রজতজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ‘ঐতিহ্য বুক কার্নিভাল ২০২৫’-এর উদ্বোধন
প্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার ২৫ বছরের পথচলা (২০০০-২০২৫) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২-৩০ নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ‘ঐতিহ্য বুক কার্নিভাল ২০২৫’ আয়োজন করেছে।
বুধবার (১২ নভেম্বর) বিকালে ৪টায় বুক কার্নিভাল উদ্বোধন করেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক, লেখক ও অনুবাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু এবং শিক্ষাবিদ ও লেখক মোহীত উল আলম।
স্বাগত বক্তব্যে ঐতিহ্য’র প্রধান নির্বাহী আরিফুর রহমান নাইম বলেন, ঐতিহ্যের ২৫ বছর আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি বড় মাইলফলক। ২৫ বছর আগে মাত্র ৩জন মানুষ নিয়ে শুরু হয়েছিল ঐতিহ্য। আজ আমাদের ঐতিহ্য অনেক মানুষের। হোঁচট খেয়েছি, ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, তবুও হাল ছাড়িনি। এই ২৫ বছরে আমি আমার সকল সহকর্মী, লেখক, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীর কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ, যাদের আন্তরিক সহযোগিতায় আজ ঐতিহ্য দুই বাংলার পাঠকের কাছে সমাদৃত হয়েছে।
আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ফরিদা হোসেন তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, মিলেনিয়াম বর্ষ ২০০০ সালে যাত্রা শুরু করে ২০২৫ পর্যন্ত তার গৌরবদীপ্ত প্রকাশনা-পথে ঐতিহ্য আমাদের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশে এমন কোনও শিক্ষিত-সচেতন লেখক-পাঠকের সংগ্রহ খুঁজে পাওয়া মুশকিল যেখানে ঐতিহ্য প্রকাশিত কোনও রচনাবলি বা একক বই নেই। যে কোনও প্রকাশনীর জন্য এটা গৌরবের ও আনন্দের বিষয়।
বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক ও অনুবাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু বলেন, ঐতিহ্যের সূচনালগ্ন থেকেই আমি ঐতিহ্যের সাথে যুক্ত থাকতে পেরে আনন্দিত। ঐতিহ্যের দ্বিতীয় বইটি আমার বই হওয়ায় আলাদা গর্ববোধও কাজ করে আমার। একক প্রকাশনী হিসাবে আমার সর্বাধিক বইয়ের প্রকাশকও ঐতিহ্য। আমি ঐতিহ্যের রজতজয়ন্তীতে তাদের আরও সফলতা ও সমৃদ্ধি কামনা করছি।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক উপাচার্য, শিক্ষাবিদ ও লেখক মোহীত উল আলম বলেন, ঐতিহ্য সত্যিই বাংলাদেশে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রকাশকের কথা মতে, ২০০৫ সালে প্রায় কোটি টাকা লস করেও তিনি দমে যাননি। আমার বিশ্বাস তাকে আর কিছুই দমাতে পারবে না। বইয়ের দুটা দিক থাকে। একটি হচ্ছেÑ লেখা মানসম্মত কিনা, আরেকটি বইয়ের প্রোডাকশন উন্নত কি না। আমি ঘুরে ঘুরে ঐতিহ্যের প্যাভিলয়নে যা বই দেখেছি, তার সবই এই দুটো দিক রক্ষা করেছে। ঐতিহ্য বাংলা সাহিত্যকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছে, তা প্রকাশনা ইতিহাসে বিরল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই বলেন, ঐতিহ্য আমার প্রকাশক, আমাদের প্রকাশক। ঐতিহ্য শুধু মুনাফার দিকে খেয়াল রাখেনি, প্রকাশনার মধ্য দিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতার চর্চা করেছে। আমার ‘হাজার বছরেরে নির্বাচিত বাংলা কবিতা’র মতো মোটা বই নিশ্চিত লস জেনেও ঐতিহ্য আগ্রহ নিয়ে প্রকাশ করেছে। আমার ধারণা না, দুই বাংলায় আর কেউ ঐতিহ্যের মতো একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এত বেশি রচনাবলি প্রকাশ করতে পারেনি। ঐতিহ্যের প্রকাশক ও প্রধান নির্বাহী আরিফুর রহমান নাইম যে সাহসিকতা দেখিয়েছে, তা প্রকাশনা জগতে অপূর্ব। বই পড়ার হার কমে যাওয়ার এই সময়ে ঐতিহ্যের বুক কার্নিভাল পাঠক তৈরিতে ও বই বিক্রিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে লেখক-প্রকাশক-পাঠকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমাবেশ ঘটে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত একক প্রকাশনা হিসেবে দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি পৃষ্ঠার বই ছেপেছে ঐতিহ্য। বুক কার্নিভালে এই বছর ঐতিহ্যের প্যাভিলিয়নে থাকবে ২৫+ নতুন বই, ২৫০০+ বই ও ২৫টি রচনাবলি এবং সর্বোচ্চ ৭১% পর্যন্ত ছাড়সহ নানা অফার ও উপহার। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকবেÑ ঐতিহ্য প্রকাশিত রচনাবলির আলাদা খÊ নামমাত্র মূল্যে (মাত্র ৫০ থেকে ৩০০ টাকায়) কেনার সুবর্ণ সুযোগ।
কার্নিভালে অংশ নিচ্ছে ইসলামি বই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘ইলহাম’, শিশুতোষ বই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘কাকাতুয়া’, বাংলাদেশের ইংরেজি সাহিত্যের একমাত্র প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘গ্রিপারমার্ক’ ও নান্দনিক নোটবুক ও বুকমার্ক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘নু বুকস বাই নুবাহা’। তাদের বই, নোটবুক ও বুকমার্কেও বিশেষ ছাড় থাকবে। এছাড়াও অংশ নিবে বই বিপণন প্রতিষ্ঠান ‘নির্বাচিত’। নির্বাচিত’তে মজুদ থাকা বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য প্রায় সকল প্রকাশনীর বইয়ে থাকবে ৩০% পর্যন্ত ছাড়। মজুদ বিদেশি বইয়ে (বাংলা, ইংরেজি) প্রদত্ত মূল্যের উপর ১৫% পর্যন্ত ছাড়ও থাকছে।
আরও থাকছে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, রাইটার্স ডে, ফোক মেহফিল, রিডার্স ক্লাব ডেসহ নানান আয়োজন।
বিভি/এআই




মন্তব্য করুন: