রফতানিযোগ্য চিংড়িশিল্পে যুদ্ধ-সংঘাতের প্রভাব

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যুদ্ধ ও সংঘাতের অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের রফতানিযোগ্য চিংড়িশিল্পে। এমন পরিস্থিতিতে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মোংলাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের চিংড়ি চাষি ও খাত সংশ্লিষ্টরা। দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে যে কোন উপায়ে চিংড়ির উৎপাদন ও রফতানি সচল রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ অর্থনীতিবিদের।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে চিংড়ি চাষ শুধু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নয় বরং এটি এ অঞ্চলের হাজারো পরিবারের জীবিকার প্রধান উৎস। তবে, মৌসুমের শুরুতে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যুদ্ধ আর সংঘাতের প্রভাবে চিংড়ি মাছের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার অভিযোগ চাষিদের।
মোংলার মালগাজী এলাকার চিংড়ি চাষি আকবর হোসেন জানান, শুকনো মৌসুম শেষে বর্ষার শুরুতে মাছ চাষের জমিতে নদীর পানি তুলে আর বৃষ্টির পানির সংমিশ্রনে চিংড়ি চাষ শুরু করেন তারা। শুরুতে বড় সাইজের বাগদা চিংড়ি কেজি প্রতি ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত দাম পেয়েছেন। মাস খানেক হলো রফতানিকারকরা তাদেরকে চিংড়ি মাছের মূল্য দিচ্ছেন ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা মাত্র।
চিলা ইউনিয়নের চিংড়ি উৎপাদনকারী মাসুদুর রহমান বলেন, দাম কমের বিষয়টি জানতে চাইলে মাছ কোম্পানিগুলো শুধু যুদ্ধের কথা বলছেন। এমন অবস্থা চলতে থাকলে চিংড়ি মাছ চাষ করা আর সম্ভব নয়।
চিংড়ি মাছ রফতানিকারক ফাহিম সী ফুড প্রসেসিং এন্ড কম্পোজিট শ্রিম্প ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড (খুলনা) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ হাসান পান্না জানান, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ কিছুটা প্রভাব ফেলেছিলে। কিন্তু, ভারত পাকিস্থান ও ইরান ইযরাইল যুদ্ধে নৌ পথে মাছ রফতানিতে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। কারণ, এই যুদ্ধে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের পথ হরমুজ চ্যানেল ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ইউরোপের দেশগুলোতে মাছ রফতানি করতে আফ্রিকার নদী পথ ব্যবহার করতে হচ্ছে। তাই খরচ বেশি পড়ছে এর ফলে চাষিরা মাছের দাম কম পাচ্ছেন।
আরেক রফতানিকারক জামান এন্ড সন্স’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমজাদ হোসেন জানান, গেল মৌসুমে খুলনা, সাতক্ষীরা ও মোংলা উপকূলে প্রায় ১ লাখ ৯৩ হাজার হেক্টর ঘেরে ১ লাখ ৩ হাজার ৭৪৭ মেট্রিক টন গলদা ও বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয়। যার অধিকাংশ রফতানি হয়েছিলো ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ-সংঘাত আর কাঁচামাল সংকট ও এনবিআরের শর্তের বেড়াজালে চিংড়ি রফতানিতে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।
খুলনা বিশ্ব বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি হাসান বলেন, বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তর এবং রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী চিংড়ি মাছ রফতানি করে বছরে গড়ে ৩ হাজার ৭শ ৬৮ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট মাছ রফতানির ৮৬.৪৬ ভাগ আয় হয় চিংড়ি মাছ রফতানি থেকে। তাই, বর্তমান প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সরকারকে। নতুবা দেশের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। একই সাথে চিংড়ি শিল্প ধ্বংস হলে এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়বে।
বিভি/পিএইচ
মন্তব্য করুন: