• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

আবার ফিরছে সোনালী আঁশের দিন!

অসীম চৌধুরী 

প্রকাশিত: ১১:৪২, ১৬ মে ২০২২

ফন্ট সাইজ
আবার ফিরছে সোনালী আঁশের দিন!

পাট দিয়ে সূতা, দড়ি, বস্তা, প্যাকিং সরঞ্জাম, ব্যাগ বা থলে, হাতে বাছাই করা আঁশ, পাটজাত কাপড় বহুদিন ধরে তৈরি হয়।

এখন সেই সঙ্গে পাটের তৈরি বৈচিত্র্যময় পণ্যের রপ্তানিও বেড়েছে। পাটের তৈরি টব, খেলনা, জুট ডেনিম, জুয়েলারি, ম্যাটস, নারী-পুরুষের জুতা স্যান্ডেল, বাস্কেট, পাটের শাড়ি, পাঞ্জাবি ও পাটের তৈরি গৃহস্থালি নানা সরঞ্জামের বিদেশে চাহিদা তৈরি হয়েছে। প্রধানত আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলোয় এই জাতীয় পণ্য রপ্তানি করা হয়।

আফ্রিকান দেশগুলো বস্তা ও পাটজাত দড়ি বেশি রপ্তানি হয়। পাটের আঁশের পাশাপাশি পাটখড়িরও একটি বড় বাজার তৈরি হয়েছে এসব পণ্য দিয়ে পার্টিকেল বোর্ড, কম্পোজিট, সেলুলয়েডে ব্যবহার হয়।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, এক যুগের রেকর্ড ভেঙ্গে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করে ১১৬.১৪ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে।

সারাদেশের ন্যায় নীলফামারী জেলায় প্রতিবছরই বাড়ছে পাট চাষ। জেলাটিতে অনেকে পাট চাষ করেন বংশপরম্পরায়। এর মধ্যে পাটের চাহিদা বেড়েছে, বাড়ছে পাটের দাম। এতে ‘সোনালি আঁশ’-এর আবাদ নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন কৃষকরা।

জলঢাকা উপজেলা কৃষি কার্যালয় বলছে, এ অঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটি পাট চাষের জন্য উপযোগী। গত এক বছরে পাটের উৎপাদন বেড়েছে। তোষা জাতীয় পাট চাষের দিক থেকে নীলফামারী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। গত কয়েক বছরে উপজেলায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে পাট চাষ।

নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা ইউনিয়নের ধুমপাড়া গ্রামের পাটচাষি সত্তরোর্ধ্ব মোকাররম মিয়া বলেন, বংশপরম্পরায় আমরা পাট আবাদ করে আসছি। তা ছাড়া পাট চাষের জন্য এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া জুতসই। পাট চাষ না করলে খাবো কী।

খরচের বিষয়টি তুলে ধরে উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের পাটচাষি হরিদাস বিশ্বাস বলেন, পাট উৎপাদনে মণপ্রতি ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা খরচ হয়। বিক্রি করার সময় আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকার বেশি পাওয়া যায় না। পাটের দাম বাড়ে পাট মৌসুম চলে যাওয়ার পর, তখন কৃষকদের ঘরে পাট থাকে না।


নীলফামারী জলঢাকা উপজেলার খুটামারা ইউনিয়নের শাহজাহান আলি বলেন, বীজ ও সারের নিশ্চয়তা পেলে তাঁরা পাঠ চাষে আরও মনোযোগী হবেন। মাঝেমধ্যে এসবের সংকটে পড়তে হয় তাঁদের। এগুলোর সমাধান হওয়া জরুরি।

আরও কয়েকজন পাটচাষির সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পাটের বীজ তাঁরা বাজার থেকে কিনে থাকেন। বীজ ও সারের দাম নাগালের মধ্যেই থাকে। তবে মাঝেমধ্যে এসবের সংকটে পড়তে হয় তাঁদের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এই বছর সাড়ে আট লক্ষ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে কম-বেশি ৯০ লাখ বেল (১৮২ কেজিতে এক বেল)।

প্রতি বিঘায় গড়ে নয় মণ পাট চাষ হয়েছে। বেশিরভাগ স্থানে প্রতি মণ পাট বিক্রি হয়েছে তিন হাজার টাকার ওপরে।

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে ৭ দশমিক শূন্য ৮ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছিল। সেই বছর মোট উৎপাদন হয়েছিল ১৫ দশমিক ২৬ লাখ মেট্রিক টন। সেই হিসাবে এই বছর উৎপাদন দাঁড়াতে যাচ্ছে প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ মেট্রিক টন। যা বার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। 

বাংলাদেশের পাট গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. আইয়ুব খান বলেন, সারা বিশ্বে এখন প্লাস্টিক বা সিনথেটিক ফাইবার বাদ দিয়ে ন্যাচারাল ফাইবারের একটা ডিমান্ড তৈরি হয়েছে। নানা ধরণের পণ্য তৈরি হচ্ছে।

বাংলাদেশে এই খাতে অনেক প্রাইভেট সেক্টর তৈরি হয়েছে, বিনিয়োগ হয়েছে, যারা পাট দিয়ে পণ্য তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করছে। ফলে এই খাতে একটা প্রতিযোগিতার বাজার তৈরি হয়েছে। তারা কৃষকের কাছ থেকে বেশি দামে পাট কিনছে। তাই পাটের চাহিদাও বাড়ছে, দামও বেড়েছে।

ভালো দাম পাওয়ার কারণে কৃষকরাও পাট চাষের প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, গত বছরের আগে পাটের সর্বোচ্চ মূল্য উঠেছিলো আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। কিন্তু গত বছর সর্বোচ্চ ছয়-সাত হাজার টাকা দরেও পাটের মণ বিক্রি হয়েছে।

বিভি/রিসি

মন্তব্য করুন: