• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

এক দিনে কুমিল্লার ‘শালবন বিহার’ ভ্রমণ

মাজহারুল ইসলাম শামীম, ফেনী সরকারি কলেজ

প্রকাশিত: ২১:১১, ২১ আগস্ট ২০২২

ফন্ট সাইজ
এক দিনে কুমিল্লার ‘শালবন বিহার’ ভ্রমণ

ঋতুর পালাবদলে আর কয়েকটা মাস পর-ই আসছে শীতকাল। যাকে আমরা ভ্রমণের মৌসুমও বলতে পারি। এ সময় ভ্রমণপিয়াসী লোকজন নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ান। অনেকেই আছেন যাঁরা সময় স্বল্পতার কারণে ঘুরতে যেতে পারেন না। সে কারণেই এক দিনে গিয়ে সব দেখে আবার ওই দিনই ফিরে আসা যাবে এমন জায়গা পছন্দ অনেকের।

ঢাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে একদিনে ঘোরার জন্য অনেক জায়গা আছে। তবে আমি এমন এক জায়গার নাম বলবো, যেখানে আপনি একদিনেই অনেক কিছু দেখতে পারবেন, পাবেন ঐতিহ্য ও প্রকৃতির ছোঁয়া। সেই স্থানটি কুমিল্লার ‘শালবন বিহার’। প্রাচীনকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন ছুটে এসেছেন সৌন্দর্যের টানে কুমিল্লার শালবন বিহারে। এখানে প্রতিবছরই শীতে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হয়। তাই কাজের ফাঁকে একটুখানি রিল্যাক্স হতে এমন জায়গা সত্যিই অতুলনীয়।

শালবন বৌদ্ধ বিহার বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। কুমিল্লা জেলার কোটবাড়িতে লালমাই পাহাড়ের মাঝামাঝি এলাকায় এ বিহারটির অবস্থান। বিহারটির আশপাশে এক সময় শাল-গজারির ঘন বন ছিল বলে এ বিহারটির নামকরণ হয়েছিল শালবন বিহার। এ বিহারটি পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের মতো হলেও আকারে ছোট। ১৮৭৫ সালের শেষ দিকে বর্তমান কোটবাড়ি এলাকায় একটি সড়ক তৈরির সময় একটি ইমারতের ধ্বংশাবশেষ উন্মোচিত হয়ে পড়ে।

সে সময় আবিষ্কৃত ধ্বংসাবশেষকে একটি দুর্গ বলে অনুমান করা হয়েছিল। ১৯১৭ সালে ঢাকা জাদুঘরের অধ্যক্ষ নলিনী কান্ত ভট্টাশালী সে এলাকায় যান এবং উক্ত এলাকায় অনুসন্ধান পরিচালনাকালে ধ্বংশাবশেষটিকে রণবংকমল্ল হরিকেল দেবের তাম্রশাসনের (খৃষ্টীয় তের শতক) দুর্গ ও বিহার পরিবেষ্টিত পট্টিকেরা নগর বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যদিও অপর প্রত্নতাত্তিকদের মত অনুযায়ী এটি ছিল জয়কর্মান্তবসাক নামক একটি প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ।

শালবন বিহারের ছয়টি নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ পর্বের কথা জানা যায়। আকারে চৌকো শালবন বিহারের প্রতিটি বাহু ১৬৭.৭ মিটার দীর্ঘ। বিহারের চার দিকের দেয়াল পাঁচ মিটার পুরু। কক্ষগুলো বিহারের চার দিকের বেষ্টনি দেয়াল পিঠ করে নির্মিত। বিহারে ঢোকা বা বের হওয়ার মাত্র একটাই পথ ছিল। এ পথ বা দরজাটি উত্তর ব্লকের ঠিক মাঝামাঝি স্থানে রয়েছে। প্রতিটি কক্ষের মাঝে ১.৫ মিটার চওড়া দেয়াল রয়েছে। বিহার অঙ্গনের ঠিক মাঝে ছিল কেন্দ্রীয় মন্দির। বিহারে সর্বমোট ১৫৫টি কক্ষ আছে। ধারণা করা হয় যে এখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা থাকতেন এবং ধর্মচর্চা করতেন। কক্ষের সামনে ৮.৫ ফুট চওড়া টানা বারান্দা ও তার শেষ প্রান্তে অনুচ্চ দেয়াল। প্রতিটি কক্ষের দেয়ালে তিনটি করে কুলুঙ্গি রয়েছে যেখানে অতীতে প্রতিমা বা তেলের প্রদীপ ইত্যাদি রাখা হতো। অন্যদিকে চার দিকের দেয়াল ও সামনে চারটি বিশাল গোলাকার স্তম্ভের ওপর নির্মিত হলঘরটি ভিক্ষুদের খাবার ঘর ছিল বলে ধারণা করা হয়। হলঘরের মাপ ১০ মিটার বাই ২০ মিটার। হলঘরের চার দিকে ইটের চওড়া রাস্তা রয়েছে। নানা সময়ে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে বিহারটির ধ্বংসাবশেষ থেকে আটটি তাম্রলিপি, প্রায় ৪০০টি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, অসংখ্য পোড়া মাটির ফলক বা টেরাকোটা, সিলমোহর, ব্রৌঞ্জ ও মাটির মূর্তি পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য যে,এই বিহার থেকে সংগৃহীত বিপুল পরিমাণ প্রত্নসম্পদ ময়নামতি জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে।

এবার আপনাদের সাথে আমার শালবন বিহার ভ্রমণ সম্পর্কে বিস্তারিত বলবো। তারিখ টা ছিলো ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস। আমি যখন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য গেলাম তখন পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে বাড়ি ফেরার আগে শালবন বিহার ভ্রমণটা করছিলাম। আপনারা কেউ যদি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যান তাহলে আপনাদের জন্য ও সহজ হবে ভ্রমণ টা।কারণ,  কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথেই অবস্থিত শালবন বিহার। সে ভ্রমণে আমার সঙ্গী ছিলো আমার ২ জন বন্ধু। তারাও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলো। আমরা প্রথমে টিকেট কাটলাম শালবন বিহারে প্রবেশের জন্য। টিকেট মূল্য বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ময়নামতি জাদুঘর ও শালবন বিহারের পৃথক ২০টাকা করে টিকেট। ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ছেলে-মেয়েদের জন্য পাঁচ টাকা করে টিকেট। সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য ১০০ টাকা করে টিকেট। অন্য বিদেশি নাগরিকদের জন্য ২০০ টাকা করে টিকেট বিক্রি করা হয়।

শালবন বিহারে আমরা যা যা দেখলাম তা হলো, শালবন বিহারে ১৬৭.৭ মিটার বিশিষ্ট চারপাশে বাহু। বিহারের চার দিকের দেয়াল পাঁচ মিটার পুরু। কক্ষগুলো বিহারের চার দিকের বেষ্টনী দেয়াল পিঠ করে নির্মিত। বিহারে ঢোকা বা বের হওয়ার মাত্র একটাই পথ ছিল। এ পথ বা দরজাটি উত্তর ব্লকের ঠিক মাঝামাঝি স্খানে রয়েছে। প্রতিটি কক্ষের মাঝে ১.৫ মিটার চওড়া দেয়াল রয়েছে।

বিহার অঙ্গনের ঠিক মাঝে ছিল কেন্দ্রীয় মন্দির। বিহারে সর্বমোট ১৫৫টি কক্ষ আছে। কক্ষের সামনে ৮.৫ ফুট চওড়া টানা বারান্দা ও তার শেষ প্রান্তে অনুচ্চ দেয়াল। প্রতিটি কক্ষের দেয়ালে তিনটি করে কুলুঙ্গি রয়েছে। কুলুঙ্গিতে দেবদেবী, তেলের প্রদীপ ইত্যাদি রাখা হতো। এই কক্ষগুলো ছিল বৌদ্ধ ভিক্ষুরা থাকতেন। সেখানে বিদ্যাশিক্ষা ও ধর্মচর্চা করতেন।

বিহারের বাইরে প্রবেশ দ্বারের পাশে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একটি হলঘর রয়েছে। চার দিকের দেয়াল ও সামনে চারটি বিশাল গোলাকার স্তম্ভের ওপর নির্মিত সে হলঘরটি ভিক্ষুদের খাবার ঘর ছিল বলে ধারণা করা হয়। হলঘরের মাপ ১০ মিটার গুণ ২০ মিটার। হল ঘরের চার দিকে ইটের চওড়া রাস্তা রয়েছে। এসব প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো দেখলে আপনার মনও নিমিষেই  আনন্দে ভরে যাবে। সত্যি আমি কোনো কিছু বাড়িয়ে বলতেছি না। একদম ঠিক এই রকম দৃশ্য। 

এবার আপনাদেরকে শালবন বিহারে যাওয়া পথ সম্পর্কে বলবো। আপনি ঢাকা বা চট্টগ্রাম বা দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে কুমিল্লা এসে নামবেন। এরপর আপনি কুমিল্লা শহর থেকে চলে যান টমছম ব্রিজ বাস স্ট্যান্ড এ। সেখানে সিএনজি স্ট্যান্ড পাবেন। লোকালে গেলে লাগবে ১০ টাকা আর যদি রিজার্ভ যেতে চান সর্ব্বোচ্চ ৬০ টাকা। আপনাকে সিএনজি ওয়ালা নামাবে কোটবাড়িতে। সেখান থেকে অটোরিকসা করে যেতে হবে শালবন বিহার। ভাড়া নিবে ৫ টাকা।

এবার আসি সেখানে গিয়ে যদি কেউ রাত্রি কেউ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে তাহলে আপনার জন্য কোনো চিন্তা হবে না থাকার ব্যাপারে।
এছাড়া আপনি থাকতে পারেন, কুমিল্লা ক্লাব, কুমিল্লা সিটি ক্লাবসহ বেশকিছু হোটেল ও গেস্ট হাউজ রয়েছে এখানে। এসি কিংবা ননএসি সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। আর প্রতি কক্ষে প্রতি রাত্রি যাপন খরচ হবে ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা। এছাড়া থাকার জন্য আছে হোটেল চন্দ্রিমা, হোটেল সোনালী, হোটেল, শালবন, হোটেল, নিদ্রাবাগ, আশীক রেস্ট হাউস ইত্যাদি। ভাড়া ২০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে।

যাই হোক আপনাদেরকে ভ্রমণের যাওয়ার এবং থাকার বিষয়ে বললাম। যদিও আমাদের যাওয়া এবং থাকা নিয়ে সমস্যা হয়নি। কারণ আমরা তখন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য এক পরিচিত লোকের বাসায় ছিলাম। আমরা দুপুর পর্যন্ত ছিলাম শালবন বিহারের মধ্যে। এরপর আমরা শালবন বিহারের সৌন্দর্য উপভোগ করে ত্যাগ করলাম শালবন বিহার। সত্যিই অসাধারণ এক মহূর্ত ছিলো। এরপর আমরা আমাদের বাকি অন্যান্য কাজ শেষ করে আমাদের বাড়ি ফিরার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। এভাবে শেষ হলো আমাদের ‘শালবন বিহারের’  ভ্রমণ অধ্যায়। 




 

বিভি/রিসি

মন্তব্য করুন: