শুধু দিনাজপুরেই দেড়শ কোটি টাকার আম বিক্রির আশা

দিনাজপুরের আম। ছবি- সংগৃহীত
দিনাজপুর জেলায় চলতি বছর আমের অধিক ফলন হয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আম উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন, যা থেকে দেড়শ কোটি টাকার আম বিক্রি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দিনাজপুর হর্টিকালচার বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান গতকাল শনিবার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গ্রীষ্মের শেষ ও বর্ষা শুরুতে দিনাজপুর জেলার সর্বত্র চলছে আম সংগ্রহ ও বেচা-কেনার মহা উৎসব। শহরের কালিতলা ও গোর এ শহীদ বড় ময়দানে আম বিক্রির বড় পাইকারি বাজার বসেছে।
হাবিবুর রহমান বলেন, ঈদুল আযহার কারণে গত ৭ দিন এই দুটি পাইকারি বাজারে আমের সরবরাহ কম ছিল। ঈদের ছুটির কারণে বাইরের পাইকারেরা আম ক্রয় করতে আসেনি। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলাগুলোতে ঈদের ছুটিতে অধিকাংশ লোকজন গ্রামে গিয়েছিলেন। ফলে শহর ফাঁকা থাকায় পাইকারেরা আম বাগানের মালিকদের আম না পাড়তে নিষেধ করেছিলেন।
হর্টিকালচার বিভাগের সহকারী পরিচালক আরো বলেন, গতকাল শনিবার থেকে পুরাদমে এই পাইকারি বাজার থেকে বিভিন্ন যানবাহনে বাছাই করা সুস্বাদু আম লোড দিয়ে পাইকারেরা এখান থেকে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাচ্ছেন।
ঢাকা গাজীপুর থেকে আগত আম ব্যবসায়ী পাইকার গোলাম রহমান জানান, তিনি গত ২০ বছর ধরে গাজীপুর চৌরাস্তায় আমের আড়তে পাইকারি আমের ব্যবসা করে আসছেন। ইতোপূর্বে তিনি রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আম পাইকারি নিয়ে যেতেন।
তিনি আরো জানান, গত দু’বছর ধরে তিনি দিনাজপুর থেকে সুস্বাদু ও উন্নত জাতের মান-সম্পদ আম ক্রয় করে নিয়ে গিয়ে পাইকারি বিক্রি করছেন। তার আড়তের আমের ব্যাপক সুনাম রয়েছে। তার আড়ত থেকে পাইকারি খুচরা আম সহজে বিক্রি হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত দিনাজপুরের আমের কোন বদনাম নেই। দিনাজপুরের বাগানে ও পাইকারি বাজারগুলোতে খুব সহজে বিষমুক্ত আম পাওয়া যায়।
এ জন্য দিনাজপুরের আমের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে বলে তিনি ব্যক্ত করেন।
দিনাজপুর হর্টিকালচার বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানান, এই জেলায় ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকেই আমের বাগান সৃজন করে আর্থিকভাবে সাফল্য অর্জন করেছেন। দিনাজপুর জেলার সদর, চিরিরবন্দর, বিরল, বীরগঞ্জ, কাহারোল, ফুলবাড়ী, বিরামপুর ঘোড়াঘাট ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় বিপুল সংখ্যক উন্নত জাতের সুস্বাদু আমের বাগান গড়ে উঠেছে। এর মধ্য নবাবগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়টি এলাকায় উন্নত জাতের সুস্বাদু আমের বাগান ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে।
তারা আরো জানান, ১৫ জৈষ্ঠ্য থেকে এই উপজেলার ভাদুরিয়া বাজারে বিশাল আমের বাজারে প্রতিদিন পাইকারি ও খুচরা আম বেচাকেনা হয়ে থাকে। ঈদের কয়েকদিন আম বেচাকেনা কিছুটা কম ছিল। তবে গতকাল শনিবার সকাল থেকেই বাইরে জেলার পাইকারেরা আম ক্রয়ের জন্য ভাদুরিয়া বাজারে এসেছে।
ভাদুরিয়া বাজারের ইজারাদার শরিফুল ইসলাম জানান, গতকাল শনিবার এই বাজার থেকে ১৯টি ট্রাকে ও ৪২টি পিক-আপে করে লোড করে পাইকারেরা আম নিয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকায় এখানকার আমের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। যে নতুন ভ্যারাইটির জাতের সুস্বাদু আমের চাহিদা রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে- ব্যানানা ম্যাঙ্গো, বারি-৪, আম্রপালি, মিশ্রিভোগ, হাড়িভাঙ্গা, কাটিমন ও ছাতাপরা আম উল্লেখযোগ্য।
এই আমগুলো আষাঢ় মাসের শুরু থেকে বাজারে উঠতে থাকে এবং পুরো আষাঢ় মাস এই জাতের আমগুলো বাজারজাত করা যায়। এখানকার আম গাছ থেকে পাড়ার পর কোন ফরমালিন দেওয়া হয় না। কাঁচা-পাকা আম খাঁচাতে ভরে দেশের বাইরে বিভিন্ন জেলায় নিয়ে গিয়ে স্বাচ্ছন্দে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব আম খেয়ে ভোক্তারা কোন অভিযোগ করছেন না।
আম সংগ্রহ, বাছাই, বেচা-কেনা ও বহনের কাজে মৌসুমি কর্মসংস্থানে জড়িয়ে পড়েছে কমপক্ষে ৫০ হাজার শ্রমিক।
দিনাজপুর সদর উপজেলার চেহেলগাজী ইউনিয়নের নশিপুর গ্রামের পাঁচশ গাছের আম বাগানের মালিক রশিদুল ইসলাম জানায়, তার আম বাগানে সবগুলো গাছেই প্রচুর আমের ফলন হয়েছে।তার মতো দিনাজপুরে আরও অনেক ব্যক্তি এ রকম ভোক্তাদের চাহিদা সম্পন্ন আম বাগান সহজেই করতে পারেন।
তিনি বলেন, এই জেলা থেকেই দেশের আমের চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করা সম্ভব।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ফল ও শস্য) মো. আনিসুজ্জামান জানান, জেলায় আম-বাগান রয়েছে প্রায় ৪ হাজার দু’শত ৪৬ হেক্টর জমিতে। গত বছর ফরমালিন আতংকে আমের বাজারে ধস নামায়, এবার বিষমুক্ত আম উৎপাদনের অঙ্গীকার করেছেন আম বাগান মালিকরা।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: