• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫

২০০ কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতে জড়িত ২ ভূমিদস্যু আটক

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ৬ নভেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১১:৪৮, ৬ নভেম্বর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
২০০ কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতে জড়িত ২ ভূমিদস্যু আটক

জাল দলিল-এনআইডি বানিয়ে চট্টগ্রামে ২০০ কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতে জড়িত ২ ভূমিদস্যুকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে প্রশাসন। বাংলাভিশনে সংবাদ প্রকাশের জেরে ভূমিদস্যু মো.আনোয়ারুল হক ও মো. তসলিম হোসেনকে আটক করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী জানান, আনোয়ারুল হক ও তসলিম হোসেন পরস্পর যোগসাজশে জাল জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে আম মোক্তার দলিল সৃজন করে সরকারের সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করেন। তাদের আটক করে থানায় দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, জাল এনআইডি, খতিয়ান, দলিলের মাধ্যমে পাকিস্তানি হাশেমীর ওয়ারিশ তৈরি করে এই দুই ব্যক্তি সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করেছিল। বাংলাভিশনে ধারাবাহিক খবর প্রকাশের ফলে প্রশাসনের টনক নড়ে। 

জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র এম এম আলী রোডে অবাঙ্গালী সৈয়দ আহমদ হাশেমীর ৮৭ শতক সম্পত্তি। মুক্তিযুদ্ধের সময় হাশেমী পাকিস্তান গিয়ে মারা যান। ১৯৮৭ সালে জেলা প্রশাসক পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে এটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেন। সেটি আত্মসাৎ করার জন্য আনোয়ারুল হক নিজেকে মৃত সৈয়দ আহামদ হাশেমীর সন্তান দাবি করেন। তিনি একটি জাল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে এসব সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে এনআইডি যাচাই করলে এনআইডিটি জাল বলে শনাক্ত হয়।

এছাড়া আনোয়ারুল হক ও তার সহযোগী তসলিম হোসেনের আম মোক্তার দলিলের ব্যবহৃত স্বাক্ষর ও অন্যান্য তথ্য যাচাই করলেও তাতেও তাদের জালিয়াতি ধরা পড়ে। এক পর্যায়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা বিষয়টি স্বীকার করেন। পরে তাদের আটক করে কোতোয়ালী থানায় হস্তান্তর করা হয়। 

এর আগে জেলা প্রশাসনের কর্মচারী মোহাম্মদ ইউনুস এর সহযোগিতায় রাইছা আজিজের নামে বিএস খতিয়ান তৈরি করে ভূমিদস্যুরা। অমর কুমার শর্মা গ্রহীতা সেজে ঠিকানাবিহীন রাইছা আজিজকে দাতা সাজিয়ে ২০০৮ সালের ১৫ অক্টোবর ১৫৫১৪ নম্বর দলিল সৃজন করে। এই দলিলের ভিত্তিতে বৈধ লীজি মনোয়ার হোসেন গংয়ের বিরুদ্ধে মিস মামলা করেন। পরবর্তীতে একই বছরের ২৩ অক্টোবর আবার ১৫৯৯৬ নম্বর বায়নানামা দলিল তৈরি করে।     

মূল সম্পত্তির মালিক সৈয়দ আহমদ হাশেমী পাকিস্তান চলে যাওয়ার পরও জনৈক নুরুল আলম আমমোক্তার সেজে ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর ভূমি সচিব বরাবর আবেদন করেন। অপর একজন আলী নু্র চৌধুরী উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করেন। ভূমিদস্যু চক্রের অপর সদস্য নাজিম উদ্দিন ২০১৫ সালের ১৯ মার্চ ৪০৩৮ বায়নানামা দলিল তৈরি করেন। এভাবে ভূমিদস্যু চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন আদালতে একাধিক মিথ্যা মামলা করেন এবং নকল ব্যক্তি সেজে ও সাজিয়ে প্রায় ২০০কোটি টাকার এই সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা চালিয়ে যান।

এই সম্পত্তির বিএস জরিপ সরকারের নামে না হয়ে রাইছা আজিজের নামে হওয়ায় তা সংশোধেনের জন্য ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব আবদুল মালেক প্রতিবেদন পেশ করেন। একই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএস জরিপ সরকারের নামে না হওয়ার সুযোগে ভূমিদস্যু জালিয়াত চক্র বিভিন্ন ধরণের জাল, ফেরবী, বানোয়াট দলিল, যোগসাজসী আম মোক্তারনামা, বায়ানানামা দলিল, ভুয়া ওয়ারিশ সনদ ও এনআইডি তৈরি করে সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের প্রচেষ্টায় লিপ্ত। অবাঙ্গালী হাশমীর কোন ওয়ারিশ এদেশে বসবাস করে না। রিট পিটিশনকারী নারগিস আক্তার সরকারি পরিত্যক্ত সম্পত্তি গ্রাস করার জন্য ভিত্তিহীন আবেদন দাখিল করেন।

সবশেষ লীজ গ্রহণকারী, ভূমিদস্যু চক্র ও জেলা প্রশাসন এক হয়ে এই ২০০ কোটি টাকার সম্পত্তি গ্রাস করার জন্য ৩ জুলাই সার্কিট হাউজে বৈঠক করে।

বিভি/পিএইচ

মন্তব্য করুন: