• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ

সরকারি সেবা নিতে ঘুষ দিতে হয়েছে ৩২ শতাংশ সেবাগ্রহীতাকে 

প্রকাশিত: ১১:৫৪, ২০ জুন ২০২৫

ফন্ট সাইজ
সরকারি সেবা নিতে ঘুষ দিতে হয়েছে ৩২ শতাংশ সেবাগ্রহীতাকে 

ফাইল ছবি

গত এক বছরে সরকারি সেবা গ্রহণ করেছেন, এমন নাগরিকদের মধ্যে প্রায় ৩২ শতাংশ ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। প্রতি তিন জনের মধ্যে গড়ে এক জনকে ঘুষ দিতে হয়। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সিটিজেন পারসেপশন সার্ভেতে (সিপিএস) এ চিত্র উঠে এসেছে। 

আগারগাঁও পরিসংখ্যান ভবনে আয়োজিত তথ্য প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. কাইয়ুম আরা বেগম, তথ্য ও পরিসংখ্যান সচিব আলেয়া বেগম। এতে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

গত ফেব্রুয়ারিতে ৪৫ হাজার ৮৮৮টি খানার ৮৪ হাজার ৮০৭ নারী পুরুষ এই জরিপে অংশ নেন। বিবিএসের এই জরিপ অনুসারে, সবচেয়ে বেশি ঘুষ-দুর্নীতি হয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কার্যালয়ে। জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন, গত এক বছরে বিআরটিএতে সেবা নিতে যাওয়া নাগরিকদের ৬৩.২৯ শতাংশ ঘুষ দুর্নীতির শিকার হন। এই হার আইনপ্রয়োগকারীর সংস্থায় ৬২.৯৪ শতাংশ, পাসপোর্ট অফিসে ৫৭.৪৫ শতাংশ ও ভূমি নিবন্ধন অফিসে ৫৪.৯২ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ‘আমার জানামতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সবচেয়ে বেশি ঘুষ-বাণিজ্য হয়। আর সেটি বেশির ভাগই বদলিকে কেন্দ্র করে। আমি গোয়েন্দা বিভাগের মাধ্যমে খোঁজ নিয়েছি, তারা বলেছে এখানে মধ্যস্বত্বভোগী অনেক।’ ঘুষ প্রসঙ্গে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমার ধারণা ছিল, সবাইকে ঘুষ দিতে হয়। তার পরও জরিপে উঠে এসেছে ৩১ শতাংশ নাগরিককে ঘুষ দিতে হয়। নারীদের কাছে তুলনামূলক ঘুষ কম চাওয়া হয়েছে। তুলনামূলক উচ্চবিত্তরা ঘুষ দেন বেশি। ঘুষ দিয়ে তারা মূলত সেবা কিনে নেন।’ পুলিশের দুর্নীতিতে হতাশা ব্যক্ত করে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, তারা তো এখনো দাঁড়াতেই পারেনি, তার পরও তারা দ্বিতীয় অবস্থানে। এটি ভালো কথা নয়।

নিরাপত্তার বিষয়টিও এই জরিপে উঠে আসে। জরিপ অনুসারে, ৮৪.৮১ শতাংশ নাগরিক সন্ধ্যার পর নিজ এলাকার আশপাশে একা চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন। পুরুষদের তুলনায় নারীরা কম নিরাপদ বোধ করেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মত অনুসারে, ৮০ শতাংশ নারী নিজ এলাকার আশপাশে একা চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন। এর মানে, প্রতি পাঁচ জন নারীর এক জন সন্ধ্যায় একা চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন না। এ ছাড়া ৮৯.৫৩ শতাংশ পুরুষ একা চলাফেরায় নিরাপদ বোধ করেন।

বিবিএসের জরিপ অনুসারে, রাজনৈতিক প্রভাব বিষয়ের ক্ষেত্রে মাত্র ২৭.২৪ জন নাগরিক মনে করেন, তারা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সরকারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করতে পারেন।

এ ছাড়া গত এক বছরে দেশের ১৯.৩১ শতাংশ জনগণ কোনো না কোনো ধরনের বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হয়েছেন, এমনটি জরিপে উঠে এসেছে। পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হন।

রাজনৈতিক মতামতের ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে তেমন পার্থক্য দেখা যায়নি। জরিপ অনুযায়ী, ২৭.৮৭ শতাংশ শহরবাসী এবং ২৬.৯৪ শতাংশ গ্রামবাসী মনে করেন, তারা দেশের রাজনৈতিক বিষয়ে মত প্রকাশ করতে পারেন। তবে লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণে পার্থক্য দেখা গেছে। সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে বলে মনে করেন ৩১.৮৬ শতাংশ পুরুষ, কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ২৩.০২ শতাংশ। এছাড়া রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রভাব রাখার ক্ষমতা আছে বলে বিশ্বাস করেন মাত্র ২১.১৯ শতাংশ নাগরিক। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ১৬-এর আওতায় ছয়টি মূল ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, সুশাসন, সরকারি সেবার মান, দুর্নীতি, ন্যায়বিচার প্রাপ্তি ও বৈষম্য নিয়ে নাগরিকদের অভিজ্ঞতা ও মতামত বিশ্লেষণ করতেই জরিপটি পরিচালনা করেছে বিবিএস।

সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় নাগরিক সন্তুষ্টি :জরিপ অনুযায়ী গত এক বছরে ৪৭.১২ শতাংশ নাগরিক অন্তত একবার সরকারি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছেন। তাদের মধ্যে ৮২.৭২ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবাকে সহজপ্রাপ্য এবং ৮৯.৩৪ শতাংশ সেবার ব্যয়কে গ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেন। তবে সেবার মান, স্বাস্থ্যকর্মীদের সময় প্রদান ও আচরণে সন্তুষ্টির হার যথাক্রমে ৬৫.০৭ শতাংশ, ৬৩.১৩ শতাংশ ও ৬৩.১৯ শতাংশ।

সরকারি শিক্ষায় সন্তুষ্টি ও প্রবেশাধিকারে ইতিবাচক চিত্র :৪০.৯৩ শতাংশ নাগরিক জানান, তাদের অন্তত একটি শিশু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে। প্রাথমিক স্তরে ৯৬.৪৬ শতাংশ নাগরিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহজে প্রবেশের কথা বলেন এবং ৯২.৬৬ শতাংশ শিক্ষা-ব্যয় সামর্থ্যের মধ্যে বলে উল্লেখ করেন।

অন্যান্য সরকারি সেবায় প্রাপ্তিযোগ্যতা ভালো, মানে ঘাটতি :পরিচয়পত্র ও নাগরিক নিবন্ধনের মতো সেবায় ৭৮.১২ শতাংশ নাগরিক প্রাপ্তিযোগ্যতায় সন্তুষ্ট এবং ৮৬.২৮ শতাংশ ব্যয়কে সামর্থ্যের মধ্যে মনে করেন। তবে কার্যকর সেবা প্রক্রিয়া, সময়মতো সেবা ও সম-আচরণে সন্তুষ্টির হার যথাক্রমে ৬২.৬০, ৫১.২৮ ও ৫৬.২৬ শতাংশ, যা মানোন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

বৈষম্য ও হয়রানির শিকার নাগরিক এক-পঞ্চমাংশ :গত এক বছরে ১৯.৩১ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনো বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হয়েছেন। শহরাঞ্চলে (২২.০১ শতাংশ) এই হার গ্রামাঞ্চলের (১৮.০৭ শতাংশ) চেয়ে বেশি। আর্থসামাজিক (৬.৮২ শতাংশ) এবং লিঙ্গভিত্তিক (৪.৪৭ শতাংশ) বৈষম্য সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা গেছে। বৈষম্যের স্থান হিসেবে শীর্ষে রয়েছে পরিবার (৪৮.৪৪ শতাংশ), গণপরিবহন বা উন্মুক্ত স্থান (৩১.৩০ শতাংশ) এবং কর্মস্থল (২৫.৯৭ শতাংশ)। কিন্তু মাত্র ৫.৩৫ শতাংশ ভুক্তভোগী তাদের অভিজ্ঞতা রিপোর্ট করেছেন।

বিভি/এসজি

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2