• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

এবার কি শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে ভারত?  

প্রকাশিত: ১৯:২৩, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
এবার কি শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে ভারত?  

মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। ভারতে পলাতক থাকায় শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে দেওয়া হয় রায়। অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ভারতের কাছে আবারও চিঠি দেওয়া হবে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, বিচারের সম্মুখীন হতে ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে কিনা।

ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে একটি বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। ওই চুক্তি অনুযায়ী আদালতের রায়ে প্রত্যর্পণ করানোর মতো অপরাধ করে থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে এক দেশ অপর দেশের হাতে তুলে দেবে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরেই হাসিনাকে ফেরত চেয়ে নয়াদিল্লিকে ‘কূটনৈতিক চিঠি’ পাঠায় অন্তর্বর্তী সরকার। ওই চিঠির প্রাপ্তিস্বীকারও করে ভারত। মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছিলেন, হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে বাংলাদেশের একটি চিঠি পেয়েছেন তারা। কিন্তু এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য এখনই করা যাবে না বলে জানান তিনি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গিয়েছিলো, আগে ওই চিঠির বৈধতা যাচাই করতে চায় নয়াদিল্লি। কোনও দেশের অন্তর্বর্তী সরকার (যা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়) অন্য রাষ্ট্রের নির্বাচিত সরকারের কাছে কোনও রাজনৈতিক নেতার প্রত্যর্পণ চাইলে, আইনি দিকগুলি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। 

চলতি বছর অক্টোবর মাসে হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে ফের নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, এটির সঙ্গে আইনি বিষয় জড়িয়ে আছে। দুই দেশের মধ্যে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তিনি আরও বলেন যে, আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি যে, এটি একটি বিচার বিভাগীয় এবং আইনি প্রক্রিয়া। এর জন্য দুইদেশের সরকারের মধ্যে আলোচনা এবং পরামর্শের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি এবং এই বিষয়গুলি নিয়ে আমরা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও একসঙ্গে কাজ করার জন্য তৈরি।

বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকটি শর্তের জন্যই ভারত হাসিনাকে ফেরাতে বাধ্য নয় বলে জানাচ্ছেন ভারতের বিশেষজ্ঞরা। এই প্রসঙ্গে তারা বলেন, ভারত হাসিনাকে ফেরাতে বাধ্য নয়। কারণ বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত চুক্তি থাকলেও সেখানে এমন কিছু শর্ত রয়েছে, যার জন্য নয়াদিল্লি সেটি মানতে বাধ্য নয়। আরেক বিশেষজ্ঞ বলেন, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে বন্দি প্রত্যর্পণ নিয়ে চুক্তি রয়েছে। কিন্তু সোমবারের রায়ের পর বাংলাদেশে হাসিনার প্রাণসংশয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ওই চুক্তিতে থাকা নিয়ম অনুসারেই ভারত হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করতে বাধ্য নয়।

এই প্রসঙ্গে আইনগত দিকটি ব্যাখ্যা করে কলকাতার হাই কোর্টের আইনজীবী জানান, ট্রাইবুনালের রায়ের প্রতিলিপি পাঠানো হলেও ভারত তা মানতে বাধ্য নয়। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী, যদি কোনও দেশে কারও জীবনের ঝুঁকি থাকে, তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আশ্রয় দেওয়া দেশ তাকে ফেরত পাঠাতে বাধ্য নয়। হাসিনার ক্ষেত্রেও এই আইনের কথা তুলে ধরতে পারে ভারত।

২০১৩ সালে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তখন কেন্দ্রে মনমোহন সিংহের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার। অন্য দিকে, ঢাকার মসনদে হাসিনাই। সেই চুক্তিতে বলা হয়েছিল, আদালতের রায়ে প্রত্যর্পণ করানোর মতো অপরাধ করে থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে এক দেশ অপর দেশের হাতে তুলে দেবে। এই বিষয়ে সবিস্তার ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়েছিলো, ন্যূনতম এক বছরের জেল হতে পারে, এমন অপরাধ করে থাকলে সেই ব্যক্তিকে প্রত্যর্পণ করা হবে। এ-ও বলা হয়েছিলো যে, সেই অপরাধকে চুক্তি স্বাক্ষর করা দুই দেশেই শাস্তিযোগ্য হতে হবে। অপরাধে প্ররোচনা দেওয়া বা সাহায্য করা ব্যক্তিকেও প্রত্যর্পণ করা যেতে পারে বলে জানানো হয়। ২০১৬ সালে প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করতে চুক্তি সংশোধন করা হয়। সংশোধিত চুক্তিতে বলা হয়, কারও নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেই তাকে প্রত্যর্পণ করা যাবে। এ ক্ষেত্রে অপরাধের প্রমাণস্বরূপ কোনও তথ্যপ্রমাণ দাখিল করতে হবে না। হাসিনার বিরুদ্ধেও একাধিক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। সংশোধিত চুক্তি অনুসারেই তাকে প্রত্যর্পণ করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

চুক্তিতে স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে, অপরাধটির যদি রাজনৈতিক চরিত্র থাকে, তা হলে প্রত্যর্পণ করা হবে না। খুন, গুম করা এবং অত্যাচার (যেগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি হাসিনা অভিযুক্ত) রাজনৈতিক অপরাধের তালিকায় রাখা হবে না বলেও চুক্তিতে বলা হয়েছে। চুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, সেখানে স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে যে, বিচারের নেপথ্যে যদি সৎ কোনও উদ্দেশ্য না-থাকে, তা হলে ভারত বা বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রত্যর্পণ করবে না। হাসিনাকে প্রত্যর্পণ না-করার জন্য এই যুক্তিগুলি খাড়া করতে পারে ভারত। হাসিনা নিজেও বারবারই তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক আচরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। বিচারের নামে প্রহসনের অভিযোগও তুলেছেন।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা  

বিভি/এসজি

মন্তব্য করুন: