শিক্ষার্থীদের নাগালের বাইরে গবির বাস ভাড়া, কার্যকর হয়নি পরিবহন সেবা
প্রতিশ্রুতি দিয়েও গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) প্রশাসন শিক্ষার্থীদের জন্য বাস সেবা চালু করতে পারেনি। নির্ধারিত ভাড়া শিক্ষার্থীদের নাগালের বাইরে হওয়ায় রেজিস্ট্রেশন কমে গেছে, ফলে পরিকল্পনা থেমে গেছে ঘোষণাতেই।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পর প্রথমবারের মতো মানিকগঞ্জ ও চন্দ্রা রুটে শিক্ষার্থীদের জন্য বাস চালুর ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে বাস সেবা চালু হবে। আগ্রহী শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত ভাড়া জমা দিয়ে আবেদন সম্পন্ন করতে বলা হয়।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, মানিকগঞ্জ রুটের মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ১,৮০০ টাকা, প্রথমবার দিতে হয় দুই মাস ১৫ দিনের অগ্রিমসহ মোট ৪,৫০০ টাকা। চন্দ্রা রুটের মাসিক ভাড়া ১,২০০ টাকা এবং অগ্রিম ৩,০০০ টাকা। এছাড়াও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, প্রথমবার শিক্ষার্থীদের ২ মাস ১৫ দিনের অর্থ অগ্রিম জমা দিতে হবে এবং পরবর্তী তিন মাস পর পর অগ্রিম অর্থ জমা দিতে হবে।
কিন্তু এত উচ্চ ভাড়া নির্ধারণে আবেদন কমে আসে নাটকীয়ভাবে। প্রশাসনের দাবি, মাত্র ৫০–৫৫ জন শিক্ষার্থী আগ্রহ দেখালেও রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন আরও কমজন। ফলে পর্যাপ্ত আবেদন না পাওয়ায় বাস সেবা চালু করা সম্ভব হয়নি।
এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে একই রুটে বাস সেবা চালুর ঘোষণা দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সেই উদ্যোগ আজও বাস্তবায়িত হয়নি। অথচ ২০২৪ সালের জুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সোয়া কোটিরও বেশি টাকায় দুটি ৫২ আসনবিশিষ্ট শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস কেনা হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় যে ভাড়া নির্ধারণ করেছে তা বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও শিক্ষার্থীদের নাগালের বাইরে। মানিকগঞ্জ রুটগামী আইন বিভাগের শিক্ষার্থী অনিক হাসান বলেন, “বাস ভাড়া খুব বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। যদি মাসে ১,২০০ টাকা করা হতো, তাহলে অনেকেই আবেদন করত। আমরা মাসে গড়ে ২০ দিন যাতায়াত করি, অসুস্থতা বা ক্লাস বন্ধের দিনেও ভাড়া দিতে হবে, এটা তো অযৌক্তিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে মুনাফা নয়, তেলের খরচ উঠলেই যথেষ্ট।”
চন্দ্রা রুটে যাতায়াতকারী বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী দ্বীন ইসলাম রোহিত বলেন, “বাস সেবা চালু হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতো। কিন্তু অতিরিক্ত ভাড়া, সময়ের অসুবিধা আর হঠাৎ সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আমি আবেদন করিনি।”
প্রশাসনের পক্ষ থেকেও দায় স্বীকারের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। পরিবহন পরিচালনা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নিরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য স্যার পরিবহন চালুর অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু মাত্র ৫০–৫৫ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছে, রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছে আরও কম। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে ভাড়া বেশি, বিষয়টি উপাচার্যকে জানানো হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে ভাড়া কমানো যেতে পারে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, “২ থেকে ৫ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করায় বাস চালু করা সম্ভব হয়নি। ভাড়া বেশি কি না আমরা শুনেছি, কিন্তু কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিতভাবে জানালে বাস পরিচালনা কমিটি বিষয়টি বিবেচনা করবে।”
বিভি/এজেড




মন্তব্য করুন: