• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

রাজধানীর ১২টি ওয়ার্ডে সরাসরি কৃষক থেকে কৃষিপণ্য পাবেন ভোক্তা

প্রকাশিত: ১৬:০০, ১২ মে ২০২২

ফন্ট সাইজ
রাজধানীর ১২টি ওয়ার্ডে সরাসরি কৃষক থেকে কৃষিপণ্য পাবেন ভোক্তা

মিরপুরের ( ৬ নম্বর ওয়ার্ড) কৃষকের বাজার

ঢাকা নগরবাসীর জন্য নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ‘ঢাকা ফুড সিস্টেম’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে কৃষকের বাজার কার্যক্রমের তিনমাস মেয়াদী পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ঢাকা মহানগরে নতুন ১৫টি কৃষকের বাজার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট। 

বাংলাদেশ বর্তমানে সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মাছ উৎপাদনে চতুর্থ ও হাঁস-মুরগির ডিম ও মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু যথাযথ বাজার ব্যবস্থার অভাব এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্মের কারণে কৃষকগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে ভোক্তারাও সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষক ও ক্রেতা উভয়েই উপকৃত হবেন।  

বৃহস্পতিবার (১২ মে) গুলশানের একটি হোটেলে এ্যম্বেসি অব দি কিংডম অব দি নেদারল্যান্ডস, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত ঢাকায় এলাকাভিত্তিক কৃষকের বাজার স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। 

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমান এবং মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রজেক্ট ম্যানেজার নাঈমা আকতার। 

সভায় সূচনা বক্তব্যে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ঢাকা মহানগরে নতুন ১৫টি কৃষকের বাজার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর আওতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে নতুন ৫টি (৬নং ওয়ার্ডসহ মোট ৬টি), ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৬টি, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ২টি এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ২টি কৃষকের বাজার স্থাপিত হবে। 

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ন্যাশনাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর জয়নাল আবেদীন বলেন, নগর এলাকায় স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসম্পন্ন খাদ্যের সহজলভ্যতা ও সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের অর্থায়ন করেছে এমব্যাসি অব দি কিংডম অব দি নেদারল্যান্ডস এবং দেশে বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্পের বাস্তবায়নের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে আমরা এগিয়ে যাবো। কৃষকের বাজার স্থাপনের মাধ্যমে নগরবাসীর স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসম্পন্ন খাদ্যের চাহিদা পূরণ সম্ভব।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগে. জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান বলেন, বর্তমানে দেশে ৩০ ভাগ জমি হারিয়ে গেছে এবং ৭০ ভাগ জমিতে তিন গুণ বেশি পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু কৃষকরা সঠিক মূল্য ও লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে নগর দরিদ্রদের মধ্যে ৯.৫ শতাংশ অভুক্ত বা অতি সামান্য খেয়ে ঘুমাতে যায়। খাবার উৎপাদন থেকে পরিবেশন পর্যন্ত চাহিদা ও যোগান নিশ্চিত করতে কৃষকের বাজারের মত উদ্যোগ অত্যন্ত প্রয়োজন। পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে কৃষকদের দক্ষতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ভোক্তাদের মধ্যে নিরাপদ খাদ্য গ্রহণে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।

স্থানীয় সরকার বিভাগ এর উপসচিব এবং ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রজেক্ট এর ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, কৃষকের বাজারে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যের পর্যাপ্ত যোগান নিশ্চিত করা জরুরি। এজন্য প্রাথমিক পর্যায়ে কৃষকদের পণ্য পরিবহন সুবিধা প্রদান করতে হবে। জনগণের মাঝে নিরাপদ খাদ্য গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা এবং কৃষকের বাজার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সেই সাথে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে নাহলে সিন্ডিকেট তৈরি হয়ে যাবে। বাজারে কোন ধরণের সমস্যা সমাধানে কাউন্সিলর কার্যালয়, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সহযোগিতা প্রয়োজন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল ৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মোতাকাব্বীর আহমেদ বলেন, ক্ষুধা নিবারণে আমরা সফল হয়েছি এবং বর্তমানে পুষ্টি নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কৃষকের বাজার স্থাপন কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় উৎপাদন, পরিবহন, বিপণন প্রতিটি পর্যায়ে কেমিকেল ব্যবহার হয়। সকল অংশীদার যদি সঠিকভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে তাহলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, আইনের কঠোর প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। আমাদের দেশে কৃষককে মূল্যায়ন করা হয় না। এজন্য জাতীয় অর্থনীতিতে এবং জনজীবনে তাদের অবদান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।

এলাকাভিত্তিক কৃষকের বাজার প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন , কৃষি সম্প্রসারণ অদিদফতরের অতিরিক্ত পরিচলক হাবিবুর রহমান চৌধুরী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসেম, ঢাকা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ মামুনুর রশিদ, সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসির সৈয়দ মাহাবুবুল আলম, নারায়নগঞ্জ জেলা মৎস কর্মকর্তা বাসনা আখতার প্রমূখ। এছাড়াও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার কর্মকর্তা, ঢাকা, নারায়নগঞ্জ গাজীপুর জেলার কৃষি কর্তকর্তা, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, মৎস কর্মকর্তা ও চার সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদ্বয় উপস্থিত ছিলেন।

বিভি/কেএস

মন্তব্য করুন: