• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ওয়েহাই শহরের অনিন্দ্য সুন্দর ‘শৈবাল বাংলো’

ইমরুল কায়েস, চীন থেকে

প্রকাশিত: ১৫:০৫, ২১ আগস্ট ২০২২

আপডেট: ১৫:০৭, ২১ আগস্ট ২০২২

ফন্ট সাইজ
ওয়েহাই শহরের অনিন্দ্য সুন্দর ‘শৈবাল বাংলো’

ওয়েহাই-এর সামুদ্রিক শৈবাল বাংলো

তিনদিক দিয়ে পীত সাগরে ঘেরা, পাহাড়-পর্বত আর সবুজ বনায়ণে ভরা চীনের পূর্ব উপকূলীয় শহর ওয়েহাই। পীত সাগর চীনের মূল ভূখন্ড এবং কোরিয়া উপদ্বীপের মাঝে অবস্থিত। গোবি মরুভূমির ধুলিঝড় থেকে উড়ে আসা বালুর কণাগুলি সাগরটির পানিকে হলুদ রঙে রাঙিয়ে তোলে বলে এর নাম পীত বা হলুদ সাগর।

এর রয়েছে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় অঞ্চল। উপকূল বরাবর রয়েছে এক হাজার এক কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা। উপকূলীয় এত দীর্ঘ রাস্তা বিশ্বের আর কোথাও আছে কিনা সন্দেহ। রাস্তার এক পাশে পীত সাগর অন্য পাশ দিয়ে পাহাড়ী বনায়ণ। কিছু জায়গায় সমুদ্রের কিছুটা ভেতর দিয়েও রাস্তা চলে গেছে। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই ওয়েহাই উপকূলীয় অঞ্চল। কিছুদুর পরপর টুরিস্ট স্পট। পর্যটকরা এসব জায়গায় গাড়ি থামিয়ে সমুদ্র সৈকত, পাহাড়, বন, পার্কসহ প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকন ও উপভোগ করে।

ওয়েহাই শহরে ইমরুল কায়েস

বাণিজ্যিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ হলেও উপকূলীয় অঞ্চল, সমুদ্র সৈকত এবং সাগর তীরবর্তী সামুদ্রিক শৈবাল বাংলোর জন্য খ্যাতি রয়েছে এই শহরের। উপকূলীয় অঞ্চলের অনন্য, অসাধারণ স্বতন্ত্র এই শৈবাল বাংলোগুলো দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। সারা বছর পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকে বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকা। সাগরের তীরবর্তী দাঝুয়াংশুচিলা একটি প্রাচীন গ্রাম। ওয়েহাই শহরের প্রশাসনিক অধীনস্ত এই গ্রামের বাড়িগুলো স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যযুক্ত সামুদ্রিক শৈবালের। গ্রামের প্রবেশমুখেই রয়েছে একটি প্রদর্শণী কেন্দ্র। এর আয়তন ৩০০ স্কয়ার মিটার। এখানে গ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্যউৎপাদিত পণ্যসামগ্রীসহ নানা কিছুর প্রদর্শনী রয়েছে। যে কেউ এই প্রদর্শনী কেন্দ্রে প্রবেশ করলে গ্রামটি সম্পর্কে একটি ধারণা পাবেন। গ্রামের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে অপ্রশস্ত একটি ক্যানাল বা পানির ধারা। যাতে ফুটে রয়েছে অগণিত শাপলা ফুল। সাঁতরে বেড়াচ্ছে লাল রঙের বিশেষ প্রজাতির মাছ। ক্যানালের দুপাশ দিয়ে বরাবর চলে গেছে পাথরের রাস্তা। কিছুদুর পর পর পাথরের তৈরি ছোট্ট সেতু দিয়ে ক্যানালের দুপাশের রাস্তাকে সংযুক্ত করা। রাস্তার পাশ দিয়ে সারি সারি ঘরবাড়ি। বাড়ির ঘরগুলো দ্বোচালা। হালকা বাদামী ধূসর সাদা রঙের শুকনো সামুদ্রিক শৈবাল দিয়ে তৈরি অনন্য সুন্দর ছাদ। দেখতে অনেকটা আমাদের দেশের ছনের ঘরের মত। তবে দেয়ালগুলো সামুদ্রিক পাথর দিয়ে তৈরি।

গ্রামটিতে ঢুকলে যে কেউ নস্টালজিক হতে বাধ্য। আগস্ট এই গ্রামটি ঘুরে দেখার সুযোগ হয়। দাঝুয়াংশুচিলা গ্রামের ৬০০০ ফুট এলাকায় সামুদ্রিক শৈবালের তৈরি ছাদযুক্ত ২৯০টি ঘর আছে। কিছু কিছু ঘর ২০০ বছরেরও বেশি সময় আগের তৈরি। এই গ্রামে ৭৯০ জন বাসিন্দার বসবাস। তবে অনেক বাড়িরই গেট তালাবদ্ধ দেখেছি। এমনকি গেটের দরজায় নক করেও কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। সামুদ্রিক শৈবালের এই গ্রামটি আসলেই অনন্য সুন্দর মনোমুগ্ধকর।

পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন ওয়েহাই শহরে

এছাড়াও ওয়েহাইয়ের সমুদ্র তীরে ৫০টির বেশি সামুদ্রিক শৈবাল বাংলো রয়েছে। এসব বাংলোয় পর্যটকরা অবকাশ যাপন করেন। বাংলোগুলোর ভেতরে অত্যাধুনিক সব ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে। কোন কোন বাংলোয় আছে সুইমিংপুলসহ আকর্ষণীয় স্থাপনা। ওয়েহাইয়ের সমুদ্র তীরবর্তী রংচেং হুয়াশিং হোটেল এরকম ৭টি সামুদ্রিক শৈবাল বাংলো তৈরি করেছে। পর্যটকরা যাতে সামুদ্রিক শৈবাল বাংলোয় অবকাশযাপন উপভোগ করতে পারে সেজন্যই তাদের এ উদ্যোগ। তবে একটি বাংলোয় প্রতি রাত অবস্থানের জন্য গুনতে হবে হাজার ৮০০ ইউয়ান বা প্রায় এক লাখ টাকা। অবকাশ যাপনের পাশাপাশি রয়েছে সামুদ্রিক নানা জাতের মাছ, স্কুইড, চিংড়ি, শামুক, ঝিনুকসহ নানা ধরনের সি ফুডের স্বাদ আস্বাদনের সুযোগ। পীত বোহাই সাগরের তীরবর্তী ইয়ানথাই ছিংদাও শহরের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় অঞ্চলেও সামুদ্রিক শৈবাল বাংলো রয়েছে।

নীল শহর ওয়েহাই

ছিং সম্রাটদের আমলে অবকাশ কেন্দ্র  হিসেবে সমুদ্র তীরে সামুদ্রিক শৈবাল বাংলো বা ঘর তৈরি করা হয়। এরপর ইউয়ান সম্রাটদের আমলে (১২৭১-১৩৬৮) সাধারণ মানুষও সমুদ্র তীরে শৈবালের ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করা শুরু করে। সামুদ্রিক শৈবালের তৈরি একটি ঘর সাধারণত একশ বছর পর্যন্ত টেকসই হয়। এই ঘরের বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্য আছে। ঘরগুলো গরমের সময় ঠান্ডা এবং শীতের সময় গরম থাকে। কারণেই অবকাশ যাপন কেন্দ্র হিসেবে সামুদ্রিক শৈবাল বাংলোগুলো পর্যটকদের কাছে দিন দিন আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। একদিকে সবুজ বন অন্যদিকে পীত সাগরের স্বচ্ছ নীল পানি আর উপরে নীল আকাশ। সবমিলে প্রকৃতির সবটুকু রঙ, রস যেন উপচে পড়ে শৈবাল বাংলোগুলোয়। ২০০৬ সালে সামুদ্রিক শৈবাল বাংলাগুলো শানতং প্রদেশের হেরিটেজ বা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায়। ওয়েহাই এর শতকরা ৪২ ভাগ জায়গা সবুজ বনায়ণে ঘেরা। এজন্য ওয়েহাইকে নীল শহর বা প্রাকৃতিক শহর নামে ডাকে চীনারা।

বিভি/এমআর

মন্তব্য করুন: