আগামীর বাংলাদেশ হতে হবে শোষণ, নির্যাতন ও বৈষম্যমুক্ত: তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, রাজনীতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। বিএনপি তার ৩১ দফার আলোকে দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কাজ করে যাচ্ছে। তরিকুল ইসলামও আমৃত্যু মা,মাটি ও মানুষের মুক্তির সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। আজকের নতুন প্রজন্মকে তরিকুল ইসলামের রাজনৈতিক জীবন ও শিষ্ঠাচার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) যশোর জেলা বিএনপি আয়োজিত স্মরণসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ব্যক্তিগত লাভবান বা অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে যিনি বা যারা রাজনীতি করেন বা করেছেন তাদের পরিণতি দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। পতিত স্বৈরাচার ফ্যাসিষ্টদের পরিণতি কি হতে পারে তা দেশের মানুষ ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে উপলব্ধি করেছে। তাই আগামীর বাংলাদেশ হতে হবে শোষণ, নির্যাতন ও বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশ। আর মানুষের ও গণবিপ্লবের সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে ঐক্যবদ্ধতার কোন বিকল্প নেই।
তারেক রহমান আরও বলেন, আজকের এই স্মরণসভায় হাজারো মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে মরহুম তরিকুল ইসলাম কতটা জনপ্রিয় ছিলেন। তরিকুল ইসলাম সারাজীবনই আদর্শের সাথে কোন বেঈমানি করেননি। বিগত স্বৈরাচার এরশাদ আমলে এবং ফ্যাসিষ্ট পতিত স্বৈরাচার হাসিনার আমলে ও ওয়ান ইলেভেন সরকারের আমলে তরিকুল ইসলাম বার বার কারা বরণ ও হামলা মামলার শিকার হয়েছেন। কিন্তু তিনি কখনো তার আদর্শ থেবে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হননি।
তরিকুল ইসলামের সাথে আমার কাজ করার বেশি অভিঙ্গতা নেই। তারপরও যতটুকু সময় পেয়েছি ততটুকু সময়ে আমি তার কাছ থেকে মানুষের জন্য রাজনীতি করা শিখেছি। ওয়ান ইলেভেন সরকারের আমলে আমি ও মরহুম তরিকুল ইসলাম সাহেব এক সাথে কারাবরণ করেছি। একদিন পিজি হাসপাতালে কিছু সময়ের জন্য তাঁর সাথে আমার দেখা হয় ও খুব সামান্যই কথা হয়। জীবনে প্রথম কারাবরণ করায় আমি কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। আমাকে দেখে তরিকুল ইসলাম সাহেব বললেন, “তারেক বুকে সাহস রাখো, নিজেকে শক্ত রাখো ইনশাল্লাহ একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।” সেই কথা শুনে আমি কিছুটা হলেও সাহস পেয়েছিলাম।
তিনি বলেন, রাজনীতি করার কারণে তরিকুল ইসলামকে এরশাদ সরকারের আমলে কিছুদিন গুম করা হয়েছিল। তারপর তিনি বহু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। হামলা ও মামলার শিকার হয়েছেন। বহু মিথ্যা মামলায় তাকে আটক করে রাজনৈতিক আদর্শচ্যুত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি ততোই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আাদর্শের প্রতি অটুট ও অবিচল থেকে মাটি ও মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। তরিকুল ইসলাম বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন আহবায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার একজন বিশ্বস্ত সহচর ছিলেন।
তিনি তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কর্ম দিয়ে ধীরে ধীরে দলের যুগ্ম মহাসচিব, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, ভাইস চেয়ারম্যান ও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি বহুবার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু তারপরও তিনি শেকড়ের কথা ভোলেননি। তৃণমূলের মানুষের সাথে তাঁর সার্বক্ষনিক যোগাযোগ ছিল। আমিও তরিকুল ইসলামের এই গুণ থেকে শিক্ষা নিয়ে তৃণমূলের সাথে কাজ করার চেষ্টা করছি। কারণ মানুষের ভালোবাসা অর্জনের জন্য এই যোগাযোগের কোন বিকল্প নেই।
তারেক রহমান বলেন, আজ রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার সময় এটা নয়। তারপরও দুই একটি কথা না বলে পারছি না। ছাত্র জনতার মহাবিপ্লবের মাধ্যমে আমরা ফ্যাসিষ্ট স্বৈরাচার হাসিনা সরকারকে উৎখাত করেছি। হাসিনাসহ অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। কিন্তু তাদের দোসর, পেতাত্মারা এখনো সর্বত্র বসে আছে। তারা প্রশাসনকে অস্তিতিশীল করে নিজেদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। মনে রাখতে হবে এসব পতিত স্বৈরাচারের দোসররা সময় সুযোগ বুঝে ফের জাতির ঘাড়ে চেপে বসতে পারে। আপনারা যারা জাতীয়তবাদের আদর্শ বুকে লালন করেন, তাদেরকে বজ্রকঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সব রকম ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে দেশকে সত্যিকারের গণতন্ত্রের পথে নিতে হবে।
তিনি বলেন, মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কেবলমাত্র সংবিধানে কয়েকটি শব্দ যোজন বিয়োজন করলেই সংস্কার হবে না। সংস্কার করতে হলে প্রথমেই মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সেই লক্ষ্যে বিএনপি ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব জাতির সামনে তুলে ধরেছে। সেই দাবি বাস্তবায়নে বিএনপি কাজ করে যাচ্ছে। আপনাদেরকে সেই দাবি পূরণে এক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে নিজেদের বিশৃঙ্খলা বা অনৈক্যরে সুযোগে ফের স্বৈরাচার যেন মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। তিনি সবাইকে বজ্রকঠিন ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান।
পরে তারেক রহমান তরিকুল ইসলামের রুহের মাগফেরাত কামনা করে অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে অংশ নেন।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু। তরিকুল ইসলামের বর্ণাঢ্য জীবনের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরে বক্তৃতা করেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যশোর বারের সাবেক সভঅপতি অ্যাড. নজরুল ইসলাম, ডা.হারুন অর রশীদ, প্রেস ক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, অধ্যাপক আয়ুব হোসেন, তন্ময় সাহা,এজেড এম সালেক,মোশারফ হোসেন, মাওলানা বেলায়েত হোসেন , জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর প্রমুখ ।
বিভি/এআই
মন্তব্য করুন: