২৪ হাজার বেতনে ৬ বছরেই কোটিপতি রাজউকের দুই কর্মচারী
আলিশান বাড়ির ৬ তলায় একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন রাজউকের কর্মচারী আব্দুল মোমিন। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের এই ভবনটিতে প্রায় দুই কোটি টাকার ওই ফ্ল্যাট থাকা মোমিনের সন্ধানে সেখানে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। বাসায় ঢুকতে না দিয়ে নিচে নেমে এসে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য না দিয়ে উল্টো তার স্ত্রীর বিনীত অনুরোধ- তাদের বিষয়ে যেন সংবাদ প্রচার না করা হয়।
সংবাদ প্রচার না করার অনুরোধের মূল কারণ- মাত্র ২৮ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করা মোমিনের এই ফ্ল্যাট বাসা ছাড়াও রাজধানীর মুগদার দক্ষিণ মান্ডায় রয়েছে সাত তলার বিলাসবহুল এই বাড়ি। সম্প্রতি একটি দৈনিকে অবৈধ টাকায় বাড়ি তৈরির তথ্য উঠে আসার পর বাড়ির নামফলকও মুছে ফেলেন মোমিন।
জানা গেছে- এই বাড়ির একটি ফ্ল্যাট ছাড়া বাকিগুলো ১০ হাজার টাকা করে ভাড়া দেওয়া। এছাড়া সাভারের ভাদাইল পুরোনো ইপিজেডসংলগ্ন হোসেন প্লাজার পাশে দুই বিঘা জমি কিনে টিনশেড তুলে পোশাককর্মীদের ভাড়া দিয়েছেন মোমিন। ওই জমির বর্তমান বাজারদর অন্তত ৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া পূর্বাচলে স্ত্রীর নামে একটি প্লট আছে বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
এক সময় অভাব-অনটনে থাকা মোমিন কিভাবে এতো সম্পদের মালিক হলেন- সে বিষয়ে জানতে রাজউকে গিয়ে তার দেখা মেলেনি। যদিও পরে অজ্ঞাত স্থান থেকে ফোন দিয়ে সংবাদ প্রচার না করতে অনুরোধ জানিয়ে চায়ের দাওয়াত দেন তিনি।
এদিকে, মাত্র ২৪ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করা রাজউকের আরেক কর্মচারী এমদাদ আলীও রাজধানীর বুকে গড়েছেন বিলাসবহুল বাড়ি। কাটাচ্ছেন আয়েশী জীবন।
রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় গড়ে তোলা ৬ তলা এই বাড়ির মালিক এমদাদ। রেখাকার থেকে পদোন্নতি পেয়ে সম্প্রতি নকশাকার হয়েছেন তিনি। তাই বেতন এখন ২৪ হাজার। আগে ছিল আরও কম। কিন্তু শুধু এই বাড়িই নয়, ডেমরায় আরও দুটি সাত কাঠার প্লট আছে তার।
তবে অবৈধ আয়ের অভিযোগের বিষয়ে জানতে রাজউকে গিয়ে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বন্ধ রয়েছে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও। পরে তার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করলেও বাসায় ঢুকতে দেয়নি দারোয়ান। তিনি জানান- এমদাদ আলী বাসায় নেই।
তথ্য বলছে- ১৯৯৮ সালের দিকে রাজউকে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে কাজ পায় মোমিন-এমদাদ। কিন্তু ২০০১ সালে চাকুরিচ্যুত হয় উভয়ে। এরপর ২০০৯ সালে চাকুরি ফিরে পেতে মামলা করেন তারা। হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৩ সালের দিকে চুক্তিভিক্তিক চাকুরি ফিরে পান তারা। এর কয়েকবছর পর ২০১৭ সালের দিকে চাকুরি স্থায়ী হয় তাদের। চাকরি স্থায়ী হওয়ার এই অল্প সময়ে এমন ভিত্ত-বৈভবে ফুলেফেপে উঠায় বিস্মিত অনেকে।
সাংবাদিক অমিতোষ পাল বলেন, রাজউকের স্তরে স্তরে যে লাগামহীন দুর্নীতির মহোৎসব চলছে, তারই নমুনা এই কর্মচারীরা।
এসব দুর্নীতির বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি রাজউকের চেয়ারম্যানের। রবিবার দীর্ঘ অপেক্ষার পরও তার অফিসে সাক্ষাৎ মেলেনি। পরে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এমন দুর্নীতির খবরে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে দুই মাসের মধ্যে রাজউকের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পদের হিসাব নিতে দুদক ও রাজউককে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে এতোদিন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
বিভি/এইচএস/এজেড
মন্তব্য করুন: