ক্যাম্পাস জীবনের শেষের পাতায় বন্ধুরা থাকবে আমৃত্যু
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে। নৌকার গন্তব্য শহরের তীরে, নদীর বুকে জল খেলা করছে, একটু পরেই সূর্যাস্ত যাবে। বুকের বা পাশে কেমন যেন হাহাকার আর অদ্ভুত মায়া অনূভুত হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে বিদায় নিতে হবে শিক্ষা জীবনের বন্ধুদের কাছ থেকে। শিক্ষার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থেকে আসা আমাদের। কেউ কাউকে চিনতাম না। সময়ের স্রোতের সাথে সাথে আমরাও একে অপরের পরিচিত হলাম, হৃদয়ের খুব কাছের মানুষ হিসেবে জায়গা করে নিলাম।
শিক্ষা জীবনের শেষ প্রান্তে এসে উপলব্ধি করছি বন্ধুত্ব মানে জীবনের অংশ। বন্ধু মানে বুঝি অক্সিজেন। বন্ধু মানে একটা নতুন জীবন। কলেজ জীবনে থাকাকালীন এই বন্ধনটা যে কতটা শক্ত, শেষ প্রান্তে এসে সেটা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারছি। বন্ধু মানে এমন একটা সম্পর্ক যেখানে নিজেকে উজাড় করে দেওয়া যায়, সব কিছু প্রাণ খুলে বলা যায়। বন্ধু মানে বিশ্বাস ও ভালবাসা।
বন্ধুদের পরম ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আনমনে বুঝতেই পারিনি কখন যে শিক্ষা জীবনের শেষ প্রান্তে এসেছি চলে। নদীর স্রোতের মতই চলে গেল কলেজ জীবনের সর্বশেষ মাস্টার্স কোর্স। মাস্টার্সে এসে অনেক বন্ধুদের হারিয়ে ফেলতে হয়। অনেকে অনার্স শেষ করে চাকুরিতে যোগদান করেন, কেউ আবার অন্য ক্যাম্পাসে মাস্টার্স করে, অনেকে আবার এই ক্যাম্পাসে নতুন হিসেবে আগমন করে। তারপরেও অল্পদিনের কিছু পরিচয় থেকে যায় এ-মনে, মুছে না তো কিছু স্মৃতি কখনো এ-জীবনে।
সবাই চলে যাব, আবেগ, অনুভুতি ও ভালবাসায় ভরা প্রিয় কলেজ ক্যাম্পাস সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে। আর তাই শেষ বিদায়ে কিছু সুন্দরতম মুহূর্ত স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখার ক্ষুদ্র প্রয়াস। কলেজের ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের গত ২১মে ছিল শেষ বর্ষের ভাইভা। যাকে বলা যেতে পারে শিক্ষার্থীদের একাডেমি শিক্ষা জীবনের শেষ পদচিহ্ন। ভাইভা শেষ করে অনেকে কিছুটা সময় একত্রে হয়ে ছিলাম যমুনা নদীর চরে। অনেক থাকতে চেয়েও কর্মব্যস্তায় পারিনি এই বেলা শেষে।
ভাইভা শেষ করে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে চলে যাই যমুনার তীরে নৌকাতে করে ঘুরে বেড়াই যমুনা নদীতে। যমুনা সেতু ব্রিজের আশেপাশে মেতে উঠি নানা আয়োজনে। নানা রকম খাবারে সমাহার আর যমুনার বুক জুড়ে বালুচরের প্রকৃতির সৌন্দর্যে গ্রুপ ছবি উঠা ছিল যেন অন্য রকম এক দৃশ্যপট। বড্ড সময় কম সময়ে ফিরতে হবে নিজ গৃহে। নৌকা ফিরছে শহরের তীরে। যেতে নাহি দিব হায় তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়; কবিতার মতই সত্য যেতে দিতেই হবে রাখতে পারবো না ধরে।
কল্পনার জগতে নৌকার সামনে বসে আনমনে ভাবছিলাম নানা রকম আনন্দ ও উল্লাসের কথা, হয়তো আর হবে না করাও সাথে দেখা। বন্ধুত্বের স্মৃতি, ভালবাসার মানুষগুলো সবাই দূরে চলে যাবে। আস্তে আস্তে যোগাযোগ কমতে থাকবে, কলেজের কারও সঙ্গে আবার কবে দেখা হবে জানি না। অনেকের সঙ্গে হয়তো কোনোদিন আর দেখাই হবে না। অতীতের বন্ধুদের কথা মনে করে অনেক সময় আমরা কল্পনার জগতে ফিরে যাই।
তাইতো অতীত আমাদের হাসায়, না হয় কাঁদায়। কিন্তু মাঝে মাঝে এই হৃদয়ে নাড়া দিবে, খুব মনে পড়বে। নদীর পাশে বসে কিংবা খোলা জানালার পাশে বাদলের রাতে আকাশে দিকে তাকিয়ে আনমনে ওই আকাশের বিদ্যুৎ চমকের আলোয় প্রিয় মুখগুলো ভেসে উঠবে। আসলে বন্ধুদের ভালবাসা রয়ে যাবে আজীবন। বন্ধুরা ছিল তাই হয়ত শিক্ষা জীবনটা এত সুন্দর ছিল।
বন্ধুরা সারাজীবন থাকবে এই হৃদয়ে। গল্পের ছলে কিংবা কখনও কোন স্মৃতি মনে পড়লে। বারে বারে ফিরে আসতে মন চাইবে সেই প্রিয় কলেজ ক্যাম্পাসে, বন্ধুদের কাছে। তবে, ফিরে আসা হবে না কালের বিবর্তনে। মাঝে মাঝে একটু দীর্ঘ নিঃশ্বাস আবার কর্মব্যস্ততা। এভাবেই কেটে যাবে আজীবন। তবু সবাই ভালো থেকো। বন্ধুত্বকে স্মরণে রেখ আমৃত্যু। ক্যাম্পাস জীবনের শেষের পাতায় তোরা থাকবি আমার হৃদয়ের মনিকোঠায়। স্মৃতির নতুন পাতা খুলতেই স্মরণ হবে তোদের পুরোনো পাতা। তখন হয়তো কিছু করার থাকবে না, কিন্তু থাকবে আমার ক্ষুদ্র পরিসরের লেখাখানি। ভালো থাকো তোমরা দেখা ও কথা হবে কোনো এক অনিশ্চয়তার দিনে।
বিভি/পিএইচ
মন্তব্য করুন: