সাতক্ষীরায় প্রস্তুত ১ লাখ ৬০৬টি পশু, ন্যায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কায় খামারীরা

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশু মোটাতাজাকরণে শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাতক্ষীরার খামারীরা। কিন্তু, বর্তমানে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় খামারিরা। তবে ক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর দাম অনেক বেশি চাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এদিকে, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর বলছে, চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন বেশি হওয়ায় জেলার চাহিদা মিটিয়ে এবছরও জেলার বাইরে কোরবানির পশু সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর জেলার ৭টি উপজেলার ১২ হাজার ৮৯৪টি ছোট-বড় খামারে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ১ লক্ষ ৬০৬টি পশু। এর মধ্যে ৪৯ হাজার ১৯৯টি গরু এবং বাকি ৫১ হাজার ৪০৭ টির মধ্যে রয়েছে মহিষ, ছাগল ও ভেড়া। এবছর জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৮৫ হাজার ৩১৮টি। চাহিদা মিটিয়ে এ জেলা থেকে এবার ১৫ হাজার ২৮৮টি পশু প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঢাকা, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো যাবে।
খামারীরা জানান, গত কয়েক বছর যাবত ভারত সীমান্ত দিয়ে অবধৈ পথে গরু আসা বন্ধ থাকায় দেশি ও শংকর জাতের পশুপালনে আগ্রহ বাড়ছে সাতক্ষীরার অধিকাংশ খামারিদের। তাই কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে ১২ হাজার ৮৯৪টি ছোট বড় কোরবানির গরু খামার। তবে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি আর গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গতবছরের তুলনায় এবছর পশুপালন ব্যয় অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান খামারিরা।
এদিকে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিক দামে গরু কিনে তা বিক্রি নিয়েও চিন্তিত ব্যাপারিরা। তবে, গত বছরের তুলনায় এবছর গরুর দাম অনেক বেশি বলে দাবি ক্রেতাদের। বর্তমানে খামারে লোকসান হওয়ায় এ ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। শহরাঞ্চলে যেসব খামারিরা পশু পালন করেন তারা পুরোটাই বাজার থেকে কেনা খাবারের ওপর নির্ভরশীল। যার ফলে কোরবানির জন্য একটি পশু পালন করতে যে খরচ হয় তা বাদ দিয়ে সামান্য লভ্যাংশ থাকছে তাদের।
সাতক্ষীরার শিবতলা গ্রামের গরুর খামারী হাফিজুল ইসলাম বলেন, গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে একটি গরুর পেছনে যে অর্থ খরচ হচ্ছে, বিক্রয় করে সেই তুলনায় লাভ করা যাচ্ছে না। ১ লাখ টাকার গরুর দাম ক্রেতারা এসে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা দাম বলছেন।
ক্রেতা হারুন উর রশিদ বলেন, খামারের গরু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়। অল্প কিছু বায়না দিয়ে কয়েকদিন রেখে সময়মতো নেওয়া যায়। এজন্য এই বছর খামার থেকে গরু কিনবো। তবে, দামটা এবার অনেক বেশি মনে হচ্ছে।
জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ বিষ্ণপদ বিশ্বাস জানান, এবছর সাতক্ষীরা জেলায় চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত কোরবানীর পশু মজুদ রয়েছে। জেলায় কোবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৮৫ হাজার ৩১৮টি। তার বিপরীতে জেলার ১২ হাজার ৮৯৪টি ছোট বড় খামারে বিক্রয়ের জন্য কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ৬০৬টি পশু। যা চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত থাকবে ১৫ হাজার ২৮৮টির মত পশু।
তিনি আরো জানান, কোরবানির পশু বিক্রির জন্য জেলায় স্থায়ী হাট রয়েছে ৯টি। আর অতিরিক্ত অস্থায়ী গরুর হাট তৈরি করা হয়েছে আরো ৬টি। এসব হাট থেকে ক্রয় বিক্রয় করা যাবে যে কোন পশু। এছাড়াও রয়েছে অনলাইন বিক্রির ব্যবস্থা। গরুর হাটগুলোতে ১৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। যাতে অসুস্থ্য পশু কেউ হাটে বিক্রি করতে না পারে। এছাড়া বাজার মনিটরিং করার জন্য জেলা প্রশাসনের রয়েছে ৯ সদস্যের একটি টিম। বাজারগুলোতে রয়েছে ব্যাংকিং ব্যবস্থা যাতে ক্রেতা বিক্রেতা প্রতারণার শিকার না হয়।
বিভি/পিএইচ
মন্তব্য করুন: