• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

মাদক হিসেবে অক্সি-মরফোন ব্যবহারে ঝুঁকছে তরুণরা, ডিবি’র উদ্বেগ

প্রকাশিত: ১৪:৪৩, ২৩ নভেম্বর ২০২১

ফন্ট সাইজ
মাদক হিসেবে অক্সি-মরফোন ব্যবহারে ঝুঁকছে তরুণরা, ডিবি’র উদ্বেগ

ব্যথানাশক ওষুধ অক্সি-মরফোন ট্যাবলেটকে নেশা হিসেবে ব্যবহার করছে মাদকাসক্ত তরুণরা। এটি ব্যবহার করা হয় ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা কাজে। এই ট্যাবলেট এখন বিশ্ববিদ্যায় পড়া তরুণদের নেশার অন্যতম মাদক হিসেবে ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু এই ট্যাবলেট সেবনের ফলে কিডনী নষ্ট হওয়াসহ উচ্চ পর্যায়ের মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণরা অকালে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রধান।

ডিবি বলছে, অক্সি-মরফোন একটি ইউফোরিক ড্রাগ। যা মস্তিষ্কে প্রচণ্ড আনন্দ অনুভূতি তৈরি করে। এটি সেবনে শরীরে সাময়িকভাবে দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা ভুলিয়ে দেয়। ব্যথার সিগন্যাল গিয়ে মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করতে পারে না। মস্তিষ্ক বোধহীন, অসাড় হয়ে যায়। মূলত এই ট্যাবলেট শুধুমাত্র সেসব রোগীদের জন্য ব্যবহার করা হয় যারা ক্যান্সার আক্রান্ত হয়েছে বা বেশিদিন বাঁচবে না এবং যাদের শরীরে প্রচণ্ড আঘাতের কারণে অসহ্য ব্যথা হচ্ছে এমন ব্যক্তিদের। কিন্তু কেউ যদি টানা সাতদিন এই ট্যাবলেট সেবন করে তবে তার কিডনী ড্যামেজসহ উচ্চ পর্যায়ের মৃত্যু ঝুঁকি থাকে। 

গত ১৯ নভেম্বর বাবু বাজার এলাকা থেকে অক্সি-মরফোন মাদক হিসেবে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে মো. আলমগীর সরকার (৫৮) ও জাহিদুল ইসলাম (৩৪) নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি’র লালবাগ বিভাগের কোতয়ালী জোনাল টিম। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মিটফোর্ড এবং ধানমন্ডির সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস থেকে ১৩ হাজার পিস অক্সি-মরফোন (O- Morphon) ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। 

গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসন্ধানে ডিবি জানতে পারে রাজধানীসহ দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের তরুণরা এই মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে। 

মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) সকালে ডিএমপি’র মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবি প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার একে এম হাফিজ আক্তার। 

তিনি বলেন, অক্সি মরফোন হলো মরফিন-এর একটি এনালগ, যা একটি এনালজেসিক ড্রাগ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি ইনজেকশন থেকে ওরাল ফর্মে নিয়ে আসা হয়েছে। এটি মূলতঃ Central Nurve System (ব্রেইন) এ কাজ করে। তীব্র ব্যাথানাশক হিসেবে ক্যান্সার, হার্ট, দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত মৃত্যু পথযাত্রী রোগীর তীব্র ব্যাথা কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। মরফিন একটি ইউফোরিক ড্রাগ। যা মস্তিষ্কে প্রচন্ড আনন্দ অনুভতি তৈরি করে। শরীরে সাময়িকভাবে দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা ভুলিয়ে দেয়। ব্যথার সিগন্যাল গিয়ে মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করতে পারে না। মস্তিষ্ক বোধহীন অসাড় হয়ে যায়।

তিনি বলেন, মূলত মাদকসেবীরা অক্সি-মরফোন গুড়ো করে যেকোনো সিরাপ বা পানীয়’র সংগে মিক্স করে খেয়ে ফেলে। যুব সমাজ বিশেষ করে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে এই মাদকের ব্যাপক ব্যবহার গোয়েন্দাদের নজরে এসেছে।

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা বিপুল পরিমাণে ভয়ঙ্কর এই ড্রাগ সংগ্রহ করে মাদকসেবীদের কাছে বিক্রি করে আসছিলো। 

উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, যুবসমাজ বিশেষ করে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে এই মাদকের। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নতুন নেশা এখন এই মাদক। এটা খেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা তিনদিন পর্যন্ত নেশাগ্রস্থ থাকে। কিন্তু সর্বোচ্চ সাতদিন কেউ এটা খেলে তার কিডনী ড্যামেজ হয়ে যাবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যলয় শিক্ষার্থীরা এটা জানে না। এটা সত্যি উদ্বেগের বিষয়। এটি থামাতে হবে। তা না হলে আমাদের তরুণরা ধ্বংস হয়ে যাবে।

ডিবি প্রধান বলেন, এই ড্রাগটি মাদক দ্রব্য অধিদফতরের ‘ক’ শ্রেণীভুক্ত একটি মাদক। এটি ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের অনুমতি থাকতে হয়। সেই অনুমতির প্রেক্ষিতে এটি বিক্রির সময় রোগীর ডিটেইলসসহ তালিকা নিতে হয়। কিন্তু আমরা তদন্ত করতে গিয়ে দেখলাম এসবের কিছুই হচ্ছে না। উল্টো এই ড্রাগ তৈরির জন্য দেশে ১২০ টির মতো প্রতিষ্ঠান অনুমতি পেয়েছে। তার মধ্যে এই ড্রাগ তৈরির জন্য বরিশালে ৫০টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঢাকায় মাত্র ২৭টি প্রতিষ্ঠান। অথচ ঢাকাতে বেশি প্রয়োজন থাকার কথা। সেখানে বরিশালেই বেশি। কেন এই বেশি আমরা সেটি নিয়ে তদন্ত করবো।

এমন অনিয়মের দায় কাদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, আমরা এখনি কাউকে দায়ী করছি না। তবে তদন্তে নিশ্চয়ই সবকিছু পরিষ্কার হবে। যেকোনোভাবে এই ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যদি তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে হয়।

বিভি/এসএইচ/এএন

মন্তব্য করুন: