টাকা ছাড়া মেলে না জন্ম নিবন্ধন

টাকা ছাড়া মেলে না জন্ম নিবন্ধন। টাকা দেওয়ার পরও ভোগান্তির শেষ নেই। জন্ম সনদ বাণিজ্য নিয়ে ক্ষুব্ধ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বর্ণি ইউনিয়ন বাসী। কিন্তু সরকারি নিয়ম-নীতিকে তোয়াক্কা করে বর্নি ইউনিয়নের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর শিমুল বিশ্বাস মাত্রাতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। তিনি জন্ম সনদ প্রতি ৫ শ’ থেকে ২ হাজার টাকা আদায় করছেন। জন্ম নিবন্ধনের বয়স সংশোধনে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন তিনি।
জেলা পরিসংখ্যান অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকার জন্ম বা মৃত্যুর ৪৫ দিন পর্যন্ত কোনো ব্যক্তির জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিনা ফিসে প্রদানের বিধান রেখেছে। শিশুর বয়স ৫ বছর পর্যন্ত ২৫ টাকা ও ৫ বছরের উপরে সব বয়সীদের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন ফি ৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া জন্ম নিবন্ধনের জন্ম তারিখ সংশোধনের আবেদন ফি ১ শ’ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার ।
জন্ম নিবন্ধন নিতে আসা বর্ণি গ্রামের ছলেমান জমাদ্দারের অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর শিমুল বিশ্বাস জন্ম সনদ ডিজিটাল করতে ১ হাজার নিয়ে থাকেন। এছাড়া বয়স সংশোধনে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। সরকারি নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে ওই হিসাব সহকারি এখানে জন্ম সনদ নিয়ে বাণিজ্য শুরু করেছেন। তাই তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
বর্নি ইউনিয়নের বাসিন্দা কাজলী বেগম জানান, আমার ১৮ বছর বয়সী মেয়ের জন্ম নিবন্ধনের জন্য সার্টিফিকেটসহ অন্যান্য কাগজপত্র জমা দিয়েছি। আমাকে এক সপ্তাহ পরে আসতে বলে হিসাব সহকারী শিমুল। এক সপ্তাহ পরে গেলে জন্ম নিবন্ধন করতে ২ হাজার টাকা দাবি করেন। তাই জন্ম নিবন্ধন না করেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।
দক্ষিণ বর্নি গ্রামের রাঙ্গা হোসেনের স্ত্রী সোমা বলেন, ১৮ বছর বয়সী মেয়ে ও আমার জন্ম নিবন্ধন করতে গিয়ে শিমুল বিশ্বাসকে ৭ শ’ টাকা দিয়েছি। কিন্তু দুই মাস ধরে ঘুরে ও সেই জন্ম নিবন্ধন এখনো পাইনি।
বর্ণি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র নাসরুল বলেন, আমার বয়স সংশোধন করতে গেলে শিমুল বিশ্বাস ৫ম শ্রেণি পাশের সার্টিফিকেট চায়। পরে সার্টিফিকেট নিয়ে গেলে বলে এতেও বয়স সংশোধন হবে না। আর কি কাগজপত্র লাগবে জানতে চাইলে ৫ হাজার দাবি করে। তাই আর জন্ম নিবন্ধন করিনি। আমরা গরিব মানুষ এতো টাকা কোথায় পাবো।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বর্ণি ইউনিয়নের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর শিমুল বিশ্বাস বলেন, জন্মনিবন্ধনের যদি সরকার নির্ধারিত ফি ৫০ টাকা। সেখানে ১০০ টাকা নিচ্ছি। ১০০ টাকার ফি ১শ’ ৫০ পঞ্চাশ টাকা বা ২শ’ টাকা নেই। কিছু ব্যক্তি বা পরিবারের সদস্যদের জন্ম নিবন্ধন আমরা সরকারি ফি ছাড়াই দেই। তাই সেই টাকা এডজাস্ট করতে অন্যদের কাছ থেকে একটু বাড়তি রেট নিতে হয়। এছাড়া ৫ হাজার ১০ হাজার টাকা দাবির বিষয়টি তিনি সত্য নয় বলে জানান।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম। সরকার নির্ধারিত ফি থেকে বেশি টাকা নেওয়া অপরাধ। সেখানে সেবা গ্রহীতাদের হয়রানি করা হয় কিনা ? তা খতিয়ে দেখা হবে। এই বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করা হবে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জন্ম সনদে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে কেউ পার পাবেন না।
বিভি/রিসি
মন্তব্য করুন: