• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

নিখোঁজের ৫ দিনেও সন্ধান মেলেনি দুই কিশোরীর

জুয়েল আহমেদ, রংপুর

প্রকাশিত: ২০:১৩, ১৭ জুন ২০২৫

ফন্ট সাইজ
নিখোঁজের ৫ দিনেও সন্ধান মেলেনি দুই কিশোরীর

রংপুর সমন্বিত শিশু পূনর্বাসন কেন্দ্র থেকে নিখোঁজের ৫ দিনেও দুই কিশোরীর সন্ধান মেলেনি। ঘটনাটি ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। অপরদিকে ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে উদ্ধার হওয়া দুই কিশোরী নিবাসী পূনর্বাসন কেন্দ্রে শিশু-কিশোরীদের শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের তথ্য দিয়েছেন। 

তারা জানিয়েছে, জীবন বাঁচাতে পূনর্বাসন কেন্দ্র থেকে চার কিশোরী পালিয়েছে। সেই সাথে প্রতিনিয়ত নিবাসীদের নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়। 

এদিকে নিখোঁজ পরিবারের সদস্য ও উদ্ধার হওয়া নিবাসীদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে সমাজসেবা কার্যালয়। এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সাথে সমাজসেবা জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক অনিল চন্দ্র বর্ম্মন কথা না বলে দূর্ব্যবহার করেছেন। অবিলম্বে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা। 

মিঠাপুকুর থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, মিঠাপুকুর থানার মামলায় কৃতি নামের মেয়েকে আদালতের মাধ্যমে পূনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা হয়েছিলো। মেয়ের মা ফোন করে আমাদের জানিয়েছে তার মেয়ে পূনর্বাসন কেন্দ্র থেকে নিখোঁজ থাকার পর রংপুর চিড়িয়াখানা এলাকায় পাওয়া গেছে। থানা পুলিশ সেখানে গিয়ে কৃতিসহ তার সাথে থাকা পূনবার্সন কেন্দ্রের নিবাসী আরেক মেয়েকে উদ্ধার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা নির্যাতনের কথা বলেছিলো। 

রংপুর মহানগর কোতয়ালী থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, পূনর্বাসন কেন্দ্র থেকে চার কিশোরী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় সাধারণ ডায়েরী হয়েছে। দু’জন কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকী দু’জনকে উদ্ধারে কাজ চলছে।   

জানা যায়, নগরীর দেওডোবা ডাংগীরপাড় এলাকার ১’শ শয্যা বিশিষ্ট সমন্বিত শিশু পূনবার্সন কেন্দ্র। এতে বর্তমানে প্রায় ৬৮ জন নিবাসী রয়েছে। এর মধ্যে হারিয়ে যাওয়া, প্রতিবন্ধী, এতিম ও মামলা সংক্রান্ত কারণে আদালত থেকে পাঠানো শিশু-কিশোরীরা থাকেন। গত ১২ জুন রাতে এ কেন্দ্র থেকে নিতু, স্মৃতি, কৃতি ও আশা নামের চার কিশোরী নিখোঁজ হন। সমাজসেবা কার্যালয়ের এ নিয়ে মাথা ব্যাথা না থাকলেও পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ দু’দিন পর ১৫ জুন স্মৃতি ও কৃতিকে উদ্ধার করে। ওই দিন পুলিশ তাদের আদালতের মাধ্যমে পূনরায় সমন্বিত শিশু পূর্ণবাসন কেন্দ্রে (বালিকা) পাঠায়। কিন্তু আদালতের বারান্দায় থাকা স্মৃতির মা নগরীর রবার্টসনগঞ্জের বাসিন্দা মুক্তি বেগম মেয়েকে পূনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠাতে পুলিশের কাছে আপত্তি জানায়। আপত্তির কারণ হিসেবে পূনর্বাসন কেন্দ্রে মেয়ের উপর নির্যাতন ও তার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি শঙ্কিত বলে জানান। স্মৃতির মা মুক্তি বেগম মেয়েকে পূনর্বাসন কেন্দ্রে নয় থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখতে পুলিশের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু আদালতের আদেশ ছাড়া এটি সম্ভব নয় বলে পুলিশ জানায়। 

মুক্তি বেগম জানান, পূনর্বাসন কেন্দ্রে নিবাসীদের শারীরিক-মানসিক নির্যাতন, রাতের বেলায় পুরুষ মানুষের আসা-যাওয়াসহ নানা অনিয়ম চলে। এছাড়া পূনর্বাসন কেন্দ্র থেকে স্মৃতি নিখোঁজ হলে থানায় মুক্তি বেগম সাধারণ ডায়েরি করতে চান। কিন্তু ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে থানায় জিডি করতে দেয়নি সমাজসেবা কর্মকর্তারা। অবস্থা বেগতিক দেখে সমাজসেবা কর্মকর্তারা নড়েচড়ে বসেন এবং থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। স্মৃতিকে খুঁজে পাওয়ার পর তাকে বাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে বাধা দেন পূনর্বাসন কেন্দ্রের দায়িত্বরতরা।

পূনর্বাসন কেন্দ্র থেকে পালিয়ে যাওয়া নিবাসী স্মৃতি (১৭) বলেন, পূনর্বাসন কেন্দ্রে নিবাসীদের নানা ধরনের শারীরিক-মানসিক ও যৌন নির্যাতন করে। প্রতি রবিবার একজন পুরুষ মানুষ পূনর্বাসন কেন্দ্রে এসে নিবাসী মেয়েদের যৌন নির্যাতন চালায়। এরই প্রেক্ষিতে এক মেয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়েছিলো। এরপর ওই মেয়েটির উপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন চালানো হয় এবং তাকে এখন কেন্দ্রে দেখা যাচ্ছে না।

স্মৃতি বলেন, প্রায় সময় মেয়েদের সাথে এমন ঘটে। আমি এর প্রতিবাদ জানালে আমাকে গালি-গালাজ করে। আদালত আমার মঙ্গলের জন্য পূনর্বাসন কেন্দ্রে রেখেছিলো কিন্তু সেখানকার অবস্থা দেখে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে গিয়েছিলাম। কেন্দ্রের আশা ও মীম নামের দুই কিশোরীও শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এছাড়া অনেক মেয়েরা নির্যাতনের শিকার হয়ে পূনবার্সন কেন্দ্রে থাকতে চান না, প্রায় সময় কান্নাকাটি করে।

প্রতিবাদী স্মৃতির সাথে আলাপচারিতা চলাকালে পূনর্বাসন কেন্দ্রের দায়িত্বরত এক নারী মিডিয়া থেকে আড়াল করতে উদ্ধার হওয়া অপর মেয়ে কৃতিকে টেনে নিয়ে দ্রুত আদালতপাড়া ত্যাগ করার চেষ্টা করে। এ সময় গণমাধ্যম কর্মীরা কিশোরীকে কেন নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে এমন প্রশ্ন করলে পূনর্বাসন কেন্দ্রের দায়িত্বরত ওই নারী এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না বলে জানান। তাৎক্ষনিক বক্তব্য নিতে চাইলে নিবাসী কৃতি পূনর্বাসন কেন্দ্রে নির্যাতনের ভয়ে মুখ খোলেননি।
এদিকে সমন্বিত শিশু পূনর্বাসন কেন্দ্রে (বালিকা) সরেজমিনে দেখা যায়, পরিদর্শনের জন্য গণমাধ্যম কর্মীর পরিচয় দিলেও কেন্দ্রটির গেট খুলতে বিলম্ব করে দায়িত্বপ্রাপ্তরা। পরবর্তীতে গেট খুলে দেয়া হলে গণমাধ্যম কর্মীরা তাদের সাথে কথা বলেন। কেন্দ্রের নিচতলায় নিবাসীদের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে এক নিবাসী জানান গত ১২ জুন চার কিশোরী এ কেন্দ্র থেকে পালিয়ে গেছে। পরবর্তীতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণমাধ্যম কর্মীদের জেরার মুখে চার কিশোরী পালিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন তারা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমাজসেবা কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে নিবাসীদের রাখা স্বত্ত্বেও মাঝে মধ্যে এমন দু-একটা ঘটনা ঘটে যায়। তবে ভবিষ্যতে যেন এমনটি না হয় সে দিকে বিশেষ নজর রয়েছে। এটি পূনর্বাসন কেন্দ্র, শিশু-কিশোরী সংশোধনাগার না। যার কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে যায়। 

তারা আরও জানান, ২০২৫ সালে ওই পূনর্বাসন কেন্দ্রে বিভিন্ন সময় ৪ শিশু মারা যায়। এর মধ্যে একজনের মরদেহ ময়না তদন্ত করা হলেও বাকীদের ময়না তদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়।

বিভি/এআই

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2