স্রোতের বিপরীতে গিয়ে ইরানের পাশে চীন, ইসরাইলের আত্মরক্ষার যুক্তি তুলে নিন্দিত কানাডা

ছবি: সংগৃহীত
ইরানের তেহরানে ইসরাইলের হামলা অব্যাহত রয়েছে। দেশটির রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম। একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, তেহরানের আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী পেকে আছে। এদিকে ইসরাইল ইরানের ইসফাহান শহরের দিকে নতুন করে হামলা চালিয়েছে। যদিও ইসফাহানে ছোঁড়া ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে সক্রিয়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী।
তেহরানের পূর্বাঞ্চলেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যম। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের হাকিমিয়েহ ও তেহরানপার্স এলাকায় জোরালো বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা গেছে। এর আগে তেহরানের মেহরাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, যার ফলে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনা নিয়ে এক বিবৃতিতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি বলেন, ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগের কারণ হয়ে আছে। ইসরাইলের ওপর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পুরো অঞ্চলের শান্তির জন্য হুমকি তৈরি করেছে। ফলে তিনি ইসরাইলের আত্মরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অধিকারকে সমর্থন জানান।
তবে তার এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে মানবাধিকার সংগঠন কানাডিয়ানস ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস ইন দ্য মডল ইস্ট। সংগঠনটি বলছে, কানাডা ইসরাইলের পক্ষে দাঁড়িয়ে এমন একটি হামলাকে সমর্থন জানাচ্ছে, যা একদমই উসকানিমূলক ছিল না এবং যা আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের স্পষ্ট লঙ্ঘন ছিল। সংগঠনটি কারনির বক্তব্যকে লজ্জাজনক বলে আখ্যা দিয়েছে এবং অভিযোগ করেছে যে তিনি এমন এক নেতৃত্বের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন যারা মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতা ও অস্থিরতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
অন্যদিকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েনও ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট ইসাক হারজোগের সঙ্গে ফোনালাপে ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার ও নাগরিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন।
তবে আল-জাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলছেন, ইসরাইল আত্মরক্ষার অজুহাতে বোমাবর্ষণ, দখলদারিত্ব, আগ্রাসন ও গণহত্যার মতো কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সহযোগিতা থাকায় ইসরাইল কার্যত বাধাহীনভাবে এগিয়ে যেতে পারছে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, ইরানের কি নিজের আত্মরক্ষার অধিকার নেই? ইসরাইলের যদি এই অধিকার থাকে, তাহলে ইরান কেন তা পাবে না? ইসরাইল নিজের আত্মরক্ষার অধিকারের কথা বলে ইরানের বিরুদ্ধে বোমাবর্ষণ করেছে। তারা আত্মরক্ষার ছদ্মবেশে অন্য দেশে হামলা করে, ছয় দশক ধরে দখলদারিত্ব বজায় রেখেছে। এখন আবার সেই আত্মরক্ষার অজুহাত দিয়েই ইরানে হামলা করে যাচ্ছে।
এদিকে স্রোতের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কং সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেন, ইসরাইল ইরানে হামলা চালিয়ে রেড লাইন অতিক্রম করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, এই আক্রমণ ইরানের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ অখণ্ডতাকে স্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করেছে। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিসিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফু কং বলেন, বিশেষ করে পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটি রেড লাইন অতিক্রম করার শামিল। তিনি আরও জানান, চীন ইরান ও ইসরাইলের মধ্যকার চলমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
এদিকে চীন গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযানের তীব্র নিন্দা জানালে এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের আহ্বান করলে ইসরাইল ও চীনের সম্পর্কে কিছুটা অবনতি ঘটে।
বিভি/আইজে
মন্তব্য করুন: