• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

রংপুরেই তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের প্রসাধনী সামগ্রী

জুয়েল আহমেদ, রংপুর 

প্রকাশিত: ১৪:৫০, ৬ মার্চ ২০২২

আপডেট: ১৪:৫১, ৬ মার্চ ২০২২

ফন্ট সাইজ
রংপুরেই তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের প্রসাধনী সামগ্রী

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নে বিভর রংপুরের মানুষ। ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠছে অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠান। এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ও শিক্ষিত বেকার যুবদের কর্মসংস্থানের লক্ষে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করছেন এখানে। তৈরি করছেন বিশ্বমানের পণ্য সামগ্রী।

যেমন রংপুর কেমিক্যাল লিমিটেড। উত্তরের পিছিয়েপড়া রংপুরের বুকে যেন এক টুকরো স্পেন। বিদেশি আদলে তৈরি এই শিল্প প্রতিষ্ঠানে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি হচ্ছে ইউরোপের নামকরা ব্র্যান্ড ‘জুসেরা’র প্রসাধনী সামগ্রী যা বরকতময় জয়তুন ফল থেকে তৈরি। আনদালুস ক্লিনিক্যাল উপকরণ শতভাগ পরিবেশ বান্ধব।  কারখানার সব যন্ত্রপাতিই স্পেন থেকে আমদানি করা। রয়েছে স্পেনের বিশেষজ্ঞ কেমিষ্টদের দ্বারা প্রশিক্ষিত জনবল। বিদেশি মেশিনে দেশীয় শ্রমিকের হাতের পরশে তৈরি হচ্ছে জুসেরা শ্যাম্পু-কন্ডিশনার, জুসেরা ময়েশ্চারাইজিং বডি লোশন, জুসেরা বাথ জেল, জুসেরা নাইট ক্রীম, জুসেরা ডে ক্রীম, জুসেরা ফেসওয়াশসহ নানা প্রসাধনী সামগ্রী ও ক্লিনিক্যাল উপকরণ। স্পেন থেকে আনা কাঁচামাল দিয়ে উৎপাদিত এসব সামগ্রী আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনবে। এছাড়া বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপশি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম অর্জন তথা পরিচিতি পাবে রংপুর। ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হলেও ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরই বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাবে। আর এতে কর্মসংস্থান হবে প্রায় দুই হাজার শ্রমিকের। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বছরে রফতানি হবে কমপক্ষে হাজার কোটি টাকার পণ্য।

রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের পীরগঞ্জের বড়দরগা মকিমপুরে রংপুর কেমিক্যাল লিমিটেড’র অবস্থান। মহাসড়ক ঘেঁষে ছয় একর আয়তনের জমিতে গড়ে উঠেছে এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হলেও স্পেন থেকে আধুনিক মেশিনপত্র আমদানি করে স্থাপন করা, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরি করা, উৎপাদিত পণ্যের কাঁচামাল আমদানিসহ নানা কারণে কেটে যায় পাঁচটি বছর। অবশেষে ২০২১ সালের শুরুতে সম্ভাবনাময় এই প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব হয়। চলতি বছরই বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হবে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা এই শিল্প প্রতিষ্ঠানে তখন প্রায় দুই হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটবে।

প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক আব্দুল মালেক জানিয়েছেন, রংপুর কেমিক্যাল লিমিটেড’র স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন স্পেন প্রবাসী রংপুরের বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন মনু। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের রংপুরকে পরিচিত করানোর লক্ষ্যেই তার এই উদ্যোগ। দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর স্পেনে থেকে তিনি বিভিন্ন আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সেখানে তার এক বন্ধুর কেমিক্যাল কোম্পানি থেকে ধারণা নিয়ে স্পেনে একটি কসমেটিক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন মনোয়ার হোসেন মনু। যার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। মূলত দেশের উত্তরের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ নতুন উদ্যোক্তা তৈরির ধারণা নিয়ে স্পেন প্রবাসী মনোয়ার হোসেন মনু ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলেন রংপুর কেমিক্যাল লিমিটেড নামের এই শিল্প প্রতিষ্ঠান। এখানকার অত্যাধুনিক  মেশিনপত্রসহ উৎপাদিত পণ্যের কাঁচামাল স্পেন থেকে আনা উল্লেখ করে মহাব্যবস্থাপক আরও জানান, শুরুর দিকে স্পেন থেকে প্রকৌশলী ও কেমিষ্টরা এখানে এসে সবকিছু দেখভালের পাশাপাশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরি করে দিয়ে গেছেন। বর্তমানে তারাই এখন স্পেনে উৎপাদিত পণ্যের মান অনুযায়ী রংপুরেই তৈরি করছেন বিদেশে রপ্তানিযোগ্য প্রসাধনী সামগ্রী ও ক্লিনিক্যাল উপকরণ।

প্রধান ফটক পেরিয়ে দুই ধারে ফুলবাগানের ভেতর দিয়ে ঢুকতে হয় রংপুর কেমিক্যাল লিমিটেড’র কারখানায়। শুধু বাইরে নয়, ভেতরেও রয়েছে মনোরম পরিবেশ। অনুমতি সাপেক্ষে কারখানার ভেতরে প্রবেশ করতেও কর্তৃপক্ষের সরবরাহকৃত জীবানুমুক্ত পোশাক পরিধান করতে হয়। ভেতরে ঢুকে দেখা গেল, ইউনিফর্ম পরিহিত দক্ষ কর্মীবাহিনীর কর্মযজ্ঞ। শতর্কতার সঙ্গে বিভিন্ন মেশিনে বিভিন্ন ধরণের কাজ করছেন তারা। মেশিনের সাহায্যেই টিউব, বোতল কিংবা কন্টেইনারে ভরানো হচ্ছে শ্যাম্পু, বডি লোশন, বাথ জেল, ক্রীম, ফেসওয়াশ সহ। একই সঙ্গে মেশিনের মাধ্যমেই সেগুলোতে কর্ক-লেবেল লাগানোসহ প্যাকেটজাত করা হচ্ছে। কিছুক্ষণ সেখানে থাকলেই মনে হবে রংপুর কিংবা বাংলাদেশ নয়, বিদেশি কোনো কারখানায় রয়েছি। যদিও উত্তরের সস্তা শ্রমে দক্ষ কারিগররাই তৈরি করছেন বিদেশী মানের এসব প্রসাধনী সামগ্রী। নিজ এলাকায় ভিনদেশীদের এই কাজ করতে পেরে তারাও খুশি। কারখানার কেমিস্ট  ও কিউসি মোক্কাবের হোসেন জানিয়েছেন, ‘রংপুর কেমিক্যাল লিমিটেড এ কাজ করতে পেরে তিনি গর্বিত।  এখানে এসে সম্মানের সঙ্গে কাজ করে অর্জিত আয় দিয়ে সংসার চলছে তার। এছাড়া ভিনদেশীদের এই কাজে নিজেদের দক্ষ করে তোলার সুযোগ পেয়েছেন।’ 

কারখানার ভেতরে আলাদা দুটি সেক্টর রয়েছে। একটি প্রসাধনী সেক্টর, অন্যটি ক্লিনিক্যাল উপকরণ উৎপাদন সেক্টর। বর্তমানে এখানে ক্লিনিক্যাল উপকরণ হিসেবে বিশ্বমানের ফ্লোর ক্লিনার, গ্রিস রিমোভার, গ্লাস ক্লিনার, লিকুইড ডিসওয়াসার, টয়লেট ক্লিনার ও বিভিন্ন ধরণের লিকুইড হ্যান্ডসোপ উৎপাদন করা হচ্ছে। প্রত্যেক সেক্টরে আলাদা দক্ষ জনবল কাজ করেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ওয়ার্কার, ফিলিং অপারেটর, মেশিন অপারেটর,সুপারভাইজার, কিউসি, কেমিষ্ট, ইঞ্জিনিয়ারও এডমিন।

রংপুর কেমিক্যাল লিমিটেড’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন মনুর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ব্যক্তি উদ্যোগে এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হলেও অবশ্যই ব্যক্তিস্বার্থে নয়। দেশীয় পণ্যের চেয়ে এখনও দেশের মানুষের বিদেশি পণ্যের প্রতি আস্থা বেশি। তাই দেশে আমদানি নির্ভরতা কমানোসহ নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিদেশ থেকে আনা কাঁচামালে সেখানকার পণ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কারখানায় পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। রপ্তানিযোগ্য এসব পণ্য দেশের বাইরেও রপ্তানির সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানসম্মত পণ্যসামগ্রী উৎপাদনে রংপুরকে দেশের বাইরে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যেই প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয়েছে ‘রংপুর কেমিক্যাল লিমিটেড’। এছাড়া পিছিয়েপড়া এই অঞ্চলের দক্ষ শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটবে এই কারখানায়। সেই সঙ্গে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বছরে রফতানি থেকে আয় হবে এক হাজার কোটি টাকা।

বিভি/রিসি

মন্তব্য করুন: