• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

‘আয়াতুল কুরসি’ মুসলিমদের নিরাপত্তার অনন্য এক দোয়া

প্রকাশিত: ২৩:০২, ২৮ এপ্রিল ২০২২

ফন্ট সাইজ
‘আয়াতুল কুরসি’ মুসলিমদের নিরাপত্তার অনন্য এক দোয়া

মানুষের উপকারে পবিত্র কুরআনুল কারিমে রয়েছে বিশেষ কিছু আয়াত ও সুরা। দোয়া ও আমল হিসেবে এগুলো মানুষের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে দেওয়া উপহার। এমন একটি অন্যতম দোয়া হলো আয়াতুল কুরসি।
 
আল্লাহর গুণ বর্ণনায় এ আয়াতটিই সবচেয়ে বড়। কুরআনুল কারিমের দ্বিতীয় ও বড় সুরা ‘সুরা বাকারা’র ২৫৫ নং আয়াত এটি। এ আয়াতে আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতি, গুনাবলী ও বৈশিষ্ট্য সম্বলিত ১০টি অংশ রয়েছে।

আয়াতুল কুরসির মর্যাদা

হজরত উবাই ইবনু কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হে আবুল মুনযির! তোমার কাছে আল্লাহর কিতাবের কোনো আয়াতটি সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই অধিক জানেন। তিনি আবার বলেন, হে আবুল মুনযির! তোমার কাছে আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতটি সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ? আমি বললাম, ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম’ (আয়াতুল কুরসি)। তখন তিনি আমার বুকে (হালকা) আঘাত করে বলেন, হে আবুল মুনযির! তোমার জ্ঞান আনন্দদায়ক হোক।’ (আবু দাউদ)

আয়াতুল কুরসি জান্নাতের দরজা

হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে, ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা মৃত্যু ছাড়া আর কোনো কিছু বাধা হবে না।’ (বুখারি, নাসাঈ, তাবারানি)

মানুষের নিরাপত্তায় আয়াতুল কুরসি

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার দেখতে পেলেন একজন ব্যক্তি সাদকার মাল চুরি করছে। তখন তিনি তার হাত ধরে বললেন, ‘আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুলের কাছে নিয়ে যাব।’ তখন ওই ব্যক্তি বলল যে, সে খুব অভাবী আর তার অনেক প্রয়োজন। তাই দয়াবশত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে ছেড়ে দিলেন ।

পরদিন সকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসার পর তিনি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন- ‘গতকাল অপরাধীকে কী করেছে?’

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন তাকে ক্ষমা করার কথা বললেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘অবশ্যই সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে আর সে আবারো আসবে।

এভাবে চোর পরপর তিনদিন সাদকার মাল চুরি করতে আসে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুও তাকে প্রত্যেকবার ছেড়ে দেন। সর্বশেষ সে আয়াতুল কুরসির আমলের কথা বর্ণনা করে বলে-

আমি তোমাকে এমন কিছু বলে দেব যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাকে কল্যাণ দান করবেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু সেটা জানতে চাইলে চোর বলল-

‘রাতে যখন ঘুমাতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসি (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম) পড়ে ঘুমাবে তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন ফেরেশতাকে পাহারাদার নিযুক্ত করবেন। যে তোমার সঙ্গে থাকবে আর কোনো শয়তান সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে আসতে পারবে না।’
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ঘটনা শুনে বললেন, ‘যদিও সে চরম মিথ্যাবাদী কিন্তু সে সত্য বলেছে।’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন- ‘তুমি কি জান সে কে?’ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘না’। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, ‘সে হচ্ছে শয়তান।’ (বুখারি)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আয়াতুল কুরসি কুরআনের অন্যসব আয়াতের সর্দার বা নেতা। আয়াতটি যে ঘরে পড়া হবে, সে ঘর থেকে শয়তান বের হয়ে যাবে।’

আয়াতুল কুরসির বিশেষ মর্যাদা

হজরত আবু যর জুনদুব ইবনে জানাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার প্রতি সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন আয়াত নাজিল হয়েছে কোনটি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- ‘আয়াতুল কুরসি।’ (নাসাঈ)

এই পুরো আয়াতটিই আল্লাহর একত্ববাদ, মর্যাদা ও গুণের বর্ণনা থাকার কারণেই আল্লাহ তাআলঅ এ আয়াতের মধ্যে অনেক ফজিলত রেখেছেন।

আয়াতুল কুরসি

اللّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ

উচ্চারণ- আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা তাঅ খুযুহু সিনাতুঁও ওয়া লা নাওম। লাহু মা ফিস্ সামাওয়াতি ওয়া মা ফিল আরদ্বি। মাং জাল্লাজি ইয়াশফাউ ইংদাহু ইল্লা বি-ইজনিহি। ইয়ালামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়া মা খালফাহুম, ওয়া লা ইউহিতুনা বিশাইয়্যিম্ মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শাআ ওয়াসিআ কুরসিইয়্যুহুস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি, ওয়া লা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুওয়াল ‘আলিয়্যুল আজিম।’ 

(উচ্চারণটি কোনো কুরআন বিশেষজ্ঞের কাছে বিশুদ্ধভাবে পড়ে নেয়া জরুরি)

অর্থ : (তিনিই) আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং ঘুমও নয়। সবই তার, আসমান ও জমিনের মধ্যে যা কিছু রয়েছে। কে আছ এমন- যে সুপারিশ করবে তার কাছে তার অনুমতি ছাড়া? (চোখের সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তার জ্ঞানের সীমা থেকে কোনো কিছুকেই তারা পরিবেষ্টিত করতে পারবে না, কিন্তু ‘হ্যাঁ’, তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন তা ছাড়া। সমগ্র আসমান এবং জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে তার সিংহাসন। আর সেগুলোকে ধারণ (নিয়ন্ত্রণ) করা তার জন্য কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।’

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: