• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

জ্ঞান ফিরলেও চোখ খোলেনি ঢাবির বহিষ্কৃত সেই শিক্ষক, পুলিশ পাহারায় চলছে চিকিৎসা

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ৩ ডিসেম্বর ২০২২

আপডেট: ২১:০০, ৩ ডিসেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
জ্ঞান ফিরলেও চোখ খোলেনি ঢাবির বহিষ্কৃত সেই শিক্ষক, পুলিশ পাহারায় চলছে চিকিৎসা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় রুবিনা নামের এক নারীকে প্রাইভেটকারের নিচে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে মেরে ফেলার ঘটনায় আহত ঢাবির সাবেক শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আজহার জাফর শাহ’র জ্ঞান ফিরেছে। তবে পুলিশের কড়া পাহারায় থাকা এই ঘাতক শিক্ষকের জ্ঞান ফিরলেও এখনও চোখ খুলতে পারেননি।

শনিবার (৩ ডিসেম্বর) ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের ১০১ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখা গেছে এই দৃশ্য। সেখানে একজন পুলিশ ও একজন আনসার সদস্য কড়া পাহারায় ওই শিক্ষককের চিকিৎসা নিশ্চিত করছেন। এসময় আজহার জাফর শাহ’র বাসার নারী গৃহকর্মী ও একজন কেয়ারটেকারকেও তার বেডে বসে থাকতে দেখা গেছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী গৃহকর্মী বলেন, বিকাল ৫টার দিকে জ্ঞান ফিরেছে। কেমন আছেন জানতে চাইলে শুধু বলেছেন- ভালো। আর কিছু বলছেন না। তবে এখনও চোখ খুলতে পারছেন না। পাবলিকের বেধম মাইরের কারণে মাথা ও চোখ থেতলে গেছে।

শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এলাকায় একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আজহার জাফর শাহর চলন্ত প্রাইভেটকার। এতে ছিটকে পড়ে মোটরসাইকেল আরোহী রুবিনা প্রাইভেটকারের নিচে আটকে পড়েন। ওই অবস্থায় শিক্ষক গাড়ি না থামিয়ে বেপরোয়া গতিতে টিএসসি হয়ে নীলক্ষেত এলাকার দিকে যাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে উপস্থিত জনতা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলেও চালক গাড়ি থামাননি। 

পরে নীলক্ষেত মোড়ে গিয়ে গাড়ি আটকে যায়। এসময় চালককে গণপিটুনি দেন উপস্থিত জনতা। এতে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে আহত নারী ও ঘাতক জাফরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৫টার দিকে ওই নারী মারা যান। আর জাফরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ২০১৮ সালে নৈতিক স্খলনজনিত কারণে এই শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তার নারী গৃহকর্মী বলেন, প্রায় ৩৫ বছর আগে তার স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হওয়ার পর আর বিয়ে করেননি জাফর শাহ। বর্তমানে তার আত্মীয়-স্বজন বলতে তারা দু’জন ছাড়া আর কেউ নেই বলে জানান তিনি। 

জাফরকে কখনও নেশা করতে দেখেননি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এতোদিন গাড়ির চালক ছিলেন। কিছুদিন হয়েছে চালককে বাদ দিয়ে তিনি নিজেই প্রাইভেটকারটি চালাতেন। প্রায় ৪০ বছর ধরেই এই গাড়ি চালান তিনি। ঢাবি থেকে চাকুরিচ্যুত হওয়ার পর বেশির ভাগ সময় বাসায় সময় কাটাতেন তিনি। তার কোনো বদ অভ্যাসও দেখেননি বলেন জানান গৃহকর্মী। তবে কিভাবে এই ঘটনা এখনও সেই বিষয়ে কোনো কথা জাফর শাহ’র সঙ্গে বলতে পারেননি বলে জানান তিনি।

এদিকে, শনিবার (৩ ডিসেম্বর) ভোররাতে নিহত রুবিনা আক্তারের (৪৫) ভাই জাকির হোসেন বাদী হয়ে জাফর শাহ’র বিরুদ্ধে শাহবাগ মামলা দায়ের করেছেন। সড়ক পরিবহন আইনে করা মামলায় গাড়িচালক ও ঢাবির চাকরিচ্যুত শিক্ষক জাফর শাহকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। 

অন্যদিকে, ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মো. শহিদুল্লাহ বলেছেন, নারীকে টেনে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাট খুবই অমানবিক ও মর্মান্তিক একটি ঘটনা। তিনি বলেন, চালক সুস্থ হলে আমরা তাকে জিজ্ঞেস করবো, কেন তিনি এমন করেছেন। চালকের সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। আমরা এখনও চালকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। একটি নম্বর পেয়েছিলাম তার স্ত্রীর। কিন্তু কল দিলে রিং হয় ধরে না, পরে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, এটি দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড। সাবেক শিক্ষক স্বাভাবিক ছিলেন কি-না তা তদন্তের পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী শাস্তির বিধান রয়েছে। এ আইনে যাতে শিক্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি হয় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

বিভি/এসএইচ/রিসি 

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2