• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ফারদিন হত্যাকাণ্ড: চনপাড়া বস্তি যেন মাদকের হেডকোয়াটার্স (ভিডিও)

প্রকাশিত: ১৩:৩৫, ১৬ নভেম্বর ২০২২

আপডেট: ১৪:২৫, ১৬ নভেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ

রূপগঞ্জের কায়েত পাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকাটি পরিচিত 'চনপাড়া বস্তি' নামে। তবে স্থানীয়দের ভাষ্যমতে- চনপাড়া বস্তি এলাকা যেন মাদকের হেডকোয়াটার্স। দীর্ঘদিন ধরে এখানে প্রকাশ্যে চলছে মাদকের রমরমা বাণিজ্য। অথচ বস্তিজুড়েই মাদক নির্মূল কমিটির নামে টানানো বড় বড় বিলবোর্ড। আর সেই মাদক নির্মূল কমিটির দায়িত্ব যাদের হাতে, স্থানীয়রা বলছেন-তারাই মাদকের গডফাদার হিসেবে এলাকায় পরিচিত।

বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিনের মৃত্যুর আগে সর্বশেষ লোকেশন ছিল এই চনপাড়া। এরপর থেকেই চনপাড়ার ভয়ংকর সব তথ্য প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। ২৩টি মাদক মামলার আসামি রাশেদুল ইসলাম শাহীন ওরফে সিটি শাহীন সম্প্রতি র‌্যাবের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় বস্তিবাসীর মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও আতংক কাটেনি। প্রকাশ্যে এখনও কেউ শাহীনদের বিরুদ্ধে কথা বলতে চাইছেন না।

পরিচয় প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বস্তির এক বাসিন্দা বাংলাভিশনকে বলেন, ক্রশফায়ারে শাহীন মারা যাওয়ায় ৫ মাস পর এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরতে পারছি। গত ৫ মাস অনেকটা পালিয়ে ছিলাম। শাহীনের মাদক কারবারীর ঘটনায় র‌্যাবের একটি মামলায় আসামি হওয়ায় এলাকা ছাড়া হয়েছিলাম। আমার মতো অনেকেই কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে। তবে আতংক কাটেনি, কারণ শাহীন মরলেও তার গডফাদার বজলু এখনও বেঁচে আছে।

প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে উঠা চনপাড়া বস্তিতে বসবাস প্রায় লক্ষাধিক মানুষের। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত কায়েত পাড়া ইউনিয়ন পুরোটাই এই বস্তিকে ঘিরে। স্থানীয়রা বলছেন- এই ৯টি ওয়ার্ডের পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় মেম্বার ও প্যানেল চেয়ারম্যান বজলুর রহমান বজলু। আর এই বজলুর মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতো সিটি শাহীন ও রায়হানদের কয়েকটি বাহিনী। তবে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুক শাহীন নিহত হওয়ার পর এলাকায় নতুন আতংক বজলুর-রায়হান বাহিনী।

বজলুর কাছে এতটাই অসহায় চনপাড়ার বস্তিবাসী যে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তো দূরের কথা, কেউ কথা বলার সাহসও পাচ্ছেন না। মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে চনপাড়ায় অনুসন্ধানে গেলে বাংলাভিশনের কাছে বজলুর বিরুদ্ধে কথা বলার ঘন্টাখানেক পর এক ভুক্তভোগী বিশেষ অনুরোধ জানান, যেন তার বক্তব্য প্রচার না করা হয়। প্রচার করলে তার পরিবারের উপর খড়গ নামার হুমকি দিয়েছে বজলুর সাঙ্গপাঙ্গরা। তবে, এসব অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত বজলুরের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার বাসা ও অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে, ফারদিন হত্যা মামলার তদন্তে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। শীতলক্ষ্যা নদীতে ফারদিনের মরদেহ পাওয়া, ৪ নভেম্বর রহস্যজনক এক যুবককে বস্তিতে হত্যার তথ্য এবং ফারদিনের সবশেষ লোকেশন পর্যালোচনা করে গোয়েন্দারা আপাতত এইটুকু নিশ্চিত হয়েছেন, ফারদিনকে এই চনপাড়া বস্তিতেই মারা হয়েছে। তবে কি কারণে মারা হয়েছে তা নিশ্চিত হতে তদন্ত অব্যাহত আছে বলে জানান পুলিশ। ফারদিন হত্যা মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ছায়া তদন্ত করছে র‌্যাব, নৌপুলিশ ও নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশসহ কয়েকটি ইউনিট।

এলাকাবাসি জানায়, এই ঘটনায় চিহ্নিত মাদক কারবারি রায়হান ও তার কয়েকজন সহযোগীকে চনপাড়া থেকে বরিশালে পালিয়ে যাওয়ার সময় আটক করেছে ছায়াতদন্তকারী একটি সংস্থা। জিজ্ঞাসাবাদে ফারদিন হত্যার বিষয়ে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন তারা। তবে এখনি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সংস্থাটির কেউ। তবে ডিবি বলছে- সব তথ্য আমলে নিয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রধান ও ডিআইজি হারুন অর রশীদ বলেন, ফারদিন হত্যার রহস্য উদঘাটনে আমরা কাজ করছি। বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া সব তথ্যকে আমরা আমলে নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তদন্ত চলছে। আপাতত হত্যার মোটিভ এবং কারা জড়িত তার সুস্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে ফারদিন হত্যাকাণ্ডে আর যাই হোক, এটি পরিকল্পিত বলেই দাবি করছেন তার বাবা। ফারদিনের বাবা কাজী নুরুদ্দীন বলেন, আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তদন্ত সংস্থাগুলো ঘটনার রহস্য উদঘাটন করবেন, এই বিশ্বাস আমার আছে।

গত ৪ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার তিনদিন পর ৭ নভেম্বর শীতলক্ষ্যা নদী থেকে রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয় বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের। এই ঘটনায় তার বান্ধবী আমাতুল্লা বুশরাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

বিভি/ এসএইচ

মন্তব্য করুন: