গ; কোন দেশ এ কাজটি ইতোপূর্বে করে থাকলে সেখানে কেস স্টাডি করা; ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি পুনর্বাসন আইন-২০১১ ও বিধিমালা-২০১৫ সংশোধন করে নিজ পরিচয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র/নিবন্ধন করা; যারা ভবঘুরে তাদের জন্য কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার তৈরী করা Cultural database; যারা ভবঘুরে তাদের চাকুরীর সুযোগ তৈরী কা ও সমাজে গ্রহণযোগ্য করার প্রচার কার্য পরিচালনা; এবং স্থানীয় সরকারসহ সকল নির্বাচনে আসন/পদ সংসক্ষণ রাখা। 

মেঘনা
নাম ন্যূনতম ২ শব্দে অভিভাবক- সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা কর্মকর্তা; ঠিকানা- সংশ্লিষ্ট এতিম খানা; পিতা-মাতা- অপ্রাপ্য; বয়স মেডিকেল অফিসার কর্তৃক; জন্ম নিবন্ধন সনদ সফটওয়্যার change; নির্বাচন ফরমে তৃতীয় একটা ঘর হবে; স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য আসন সংরক্ষণ করতে হবে; মনোনয়ন ফরমসহ সংশ্লিষ্ট ফরমে পরবর্তন হবে; এবং লিঙ্গ ঘরে ‘হিজড়া’ সংযোজন করা।

যমুনা
নিবন্ধন ফরম-২ লিঙ্গ ঘরে হিজড়ার পরিবর্তে রুপান্তরিত লিঙ্গ (টিজি) লেখা; ভোটার তালিকা বিধিমালা-২০১২, সংশোধন করতে হবে; শিশু পল্লীতে বেড়ে উঠা শিশুদের পিতা-মাতার ঘরে অপ্রাপ্য লেখা; বিভিন্ন নির্বাচনে আসন নির্ধারণ সকল (টিজি) এর জন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ; এনআইডি সংশোধন সংক্রান্ত জটিলতা রুপান্তরিত লিঙ্গ ব্যবহার করা; এবং হিজড়া সংক্রান্ত যে গেজেট সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে করা হয়েছে সে গেজেটে সংশোধন আনা।

মধুমতি
পিতার নাম (ক) (খ) অন্যান্য/অজ্ঞাত/অপ্রাপ্য/অনিচ্ছুক; মাতার নাম (ক); (খ) অন্যান্য/অজ্ঞাত/অপ্রাপ্য/অনিচ্ছুক; আসন সংরক্ষণ সংক্রান্ত; হিজড়াদের (টিজি) জন্য বিভিন্ন নির্বাচনে আসন সংরক্ষণ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা: জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের ন্যায় হিজড়াদের (টিজি) জন্য এক বা একাধিক আসন সংরক্ষণ করা; এবং স্থানীয় সরকারের সকল স্তরের নির্বাচনে সকল পদে তাদের অভিপ্রায় অনুসারে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া।

বিভি/এইচকে/এসডি

মন্তব্য করুন: