গণিতের ব্যবহারিক দিক ও কয়েকটি মৌলিক বৈশিষ্ট্যাবলী

সেরতাজ আক্তার শিক্ষার্থী, ফলিত গণিত বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
গণিত হলো সকল বিজ্ঞানের প্রবেশদ্বার ও চাবিকাঠি । তবে, অন্যান্য বিষয়ের মতোই গণিতের কাঠামোর মধ্যে শেখা সমস্ত জ্ঞান মানুষের জীবনে যে সুবিধা নিয়ে আসে তা বিভিন্ন মাত্রায় প্রকাশিত হয়ে থাকে। গণিত, সমস্যা সমাধান এবং চিন্তা করার প্রবণতার ফলে বিশ্লেষণাত্মক চিন্তার দক্ষতাকে বিকশিত করে তোলে।
এ ব্যাপারে খ্যাতিমান পদার্থ ও গণিতবিদ Alfred North Whitehead বলেন, "Mathematics in its widest sense is the development of all types of deductive reasoning."।
গাণিতিক দক্ষতার কারণে নিজের জীবনে যারা এর সুফল ভোগ করেছেন, তারা নিজেরাই এর উদাহরণ । আর এসব কারণেই মেধা যাচাইয়ের একটা কমন স্ট্যান্ডার্ড হলো গাণিতিক দক্ষতার মাত্রা পরখ করে দেখা।
গণিতের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে গণিতের ব্যবহারিক দিক ও বৈশিষ্ট্যাবলী নিয়ে সামান্য আলোকপাতের প্রয়াস চালাচ্ছি- সাধারণত দৈনন্দিন জীবনে শস্য বপণ থেকে শুরু করে ধর্মীয় আচারাদির নিমিত্তে পঞ্জিকা নির্ধারণেও গণিতের ব্যবহার রয়েছে। কারণ, গণিত ভবিষ্যতের অনুমিত প্রতিফলন তৈরি করে থাকে।
বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাভাবনা, যৌক্তিক বিকাশ এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতার মতো ক্ষমতাগুলি সরাসরি গণিতের সাথে সখ্যতার মাধ্যমেই আর্জিত হয়ে থাকে ।
বিখ্যাত গণিতবিদ James Bowman Lindsay-এর মতে, "মানুষের মনে চিন্তাশক্তি স্থায়ী করার অভ্যাস গড়ে তোলার পদ্ধতিই হল গণিত"। তবে, গণিতের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিফলিত পরিবর্তনগুলি সবার ক্ষেত্র একইভাবে পরিলক্ষিত হয় না।
উদাহরণস্বরূপ, একজন ভাস্কর বা স্থপতি গণিতের সুবিধা থেকে উপকৃত হয়ে তার শিল্পকর্মের বাহ্যিক অবকাঠামোগত সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে পারেন। আর, যারা শব্দ নিয়ে কাজ করে তাদের জন্য গণিত হলো চিন্তার দক্ষতা বৃদ্ধির অনন্য এক হাতিয়ার । তার মানে এই নয় যে, রাস্তায় হাঁটতে-চলতে কিংবা রাস্তা অতিক্রম করতে গণিতের উপরেই নির্ভর করে থাকতে হবে। আবার, গণিতকে বাস্তব জীবনে ব্যবহার করা যায় না এমনটা ভাবলেও কিন্তু ভুল হবে।
মোটাদাগে, গণিতের মৌলিক বৈশিষ্ট্যাবলী হলো- গণিত একজন ব্যক্তির বিশ্লেষণাত্মক চিন্তার দক্ষতাকে বিকশিত করে।
আমাদের মুখোমুখি হওয়া যে কোনো সমস্যাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন কোণ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম করে।
সাবধানে এবং বিশদভাবে চিন্তাভাবনা করে তাৎক্ষণিক সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথ প্রশস্ত করে।
চারপাশের মানুষের মতামতে নির্ভরশীল এবং অন্যের চিন্তাভাবনা দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে স্বাধীনভাবে চিন্তা করার প্রেরণা দেয়।
পদ্ধতিগত, পরিকল্পিত এবং প্রোগ্রামযুক্ত চিন্তাভাবনার দরজা খুলে দেয়।
মানুষকে তাদের সমালোচনা ও মতামত প্রকাশের অভ্যাস গড়ে তুলতে সক্ষম করে।
এটি মানসিক বিকাশে অবদান রাখে এবং ব্যক্তিকে বিভিন্ন বিষয়ে সাফল্য অর্জনে ধাবিত করে।
সর্বোপরি, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে এবং গৃহীত সিদ্ধান্তের ভবিষ্যত সম্পর্কে সঠিকভাবে চিন্তা করতে সক্ষম করে।
লেখক: সেরতাজ আক্তার
শিক্ষার্থী, ফলিত গণিত বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: