• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

আদি পেশা ফিরছেন গোপালগঞ্জের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী

মনোজ সাহা, গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ০৮:২৯, ১১ আগস্ট ২০২২

আপডেট: ১০:২০, ১১ আগস্ট ২০২২

ফন্ট সাইজ
আদি পেশা ফিরছেন গোপালগঞ্জের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী

গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া সড়কের পাশে নিলফা বাজার সংলগ্ন সরকারি জমিতে খুপরি ঘরে বসবাস করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ১২টি পরিবার। এরা পেশায় বাঁশ বেত পণ্য প্রস্তুকারী। বাজারে এ পণ্যের চাহিদা নেই। তাই ছেলে মেয়ে নিয়ে এদের অভাবের সংসার। এদের জীনযাত্রারমান খুবই অনুন্নত। এদেরকে উন্নয়নের মূল স্রোত ধারায় ফেরাতে উদ্যোগ নেয় গোপালগঞ্জ সমাজসেবা অধিদপ্তর। ওই অধিদপ্তর তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেক পরিবারকে ১৮ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছে। এতে তারা আদি পেশা ফিরে পেয়েছে। এই টাকাকে পুঁজি করে তারা জীবন জীবিকার অবলম্বন খুঁজে পেয়েছেন।

এভাবেই জেলার কামার, কুমর, বাঁশ, বেত প্রস্তুতকারী, জুতা মেরামত ও প্রস্তুতকারী এবং সেলুন কর্মীসহ ৫ শ্রেণির প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ১২০ পরিবারকে সমাজসেবা অধিদপ্তর উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নিয়ে এসেছে।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কুশলী ইউনিয়নের নিলফা গ্রামের গৃহবধূ শিল্পী বিশ্বাস (৩২) বলেন, বাঁশ, বেতের কাজ আমাদের আদি পৈতৃক পেশা। আমি বাঁশ, বেতের সব কাজ জানি। বাঁশ, বেত দিয়ে চালন, কুলা, ডোলা, খালই, পোলো, মাছ শিকারের দুফর সহ সব কিছুই তৈরি করতে পারি। এ্যালুমুনিয়াম ও প্লাস্টিক পণ্যের ব্যাপক প্রচলন হয়েছে। তাই আমাদের পণ্যের চাহিদা দিন দিন কমছে। এ কারণে আদি পেশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলাম। স্বামী সন্তান নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছিলাম। সমাজসেবা অধিদপ্তর আমাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ শেষে  ১৮ হাজার টাকা দিয়েছে। এই টাকা দিয়ে বাঁশ, বেত কিনেছি। এখন বাঁশ বেতের কুটির শিল্পের পণ্য তৈরি করছি। বাজারে এ পণ্যের চাহিদা রয়েছে। বিক্রিও হচ্ছে ভাল। তাই প্রতিদিন এখান থেকে ৮ শ’ থেকে ১ হাজার টাকা আয় করতে পারছি। এতে সংসারের আয় ও স্বচ্ছলতা বেড়েছে। সন্তানদের পড়াশোনা কারাতে পারছি। আমরা এখন বেশ ভাল আছি। এছাড়া আমাদের বাড়ি ঘরের খারাপ আবস্থা দেখে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রশাসন প্রশানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ দিয়েছে। আমরা ওই ঘরে চলে যাবো।

নিলফা গ্রামের গৃহবধূ ববিতা রায় (৩৫) বলেন, আমরা সবচেয়ে অবহেলিত ছিলাম। আমদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। এই প্রকল্পের আওতায় আমরা প্রশিক্ষণ ও টাকা পেয়েছি। এখন কর্মসংস্থানের অবলম্বন পেয়েছি। সেই সাথে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর দুই উপহারে জীবন বদলে গেছে। স্বামী, সন্তান নিয়ে সুখের ঠিকানা পেয়েছি। স্বামীর পাশাপাশি প্রতিদিন বাঁশ বেতের কাজ করে ৫ শ’ থেকে ১ হাজার টাকা আয় করতে পারছি। এই ব্যবস্থা করে দেওয়ায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

একই গ্রামের সমর দাস বলেন, এখন হাট বাজারে বাঁশ বেত পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। কারণ এখন খুব কম মানুষ এই পণ্য নিয়ে বাজারে যায়। বাজারে এই অল্প পণ্য নিয়ে গেলেই বিক্রি হয়ে যায়। যদি ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় এ পণ্যের বাজার সৃষ্টি কার যায়,তা হলে আমরা আরও বেশি মূল্য পেয়ে লাভবান হতে পারব। 

গোপালগঞ্জ সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের  আওতায় কামার, কুমর, বাঁশ,বেত প্রস্তুতকারী, জুতা মেরামত ও প্রস্তুতকারী এবং সেলুন কর্মীরা আদি পেশায় ফিরেছেন। আমরা এই ৫ শ্রেণির প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মানুষকে চিহ্নিত করেছি। তারপর ১২০ জনকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেককে ১৮ হাজার টাকার অনুদান দিয়েছে। এই টাকাকে পুঁজি করে ১২০ পরিবার জীবন জীবিকা  চালিয়ে নিচ্ছেন। এদের তৈরি করা পণ্য টুঙ্গিপাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিপণনের জন্য আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আশাকরছি এটি বাস্তবায়িত হলে ওই শ্রেণির মানুষ তাদের উৎপাদিত পণ্যের ভালো দাম পাবেন।

এছাড়া আমরা জেলার ৫ উপজেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ ও অনুদান দিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠা করার কাজ অব্যাহত রেখেছি। 

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম মঙ্গলবার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের উপকারভোগীদের প্রশিক্ষণ পরবর্তী কার্যক্রম পরিদর্শন করে বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আদি পেশা যেন হারিয়ে না যায় সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করে তাদেরকে উন্নয়নের মূল স্রোতে আনা হচ্ছে। সারাদেশে এ বছর প্রায় ২৬ হাজার প্রান্তিক পেশাজীবীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। অনলাইন জরিপের মাধ্যমে প্রায় সোয়া ৪ লাখ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ডাটাবেইজ তৈরি করা হয়েছে। যথাযথ প্রশিক্ষণ,  প্রশিক্ষণোত্তর আর্থিক অনুদান ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহের মাধ্যমে তাদের পেশাকে টিকিয়ে রাখা হবে।  

 
 

বিভি/রিসি

মন্তব্য করুন: