পদ ধরে রাখতে টাকা বিলাচ্ছেন উত্তরা ব্যাংকের এমডি রবিউল!
দেশ ছেড়ে পালানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী পরিবারের আস্থাভাজন হিসেবে ২০১৬ সাল থেকে একটানা ৮ বছর উত্তরা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে আছেন রবিউল হোসেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নানা অপকর্মের সহচর রবিউল হোসেন তৃতীয় মেয়াদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে ব্যাংকটির মালিকানাও দিয়েছেন! নথিতে দেখা যায় উত্তরা ব্যাংক সিকিউরিটিজ ব্রোকারেজ হাউজে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার নামে যৌথ বিও একাউন্ট খুলে তাদের শেয়ার হস্তান্তর করেন। সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবায়েতের যোগসাজসে শেয়ার ম্যানুপুলেট করে হাসিনা ও শেখ রেহানার নামে ৪০টি উদ্যোক্তা শেয়ার হস্তান্তর করা হয় বলে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন উত্তরা ব্যাংক শ্রমিক কর্মচারি পরিষদ।
উত্তরা ব্যাংক শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু মো. আহসানুল হাবীব বাংলাভিশনকে জানান, শেখ হাসিনার অর্থযোগানদাতা বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদারকে ২’শ কোটি টাকা, সালমান এফ রহমানের প্রতিষ্ঠানকে ৪০কোটি টাকা ও সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খানের স্ত্রী রোকেয়া বেগমকে ২১ কোটি টাকার অবৈধ ঋণ দিয়ে উত্তরা ব্যাংককে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
এছাড়া, এমডির আত্মীয় আব্দুল্লাহ আল নোমানকে উত্তরা ব্যাংক সিকিউরিটিজ একচেঞ্জ হাউজের দায়িত্ব প্রদান করে তার মধ্যমে শেয়ার গ্রামলিং করে প্রায় অর্ধ শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। উক্ত নোমানের দুনীর্তি ও অদক্ষতায় ব্যাংকের প্রায় ১৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে অভিযোগ উঠে। বিষয়টি ধরা পড়লে কোন তদন্ত ছাড়াই নোমানকে অব্যহতি দেয়া হয়।
বিএনপির ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের অন্তর্ভুক্ত উত্তরা ব্যাংকের সিবিএ নেতারা জানান, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সরকার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়ায় অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শাস্তি দিয়েছেন এমডি রবিউল।
স্বাভাবিকভাবেই ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনা সরকারের দোসর হিসেবে কাজ করা উত্তরা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অপসারণের দাবিতে উত্তাল হয় ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়। টানা বিক্ষোভের মূখে তিন দিন অফিসের কার্যক্রম বন্ধ রাখেন এবং ৬ আগষ্ট থেকে ১৮ আগস্ট পযর্ন্ত এমডি কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। পরে একটি বড় রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার ম্যানেজ করে কাজে ফেরার চেষ্টা করেন।
উত্তরা ব্যাংক শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন জানান, এর মধ্যে এক রাজনৈতিক নেতা ব্যাংকের এমডিকে নিজের শ্বশুড় বাড়ির আত্মীয় পরিচয় দিয়ে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন না করতে ব্যাংকটির সিবিএ নেতাদের চাপ দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতাদের নিয়ে রাজধানীর একটি পাঁচতারা হোটেলে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন উক্ত নেতা। বৈঠকে অংশ নেয়া উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের মহাসচিব সাখাওয়াত হোসেনসহ একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ব্যাংকটিকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক রবিউল হোসেন স্বপদে বহাল থাকতে দুই হাতের টাকা খরচ করছেন। এক নেতাকে এমডি ৫ কোটি টাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে মতিঝিলে উত্তরা ব্যাংকের হেড অফিসে গিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক রবিউল হোসেনের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। পরে ফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও রিসিভ করেননি তিনি।
মন্তব্য করুন: