• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

দাজ্জালের জন্য প্রস্তুত ইসরায়েল, থার্ড টেম্পলে উঠছে লাল গাভী!

ইমরান মাহমুদ

প্রকাশিত: ১৭:৩৬, ২৭ মার্চ ২০২৪

ফন্ট সাইজ

ফিলিস্তিনের উপর ইতিহাসের অন্যতম বর্বরচিত হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। তবে এই হামলা কি শুধুই রাজনৈতিক কারণে? কেনই বা তারা আল আকসার দখল নিতে চাচ্ছে? আর এইসব ঘটনার সাথে দাজ্জালের সম্পর্কই বা কি? এই সব নিয়েই আলোচনা হবে এই পর্বে।

এই বিষয়ে আলোচনা করার আগে ইহুদী তথা বনি ইসরাইলিদের ইতিহাস সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকতে হবে। আল্লাহর প্রেরিত কিতাব তাওরাত ও যাবুর যাকে বাইবেলে ওল্ড টেস্টিমেন্ট বলা হয়েছে, সেখানে ইসা (আ.) বা মাসীহ এর আগমণের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। ইসা (আ.) এর জন্মের আগে যখন বণি ইসরাইলরা রোমান সভ্যতার অত্যাচারের শিকার হচ্ছিলো তারা তখন সেই মাসীহ’র আগমণের জন্য অপেক্ষা করছিলো। 

কিন্তু যখন ইসা (আ.) আসেন এবং আল্লাহর বাণি প্রচার করেন, তখন তারা তাঁকে অস্বীকার করে কারণ তারা আশা করছিলো তাদের মাসীহ হবে একজন রাজনৈতিক নেতা। কিন্তু ইসা (আ.) রাজনৈতিক নয় বরং ধর্মীয় নেতা ছিলেন। তাই বাইবেলে বর্ণিত মাসীহ’র সব বিবরণ ইসা (আ.) এর সাথে মিলে যাওয়ার পরেও তারা তাঁকে অস্বীকার করে আর রোমান রাজার কাছে তারা নালিশ দেয় যেন ইসা (আ.) কে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়। কারণ হিসেবে তারা বলে তিনি রোমান রাজাকে পরাজিত করতে এসেছেন। 

চোখের সামনে সত্যকে দেখার পরেও তারা সে সত্য অস্বীকার করে তাই আল্লাহ বণি ইসরাইলকে অভিশপ্ত জাতি বলেন আর ইসা (আ.) এর পর বণি ইসরাইলদের কাছে আর কোন নবী পাঠাননি। আল্লাহ কোরআনে বলেন, “বণি ইসরাইলদের মধ্যে যারা অবিশ্বাস করেছিলো তারা দাউদ ও মরিয়ম পূত্র ইসা কর্তৃক অভিশপ্ত হয়েছিল, কারণ তা ছিলো অবাধ্য ও সীমালংঘনকারী” [সুরা মায়িদাহ, আয়াত ৭৮]

তারা ইসা (আ.) কে অবিশ্বাস করলেও তাদের বিশ্বাস যে মাসীহ আসবেন। কিন্তু সেই মাসীহ আসার আগে তাদের ৩টি শর্ত পূরণ করতে হবে। ১. সব ইহুদীদের তাদের প্রমিসড ল্যান্ড বা প্রতিশ্রুত ভূমিতে একত্রিত হতে হবে। তাদের বিশ্বাস ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর সব ইহুদী ইসরাইলে এসে ইসরাইলকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করার মাধ্যমে তারা এই শর্ত পূরণ করেছে। ২. তাদের টেম্পল অফ সোলেমান বা সোলেমানী মন্দির ৩য় বার নির্মাণ করতে হবে আর ৩. জাবালে জায়তুন বা জলপাইর পাহাড়ে তাদের একটি বিশেষ বৈশিষ্টসহ লাল গাভী কোরবানি করতে হবে। এই তিনটি শর্ত পূরণ হলেই আসবে তাদের মাসীহ।

তাদের মতে ১টি শর্ত পুরণ হলেও আরও দুটি শর্ত পুরণ এখনও বাকি। যার একটি হচ্ছে ৩য় সোলেমানী মন্দির নির্মাণ। সোলেমানী মন্দির হচ্ছে হযরত সোলাইমান (আ.) এর প্রাসাদ। যা তিনি জ্বিনদের মাধ্যমে তৈরি করেছিলেন। প্রথমবার এটি নির্মাণ করা হয় খৃষ্টপূর্ব ৯৫৭ অব্দে এবং খৃষ্টপূর্ব ৫৮০ অব্দে ব্যাবিলন সভ্যতার আক্রমণে সেটি ধ্বংশ হয়ে যায় তবে সেই প্রাসাদের পশ্চিম পাশের দেয়ালটি অবশিষ্ট রয়ে যায়। যাকে বর্তমানে ওয়েটার্ন ওয়াল বলা হয়। পরবর্তীতে ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে সেটি আবার নির্মাণ করা হয় যেটি বর্তমাণে আল-আকরা মসজিদ প্রাঙ্গণ হিসেবে পরিচিত। 

ইসরাইলিরা এখন চাচ্ছে এই আল-আকসা মসজিদ ধ্বংশ করে সেখানে ৩য় সোলেমানী মন্দির নির্মাণ করতে। শুধু তাই না, বলা হচ্ছে তারা আল আকসার পাশে মাটিতে গর্ত খুঁড়ে সুরঙ্গ তৈরি করছে। এর ২টি সম্ভাব্য কারণের কথা বলছেন আলেমরা। ১. সোলাইমান (আ.) তার রাজত্বের সব কালো জাদুর বই ও এতে ব্যবহৃত জিনিসপত্র তার প্রাশাদের নিচে লুকিয়ে রেখেছিলেন যেন এগুলো আর কেউ ব্যবহার না করতে পারে। ইসরাইলিরা এখন সেই বই খুঁজতে আল আকসার পাশে গর্ত খুঁড়ছে। আর ২য় সম্ভাব্য কারণটি হচ্ছে এই গর্তের কারণে আল-আকসার ভিত্তি দূর্বল হয়ে যাবে আর তা আপনা-আপনিই ধ্বসে যাবে, ফলে বিশ্বের কাছে তাদের জবাবদিহি করতে হবে না।

আর তৃতীয় শর্ত হিসেবে তারা এখন হন্নে হয়ে সারা পৃথিবীজুড়ে লাল গাভী খুঁজছে এবং বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে লাল গাভী সংগ্রহ করে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। ২০১৫ সালে যুক্তরায্যের পত্রিকা ‘দ্যা গার্ডিয়ান’ এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয় যে ইহুদীরা গবেষণার জন্য টাকা বিনিয়োগ করছে যেন একটি নিখুঁত লাল গাভী তারা উৎপাদন করতে পারে। কেউ কেউ দাবি করছে তারা সেই লাল গাভীটি পেয়েও গেছে। এখন বাকি শুধু আল-আকসা ধ্বংশ করে ৩য় মন্দির নির্মাণ, তবেই চলে আসবে তাদের মাসীহ। কিন্তু কে তাদের মাসীহ?

রাসুলুল্লাহ (স.) এর হাদিস অনুযায়ী ইহুদীদের মধ্য থেকে রাজনৈতিক ও অলৌকিক ক্ষমতাধর একজন ব্যক্তি যে নিজেকে মাসীহ বা ইসা (আ.) দাবি করবে সে হবে দাজ্জাল! অর্থাৎ ইসরাইলিরা হয়ত নিজেদের অজান্তেই দাজ্জালের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে এবং তার কাছেই নিজেদের আনুগত্য প্রকাশ করবে। ঠিক যেমনটা রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: